নোয়াখালীতে পত্রিকা বিক্রয় কমে গেছে

  • আপডেট সময় শনিবার, মার্চ ১১, ২০২৩
  • 179 পাঠক

—————————-
ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশকাল, ১১ মার্চ, ২০২৩

—————————-
নোয়াখালীতে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার পাঠক ও গ্রাহক সংখ্যা কমে চলছে। সংবাদসেবিরা এ ধারাকে কোন দেশের গণতন্ত্র, অর্থর্নীতি, সভ্যতা, শিক্ষা, সংস্কৃতির বিনাশের অন্যতম অশনিসংকেত বলেই মনে করছেন।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের পরই এ ধারা দিনদিন ক্রমশ হতাশায় পরিণত করছে সংবাদপত্রের সাথে জীবন জীবিকায় জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে। সংবাদপত্রের এমন করুন ও বিপর্যস্তদশায় স্থানীয় সংবাদপত্র এজেণ্ট ও অনেক বিক্রেতারাও এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।

জেলা শহরের মাইজদী বাজারের মুলধারা ও মাইজদী কোর্টস্থ সন্ধানী এণ্টারপ্রাইজের অনেক বিক্রয়কর্মী এখন দেশ ছেড়ে বিদেশ কর্ম করছেন। এ পেশা ছেড়ে তারা আর্থিকভাবে বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ স্বচ্ছলজীবনও পার করছেন বলে জানান কয়েকজন।

সূত্র জানায়, করোনার আগে সরকারী দপ্তর উপ-দপ্তরে ঢিলেতালে চললেও করোনার পর তা প্রায় শুণ্যের কোঠায় চলে এসেছে। জাতীয় পর্যায়ের যে পত্রিকাটির কাটতি ছিল শতাধিক, তা বর্তমানে ১৫/২০ কপিও নেই বিক্রয়ের খাতায়। বাজার হারানো প্রায় জাতীয় দৈনিকের কিছু আসে নামখাওয়াস্তে আর কিছু সৌজন্য সংখ্যা হিসেবে।

খোদ জেলার শীর্ষ সরকারী দপ্তরসমূহেও পত্রিকা বিক্রয়ের পরিসংখ্যান সুখকর নয়। হতাশাজনক। কিছু সরকারী দপ্তরে আগে ৪/৫টি দৈনিক পত্রিকা রাখা হলেও, সেখানে বর্তমানে একটি হয়ে গেছে। এ জেলার প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পত্রিকা রাখার চিত্রে রয়েছে চরম দৈন্যদশা। দৈনন্দিন জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশের ধারায় সরকারী প্রাথমিক হতে শুরু করে অনেক কলেজেও রয়েছে এমন অসুস্থ্য সংস্কৃতির বল্গাধারা।

এক বিক্রেতা বলেন, পত্রিকার পাশাপাশি অন্যপেশা না হলে টেকা চরম দায়। সে কারণে তিনি বিকেলে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বললেন, পত্রিকার বিক্রয় একেবারে কমে গেছে। আগে শতাধিক কপি বিক্রয় করতে পারলেও বর্তমানে সারাদিন ৩৫/৪০ কপি বিক্রয় করতেও কষ্ট হচ্ছে।

এদিকে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাতেগোনা কিছু বিক্রয় হলেও কবিরহাটে কোন দৈনিক পত্রিকাই প্রতিদিন পৌঁছে না। এখানকার স্থানীয় বিক্রেতা মাইন উদ্দিন বলেন, করোনার আগে কিছু বিক্রয় করতেন। করোনার পর এককপিও আনা হয়না। বললেন, ইতোপূর্বে অনেক গ্রাহক তার হাজার হাজার টাকা বকেয়া রেখে একপর্যায়ে তা আর দেয়নি। সে কারণেও মাইন উদ্দিন ক্ষোভ ও দু:খে পত্রিকা বিক্রয় ছেড়ে দিয়েছেন।

নোয়াখালীর একটি দৈনিকের এক জ্যেষ্ঠ সম্পাদক বলেন, জেলা শহরের সরকারী কোন কর্মকর্তা মাঝে মধ্যে দু’ একটি দৈনিকে চোখ রাখতে দেখা গেলেও প্রায় রাজনীতিবিদের টেবিলে বর্তমানে পত্রিকার নাম নিশানারও উপস্থিতি নেই। রাজনীতিবিদরা পত্রিকার বদলে প্রায় সময়ই মোবাইলে চোখ রাখছেন। পত্রিকার বদলে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে প্রচারিত হওয়ার বাহবা কুড়াচ্ছেন।

সম্পাদকের ভাষায়, তবে কারো বিরুদ্ধে কোন খবর প্রকাশ হলে তিনি হয়তো পত্রিকাটির খোঁজখবর নেন। কিন্তু বর্তমানে কোন রাজনীতিকের ব্যক্তিগত কার্যকলাপ জনসমর্থিত না হলেও সেসব নিয়ে সংবাপত্রে লেখা-জোখা প্রায়ই বন্ধ হয়ে গেছে ; তাই মানুষও পত্রিকার মাধ্যমে প্রতিবাদের যোগান মেলাতে না পারায় পত্রিকার পাতায় চোখ রাখাকে অর্থ ব্যয় ও সময় নষ্ট বলেই মনে করছেন। সে কারণে দিনদিন কমে চলছে পত্রিকার বিক্রয় ও সাধারণ মানুষের বিশ্বস্ততা ও নির্ভরতা।

আরেকজন সম্পাদক বলেন, সরকারী-বেসরকারী দপ্তরসমূহে বিবিধ খরচের নামে হাজার হাজার টাকা লুটে নেয়া হয়। অথচ, মাত্র দু’চারটি পত্রিকা কেনার সামর্থ্য রাখেনা সেসব দপ্তর সমূহ। তিনি বলেন, শিক্ষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি লালনের জন্যে জাতী হিসেবে এ খবর আমাদেও সবার জন্যে সত্যিই হতাশাজনক, বেদনাদায়ক, অবমাননাকর ও অস্বস্তিকর।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!