হয়ে গেলাম গাঁও গেরামের সাংবাদিক

  • আপডেট সময় রবিবার, মার্চ ৫, ২০২৩
  • 440 পাঠক

—————

তাওহিদ চৌধুরী

————–
পত্রিকায় পাতায় আকাশ মো. জসিম নামেই সমধিক পরিচিত। পুরো নাম মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। নোয়াখালী জেলা সদর হতে প্রকাশিত ও সম্পাদিত দৈনিক দিশারী’র সম্পাদক ও প্রকাশক। এক সুদীর্ঘকাল নোয়াখালীর সাংবাদিকতায় নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। বললেন, এখনো পরিচয় দেয়ার মতো সাংবাদিক হয়ে ওঠতে পারিনি।

জানালেন, ছাত্রজীবনের কথা স্মরণ করে অনেক বন্ধু তাঁকে নিয়ে আফসোস করেন। বলেন, আকাশ তুই আরো বেশি কিছু হওয়ার কথা ছিল।

বললেন, স্মৃতির বেদনায় কিছুটা বিমর্ষ ও বিষন্ন হন তিনি। তবুও শেষে নিরাশার দোলাচলে সবই নিয়তির ওপরই ছেড়ে দেন। বলেন, সবই তো নিয়তির ফল।

আকাশ মো. জসিম ২৫ নভেম্বর ১৯৭৭ সালে ধর্মপুরে মুসলিম সম্ভ্রান্ত হাফেজ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পরিবারে তিন দাদাই ছিলেন কোরানে হাফেজ। যাদের পিতা ছেলামত উল্যাহও ছিলেন কোরানে হাফেজ।

পৈত্রিক বসতি হাতিয়া থাকলেও আকাশের জন্ম নোয়াখালী সদর উপজেলার ধর্মপুরে। যে জায়গাটি দাদার নামেই হাফেজিয়া নগর নামেই পরিচিত, খোদিত ও রক্ষিত।

সত্তর দশকে হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়ন মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে সে সময়েই তাঁর পৈত্রিক পরিবার সদরের ধর্মপুরের বসতি স্থাপন করেন। এ সময় তাঁর দাদা হাফেজ ছায়েদল হকের একান্ত বিনিয়োগ, শ্রম ও ঘামে ২৮২ একর সম্পত্তির মালিক ও দখলকার হয়েছেন পুরো পরিবার।

পরপর পরিবারের সবার মধ্যে তিনি নিজের অর্জিত সেসব সম্পত্তিও ভাগ বাটোয়ারা করে নিজেকে মানবিকতার খাতায় নাম লিখান। জীবদ্দশায় বাড়ির সামনে হাফেজিয়া জামে মসজিদ, নূরানী মাদরাসাও গড়ে তোলেন হাফেজ ছায়েদল হক।

পিতা মোহাম্মদ সেলিম ও মা জাহানারা বেগমের ঘরের দ্বিতীয় সন্তান আকাশ। ছোটবেলায় ভর্ত্তি হন পাশের সমাজের চরসল্যাহ ধর্মপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শ্রেণী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোল নম্বর এক ছিল তাঁর। এরপর ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্ত্তি হয়েছিলেন বাংলাবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানেই শ্রেণী পরীক্ষায় রোল নম্বর তাঁর এক হয় ।

আকাশ ১৯৯১ সালে জেলা শহরের হরিনারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে মানবিক বিভাগে নবম শ্রেণীতে ভর্ত্তি হন। এখানেও শ্রেণী পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন তিনি। এ সময় তিনি নোয়াখালী পৌরসভার আয়োজনে অনুষ্ঠিত নবম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষায়ও মেধাবৃত্তির পুরষ্কার হিসেবে সনদপত্র ও নগদ ৭৫০ টাকা হাতে পেয়েছেন।

১৯৯৩ সালে এ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক স্কুল সাটিফিকেট পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ নিয়ে মানবিক বিভাগে ষ্টার মার্কস পান। ফলাফলের এমন কৃর্তিত্বে মৃত্যূঞ্জয়ী ফাউন্ডেশন কর্তৃক সনদপত্র ও এক হাজার টাকা পুরষ্কার পেয়েছেন সে সময়ে।

১৯৯৩ সালে আকাশ তাঁর মামাতো ভাই মিজানুর রহমান চৌধুরী ও মামা আবদুর রহিমের অনেক ভালবাসা, আন্তরিকতা, বন্ধুত্ব ও প্র্রেরণায় চট্রগ্রাম হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ভর্ত্তি হন। সেখান থেকে ১৯৯৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৯৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্মাতক পাশ করেন।

এরপর, ১৯৯৯ সালে নোয়াখালী আইন কলেজে ভর্ত্তি হয়েছেন আকাশ মো. জসিম। কিন্তু, সাংবাদিকতার নেশায় সে পথে আর পাড়ি দেয়া হয়নি তাঁর।

আকাশ মো. জসিম বলেন, মহসিন কলেজে পড়াকালে কলেজের পাশেই ছিল চট্রগ্রাম প্রেসক্লাবসহ সেখানকার বহুল প্রচারিত ও স্থানীয় নামীদামি পত্রিকাগুলোর কার্যালয়। সে সময়ে মহসিন কলেজের দক্ষিণ পাশের জামাল খান থেকে  দৈনিক কর্ণফুলি বের হতো। একদিন কর্ণফুলিতে কলেজের ছাত্রাবাস  “ মুসলিম হলের সংস্কার চাই ” শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়।

আকাশ বলেন, এরপর মনের আনন্দে পত্রিকার কার্যালয়ে যাই। সে সময়ে এর সম্পাদক ছিলেন শ্রদ্ধেয় কবি আল মাহমুদ। তিনি পরিচয় দেয়ার পর বললেন, তুমি কি সাংবাদিক হতে চাও ? বললাম, জি¦। বললেন, তোমার নামে আরো অনেক কবি, লেখক ও সাংবাদিক আছে। এক কাজ করো, তুমি নাম লিখবে আকাশ মো. জসিম। প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন আকাশ নামে ওই পত্রিকায় একজন সংবাদদাতা ছিলেন। এরপরই নিজের নামটি পত্রিকায় পাতায় হয়ে গেছে আকাশ মো. জসিম।

এরপর নোয়াখালীতে আসার পর একদিন দৈনিক জাতীয় নিশান পত্রিকায় হাজির হই। কথা, ব্যক্তিত্বভাব আর পান্ডিত্যে সম্পাদক জনাব কাজী রফিক উল্যাহকে সম্মানিতই মনে হয়েছিল।

কিছুদিনের মধ্যে তাঁর থেকে প্রতিবেদকের পরিচয়পত্র নিই। এরই মধ্যে নোয়াখালী আইন কলেজে আসা যাওয়ার সুবাদে সে সময়ে ওই কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল এডভোকেট জামাল উদ্দিন ভূঁঞার সাথে পরিচয় হয়।

তাঁর প্রকাশনায় মাইজদী সমবায় ব্যাংক সুপার মার্কেট হতে সাপ্তাহিক দিশারী ও দৈনিক নতুন দিশারী বের হতো। সে সময়ের দৈনিক নতুন দিশারী’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আর সাপ্তাহিক দিশারী’র নির্বাহী সম্পাদক দু’জনই এখন প্রবাসের উন্নত জীবনের মানুষ। সে থেকে দিনের পর দিন পত্রিকা দু’টোর সাথে নিজেকে ভালবাসার পেশা ও নেশা হিসেবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ি।

একপর্যায়ে, ২০০০ সালে জায়েদুল করিম চৌধুরী পলাশের সম্পাদনায় আজকের উপমার বার্তা সম্পাদক পদে কাজ করি। পরবর্তীতে, এডভোকেট জামাল উদ্দিন ভূঁঞার অকৃত্রিম স্নেহ ও আর্শীবাদে আবারো দিশারী’র নির্বাহী সম্পাদক পদে দায়িত্ব নিই। সে থেকে ধীরে-ধীরে পত্রিকাটি দৈনিকে রুপান্তরণ করণে আমার অবদানও কম ছিলনা।

আকাশ মো. জসিম বলেন, ২০০৬ সালে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে সম্মানিত হই। যাতে ২০১১ সাল হতে পরিপূর্ণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। যে পত্রিকাটি ২০১৯ সালে এডভোকেট জামাল উদ্দিন ভূঁঞার অকৃপণ অনুগ্রহে প্রকাশক হিসেবেও নিজেকে পুরোদমেই স্বত্ববানের খাতায় অনুমোদন লাভ করি।

বললেন, ২০০৬ সালে বাজারে জাতীয় দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকাটির সুন্দর নাম, লগো ও অবয়ব দেখে এ নামে নোয়াখালী হতে সাপ্তাহিক “ নয়াপৃথিবী ” প্রকাশনা ও সম্পাদনায় উদ্যোগী হই। যাতে আমি সম্পাদক ও এডভোকেট জামাল উদ্দিন ভূঁঞা প্রকাশক হিসেবে স্বত্ববান ছিলাম।

আকাশ মো. জসিম ২০০৭ সালে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনের সম্পাদনায় প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক ডেসটিনির বৃহত্তর নোয়াখালী প্রতিনিধি পদে কাজ করেছিলেন ২০১০ সাল পর্যন্ত।

২০১১ সালে ষ্ট্যাম্পফোর্ড ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ড. হান্নান ফিরোজের সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলাদেশ সময়ের নোয়াখালীর নিজস্ব প্রতিনিধি পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

২০১৭ সালে ড. হান্নান ফিরোজের মৃত্যূর পর কিছুদিন দৈনিক আলোকিত সময় ও একইবছর দৈনিক শেয়ার বিজের নোয়াখালী প্রতিনিধি পদে যোগদান করেন ।

এছাড়া, ইংরেজি দৈনিকে কাজ করার শখ হিসেবে ২০১৪ সালে বহুল প্রচারিত ডেইলী সানের নোয়াখালী প্রতিনিধি পদে কাজ করছেন তিনি।

দৈনিক দিশারী’র সম্পাদক ও প্রকাশক আকাশ মো. জসিম বললেন, জীবনের এ প্রান্তে এসে মনে হয়েছে, আসলে পেছনের দিনগুলোর পাতায় পাতায় সবগুলো অতীতই ছিল বড় ভুল। যে দেশে সাংবাদিক হওয়ার জন্যে কোন শিক্ষা-দীক্ষার বালাই নেই, বাধ্যবাধকতার কথা বললে কিছু মানুষ ক্ষেপে যান ; সে দেশে এ পেশায় না এসে জীবন জীবিকার সৌহার্দ্যে জীবনটাকে পরিবারে, সমাজে, দেশে কিংবা বিদেশে হলেও ধনে-মানে-সম্মানে, সম্ভ্রান্তের অটুট বন্ধনে সাজিয়ে নিতে পারতাম।

আকাশ মো. জসিম বললেন, ছাত্রজীবনে বিখ্যাত আইনজীবিদের গল্প শুনতাম। সে সব শুনে জীবনের ইচ্ছে ছিল একজন বড় আইনজীবি হওয়ার। কিন্ত, তা আর না হয়ে আজ হয়ে গেলাম গাঁও গেরামের ছোট খাটো সাংবাদিক।

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!