———————-
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
০২ এপ্রিল, ২০২৩
———————
ইসলাম বরাবরই ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহ করে। একান্ত নিরুপায় না হলে পারতপক্ষে কারো কাছে ভিক্ষার হাত বাড়ানো নিন্দনীয়। আবু নোমাম (রহ.) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা (রহ.)…ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম। ওপরের হাত দাতার, আর নিচের হাত ভিক্ষুকের। (বুখারি, হাদিস : ১৪২৯)
তাই নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে উপার্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। এমনকি কিভাবে তারা সসম্মানে উপার্জন করতে পারে, সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিতেন। প্রয়োজনে লাকড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করার তাগিদ দিতেন, যা তখনকার যুগে সবচেয়ে সহজ মাধ্যম ছিল।
মুয়াল্লা ইবনে আসাদ (রহ.)…যুবাইর ইবনে আওয়াম (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ রশি নিয়ে লাকড়ির আঁটি বেঁধে তা বিক্রি করে, এতে আল্লাহ তাআলা তার সম্মান রক্ষা করেন, এটা তার জন্য মানুষের কাছে ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম! লোকজনের কাছে এমন চাওয়ার চেয়ে, যে চাওয়ায় কিছু পাওয়া যেতে পারে বা না-ও পারে। (বুখারি, হাদিস : ২৩৭৩)
অর্থাৎ ভিক্ষাবৃত্তি না করে যেকোনো একটি পেশা অবলম্বন করার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে যাদের ঘরে এক দিন এক রাতের খাবারের ব্যবস্থা আছে, তাদের জন্য অন্যের কাছে ভিক্ষার হাত বাড়ানো অনুচিত। নবীজি (সা.) এ ধরনের লোকদের ওই দিনের জন্য অমুখাপেক্ষীদের কাতারে আখ্যা দিয়েছেন।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ধনী (অমুখাপেক্ষী) হওয়া সত্ত্বেও সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অন্যের কাছে কিছু চায়, সে অধিক দোজখের আগুন চায়। বর্ণনাকারী নুফায়লির অন্য বর্ণনায় আছে, জাহান্নামের জ্বলন্ত অঙ্গার চায়।
সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ধনী (বা মুখাপেক্ষী) হওয়ার সীমা কী? রাবী নুফায়লির অন্য বর্ণনায় উল্লেখ করেন, অমুখাপেক্ষিতার সীমা কী, যার কারণে অন্যের কাছে কিছু চাওয়া অনুচিত হয়? তিনি বলেন, কারো কাছে এমন সম্পদ থাকা, যা তার সকাল ও সন্ধ্যার প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট। বর্ণনাকারী নুফায়লির অন্য বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তির কাছে এমন পরিমাণ সম্পদ হবে, যা তার রাত-দিন বা দিন-রাতের জন্য যথেষ্ট।
ইমাম আবু দাউদ (রহ.) বলেন, আমি এখানে যে হাদিস উল্লেখ করলাম তা নুফায়লি আমাদের কাছে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬২৯)
নবীজি (সা.)-এর হাদিসে অবশ্য আরেক স্তরের অমুখাপেক্ষীরও বর্ণনা পাওয়া যায়, যাদের ব্যাপারে নবীজি (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তাদের চেহারায় খামচানোর বা মারের বা আঘাতের ক্ষতচিহ্ন থাকবে। হাদিসের ভাষ্য মতে, যাদের কাছে ৪০ থেকে ৫০ দিরহাম সমপরিমাণ রৌপ্যমুদ্রা বা তার সমপরিমাণ সম্পদ থাকবে, তাদের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা নিষেধ।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কারো কাছে যদি প্রয়োজন মেটানোর মতো কিছু থাকে এতদসত্ত্বেও যে লোকের কাছে ভিক্ষা চায়, তবে কিয়ামতের দিন সে এভাবে উপস্থিত হবে যে ভিক্ষাবৃত্তির কারণে তার চেহারায় খামচানোর বা মারের বা আঘাতের ক্ষতচিহ্ন থাকবে। বলা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) কী পরিমাণ সম্পদের কারণে একজন অমুখাপেক্ষী হবে? তিনি বললেন, পঞ্চাশ দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) বা সে পরিমাণ মূল্যের স্বর্ণ। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৪৭)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আহমদ ইবন সুলায়মান (রহ.)…আমর ইবন শুআয়ব (রহ.) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সাহায্য চায় অথচ তার চল্লিশটি দিরহাম রয়েছে সেই পীড়াপীড়িকারী। (নাসায়ি, হাদিস : ২৫৯৪)
ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত নামক গ্রন্থে মহরের আলোচনায় ১০ দিরহাম রুপার হিসাব দেখানো হয়েছে ২.৬২৫ তোলা। সেই হিসাবে ৪০ দিরহাম রুপার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০.৫ তোলা। আর যদি ৫০ তোলার হাদিসের আলোকে হিসাব করা হয়, তাহলে দাঁড়ায় ১৩.১২৫ তোলা।
অর্থাৎ কারো কাছে এই পরিমাণ রুপার মূল্যের সমপরিমাণ সম্পদ থাকলে তার জন্য ভিক্ষা করা জায়েজ হবে না। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত ৬/২৪৪)
জাকাত বা সদকা দেয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের লোকদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা উচিত।
Leave a Reply