ঈদ উপহারের নামে যৌতুক নয়

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, জুন ২৯, ২০২৩
  • 112 পাঠক

সাআদ তাশফিন। ২৯ জুন, ২০২৩ ২

একদিকে ফলের মৌসুম অন্য দিকে ঈদুল আজহা, পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যে চড়া মূল্য কিছু সদ্য বিয়ে দেয়া মেয়ের অভিভাবকদের ভীষণ চিন্তায় ফেলে রেখেছে। কারণ ফলের মৌসুমে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি বাহারি রকম ফল না পাঠালে মেয়েকে বিভিন্ন রকম কথা শুনতে হয়, আবার কোরবানিতে তাদের পছন্দমতো কোরবানির পশু না দিতে পারলেও মান-সম্মান থাকে না।

কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে দ্রব্যমূল্যের যে চড়া মূল্য হয়েছে, এই বাজারে এত আনুষ্ঠানিকতা পালন করাও দুঃসাধ্য ব্যাপার। কেউ কেউ তো আবার ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মেয়ের বাবার কাছে ফ্রিজও চেয়ে বসে। অথচ মৌসুমি এই লেনদেনকে পরিভাষায় যৌতুক বলে।

এটা ধনী-গরিব সবাইকে মারাত্মকভাবে গ্রাস করছে। সরকারি ও ইসলামী আইনে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও সমাজের বহু মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে চরমভাবে জড়িত। পার্থক্য এতটুকু যে তাতে বিভিন্ন মৌসুমি খোলস পরিয়ে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয় মাত্র।

বিয়ের দিন যে যৌতুক বরপক্ষ উসুল করে, তাকে আমাদের সমাজ খাটো চোখে দেখলেও এর পর থেকে বিরামহীন যৌতুকের ধারাবাহিকতা শুরু হয়, তাকে কিন্তু সমাজ বিশাল সম্মানের বিষয়ই মনে করে থাকে।

অথচ বিয়ের দিনের যৌতুক তো শুধু ভূমিকামাত্র। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন মৌসুমি ছদ্মনামে যৌতুক আদায়ের মহোৎসব। যেমন—রমজানে ইফতারি পাঠানো, ঈদুল ফিতরে সেমাই-চিনি, ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু, ফলের মৌসুমে মৌসুমি ফল ইত্যাদি।

এর ধারাবাহিকতা যেন মৌসুমের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন নামে সারা বছরই লেগে থাকে, যা আদায় করতে গিয়ে কনেপক্ষ হয়ে পড়ে দিশাহারা। কারো কারো ক্ষেত্রে শরণাপন্ন হতে হয় সুদি মহাজনের কাছে কিংবা কখনো হারিয়ে ফেলতে হয় নিজেদের শেষ সম্বলটুকু।
অর্থনৈতিক লেনদেনের মৌলিক বিধান সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পরস্পর একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং এই উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে মামলা করো না, যে মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনেশুনে গ্রাস করার গুনাহে লিপ্ত হবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ তার আন্তরিক সম্মতি ছাড়া হস্তগত করলে তা হালাল হবে না।’ (বায়হাকি, হাদিস: ১৬৭৫৬)

যৌতুকপ্রথার জন্য সমাজব্যবস্থা ও পাড়া-পড়শির ভূমিকাও কোনো অংশে কম নয়।

কার শ্বশুরবাড়ি থেকে কী পরিমাণ যৌতুক এলো এ নিয়ে আমাদের সমাজে খুব বেশি অহংকার করা হয়। ফলে শ্বশুরালয়ের লোকদের মধ্যে এমন চিন্তা কাজ করে যে সবার বাড়িতে উপহার এলো আমার বাড়িতে এলো না, আমি গরিবের সঙ্গে আত্মীয়তা করলাম? এমন হীন মানসিকতাই আমাদের সবাইকে এ নোংরা ‘ভিক্ষা’ নিতে বাধ্য করে।
তবে একান্ত যদি কেউ আন্তরিক আগ্রহে সামাজিক প্রথা কিংবা লোকলজ্জার চাপে না পড়ে সাধ্যানুযায়ী কোনো উপহার তার মেয়েকে দেয়, শরিয়তে এর অনুমতি রয়েছে।

কিন্তু এ ধরনের সময়ে এগুলো দিতে গেলে আশপাশের অনেক পরিবারে এর প্রভাব পড়তে পারে, তারা তাদের পুত্রবধূদেরও যৌতুকের জন্য কুরুচিপূর্ণ কথা শোনাতে পারে। তাই এই সময়গুলোতে জায়েজ হলেও এ ধরনের উপহার দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এবং ছেলেপক্ষেরও উচিত, এই সময়গুলো মেয়ের পক্ষ থেকে যেন কোনো যৌতুক বাড়িতে না আসে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা। আপনার বিলাসিতা কারো কারো নাভিশ্বাসও তুলতে পারে।

মহান আল্লাহ সবাইকে এই মারাত্মক ব্যধি থেকে বেরিয়ে আসার তাওফিক দান করুন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!