বিপদগ্রস্তকে ঋণ দেয়া দান করার চেয়ে উত্তম

  • আপডেট সময় সোমবার, এপ্রিল ১০, ২০২৩
  • 137 পাঠক

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

——————–
আমাদের সমাজে বহু মানুষ বিভিন্ন মানুষ সাময়িক সংকটে পড়ে যায়। তখন তাদের প্রয়োজন হয় একটি সাহায্যের হাত। যা ধরে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তারা এবং তাদের পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা অর্জন করতে পারে। কখনো কখনো সামান্য একটি উপকার একটি ব্যক্তির বা একটি পরিবারের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। যা অবশ্যই একরামুল মুসলিমিনের অন্তর্ভুক্ত।

বিপদের দিনে মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করার একটি মাধ্যম ‘করজে হাসান’। করজে হাসান মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় করজে হাসানের মাধ্যমে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়। করজে হাসানা শব্দটি পবিত্র কোরআনেও পাওয়া যায়।

ইরশাদ হয়েছে, ‘কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে করজে হাসান (উত্তম ঋণ) প্রদান করবে? ফলে আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ, বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আর আল্লাহ তাআলাই রিজিক সংকুচিত করেন ও বৃদ্ধি করেন। তোমাদের তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৪৫)

পবিত্র কোরআনে একাধিক জায়গায় আল্লাহকে করজে হাসান দেওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে। যেমন : সুরা হাদিদে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘এমন কেউ কি আছে, যে আল্লাহকে ঋণ দিতে পারে? ‘করজে হাসান’ (উত্তম ঋণ), যাতে আল্লাহ তা কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দেন। আর সেদিন তার জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ১১)

বিভিন্ন আয়াতে তাফসিরবিদরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। যার মধ্যে একটি হলো, আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেওয়ার অর্থ তাঁর পথে দান-খয়রাত করা। এই মাল যা মানুষ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তা আল্লাহরই দেওয়া। তা সত্ত্বেও সেটাকে ঋণ বলে আখ্যায়িত করা আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ বৈ কিছু নয়। তিনি এর প্রতিদান অবশ্যই দেবেন, যেমন ঋণ পরিশোধ করা অত্যাবশ্যক হয়।

মানুষকে নিঃশর্ত ঋণ দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করা দান-সদকার চেয়েও উত্তম। কারণ ভিক্ষুকরা অনেক সময় বিকল্প অবলম্বন থাকার পরও চেয়ে বেড়ায়। কিন্তু কেউ একান্ত বিপদে না পড়লে কারো কাছে ঋণের জন্য হাত বাড়ায় না।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মিরাজের রজনীতে জান্নাতের একটি দরজা দেখলাম, তাতে লেখা রয়েছে যে সাদাকার পুরস্কার দশ গুণ ও কর্জে হাসানার পুরস্কার আঠারো গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে।’ লেখাটি পড়ে রাসুল (সা.) তাঁর খেদমতে নিয়োজিত ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আমাকে বলবে এর কারণ কী? ফেরেশতা জবাব দিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! এর কারণ হলো, ভিক্ষুক তার কাছে কিছু অবলম্বন থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষা চায়, কিন্তু কোনো প্রকৃত অভাবী বিপদে না পড়লে ঋণ চায় না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৩১)

আবার কেউ ঋণ নেওয়ার পর কোনো সংকটে পড়ে গেছে। তার বড় ধরনের কোনো লোকসান হয়ে গেছে, তখন তাকে চাপ না দিয়ে অবকাশ দেওয়ার মধ্যেও দান-খয়রাতের সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি (ঋণগ্রস্ত) অভাবী ব্যক্তিকে অবকাশ দেবে, সে দান-খয়রাত করার সওয়াব পাবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ২৪১৮)

সুবহানাল্লাহ, আর যদি সামর্থ্য থাকে, তাহলে মাফ করে দেওয়ার মধ্যে অফুরন্ত সওয়াব। দুনিয়াতে অভাবী ঋণগ্রস্তের ঋণ মাফ করে তাকে চিন্তামুক্ত করলে, কিয়ামতের কঠিন দিনে মহান আল্লাহও ঋণমাফকারীকে চিন্তামুক্ত করবেন। তাকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে লোক অভাবী ও ঋণগ্রস্তকে সুযোগ প্রদান করে অথবা ঋণ মাফ করে দেয়, কিয়ামতের দিবসে আল্লাহ তাআলা তাকে নিজের আরশের ছায়ায় আশ্রয় প্রদান করবেন, যেদিন তাঁর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। (তিরমিজি, হাদিস ১৩০৬)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!