মানুষকে শয়তান যেভাবে ধোঁকা দেয়

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৩, ২০২৩
  • 165 পাঠক

জাওয়াদ তাহের। বৃহষ্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩।

শয়তান মানুষের শত্রু। সে সর্বদা ফাঁদ পেতে বসে থাকে মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য। শয়তান মানুষকে নানাভাবে ধোঁকা দেয়। কখনো মন্দ পথে, কখনো নেক সুরতে।

শয়তান মন্দ কাজ দৃষ্টিনন্দন করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে। এমন কিছু সাজানো কাজ নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো :

জাদু শিখানো

শয়তানের অন্যতম কাজ মানুষকে জাদু শেখানো বা জাদু করতে উদ্বুদ্ধ করা। এটা অনেকের কাছে উপভোগ্য। জাদুবিদ্যার মাধ্যমে শয়তান মানুষকে ধোঁকা দেয়।

ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা (বনি ইসরাঈল) সুলায়মান (আ.)-এর শাসনামলে শয়তানরা যা কিছু (মন্ত্র) পড়ত তার পেছনে পড়ে গেল। সুলায়মান (আ.) কোনো কুফর করেনি। অবশ্য শয়তানরা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিয়ে কুফরিতে লিপ্ত হয়েছিল।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১০২)

যুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া

ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধানের সামনে যুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া। কোনো বিষয় যদি নিজের চিন্তা-বুদ্ধি অনুযায়ী হয় তাহলে তা গ্রহণ করা, অন্যথায় তা প্রত্যাখ্যান করার মানসিকতা শয়তানের অন্যতম শিক্ষা। আল্লাহ বলেন, ‘সে (শয়তান) বলল, আমি তার (অর্থাৎ আদম আ.) চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদা দ্বারা।’ (সুরা : ছদ, আয়াত : ৭৬)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যারা তাদের যুক্তিকে ইসলামের বিধি-বিধানের ওপর প্রাধান্য দেয়, আল্লাহর আদেশের ওপর প্রাধান্য দেয়, তারা শয়তানের ফাঁদে পা দেয়।

আকিদা ও বিশ্বাসে সন্দেহ সৃষ্টি করা

ইসলামের মৌলিক আকিদাতে সন্দেহ সৃষ্টি করা শয়তানের অন্যতম একটি কাজ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কারো কাছে শয়তান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? ওই বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমাদের প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন ব্যাপারটি এ স্তরে পৌঁছে যাবে, তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় এবং বিরত হয়ে যায়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২৭৬)

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন করা

শয়তানের এটি একটি কাজ মানুষকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত থেকে বিছিন্ন করে দেওয়া। অনেকে নানা নামে দলছুট হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বসবাস করো। বিচ্ছিন্নতা হতে সাবধান থেকো। কেননা, শয়তান বিচ্ছিন্নজনের সঙ্গে থাকে এবং সে দুজন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জায়াগার ইচ্ছা পোষণ করে সে যেন (মুসলিম সমাজে) ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৫)

অহংকার প্রদর্শন করা

অহংকার প্রদর্শন করে অনেকে আনন্দ পায়। এটা শয়তানির নামান্তর। আল্লাহ বলেন, ‘এবং (সেই সময়ের আলোচনা শোনো), যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা করো, ফলে তারা সকলে সিজদা করল, কিন্তু ইবলিস ছাড়া। সে অস্বীকার করল ও দর্পিত আচরণ করল এবং সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৪)

বিকৃতি ঘটানো

মানুষকে আল্লাহ তাআলা স্বাভাবিক যে স্বভাবে সৃষ্টি করেছেন শয়তান মানুষের সেই স্বভাবের মধ্যে বিকৃতি ঘটাবে। এটা অনেকের কাছে উপভোগের বিষয়। অথচ এটি শয়তানের ফাঁদ। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আমি তাদের সরল পথ থেকে নিশ্চিতভাবে বিচ্যুত করব, তাদের (অনেক) আশা-ভরসা দেব এবং তাদের আদেশ করব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কান চিরে ফেলবে এবং তাদের আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধু বানায়, সে সুস্পষ্ট লোকসানের মধ্যে পড়ে যায়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১৯)

মিথ্যাকে সুসজ্জিত করা

এটা শয়তানের বড় এটা কূটচাল। সে মিথ্যা ও ভ্রান্ত জিনিসকে অনেক সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করবে। সে ভ্রান্ত জিনিসকে এমনভাবে উপস্থাপন করবে মনে হবে—এটাই তার জন্য কল্যাণকর। পবিত্র কোরআনে হুদহুদ পাখির ভাষায় এসেছে, ‘আমি সেই নারী ও তার সম্প্রদায়কে দেখেছি আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যের সিজদা করছে। শয়তান তাদের কাছে, তাদের কার্যকলাপকে শোভনীয় করে দেখিয়েছে। এভাবে সে তাদের সঠিক পথ থেকে নিবৃত্ত রেখেছে, ফলে তারা হিদায়াত পাচ্ছে না।’ (সুরা নামল, আয়াত : ২৪)

অহেতুক ঝগড়া

কোনো ধরনের দলিল-প্রমাণ ছাড়া ঝগড়া আর লড়াই করা শয়তানের বৈশিষ্ট্য। কিছু মানুষ এমন কাজে সিদ্ধহস্ত। আল্লাহ বলেন, ‘কিছু মানুষ অজ্ঞানতাবশত আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক অবাধ্য শয়তানের অনুসরণ করে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩)

ফজরের সময় ঘুমিয়ে থাকা

ফজরের সময় নামাজিকে ঘুমিয়ে রাখাও শয়তানের একটি কাজ। এ জন্য প্রয়োজন এই সময় শয়তানের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা। তেমনি জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় না করাও শয়তানের কারসাজি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বলা হলো যে সে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটায় (অর্থাৎ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে না) এ কথা শুনে তিনি বলেন, ওই লোকটি এমন, যার কানে শয়তান পেশাব করে দিয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ১৭০২)

নামাজে অহেতুক কাজ করা

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে নামাজে থাকা অবস্থায় তার হাত দ্বারা পাথরের টুকরা নাড়ছে। তার নামাজ শেষ হলে তাকে আবদুল্লাহ (রা.) বললেন, তুমি নামাজে থাকা অবস্থায় পাথরের টুকরা নেড়ো না। কেননা, তা শয়তানের কাজ। (নাসায়ি, হাদিস : ১১৬০)

এ ছাড়া ইমাম রুকু থেকে মাথা উঠানোর আগে মুক্তাদির মাথা উঠিয়ে ফেলা, নামাজে বেশি পরিমাণ ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা দেওয়া), মুসল্লির সামনে দিয়ে হাঁটাহঁটি করা, কাতারের মাঝখানে খালি জায়গা রাখা, নামাজে এদিক-সেদিক তাকানো, হারাম সম্পদ একত্র করা, দরিদ্রতার ভয়ে আল্লাহর রাস্তায় খরচ না করা, লোক দেখানোর জন্য খরচ করা, সম্পদ অপচয় করা, অপব্যয় করা, গুনাহকে ছোট মনে করা, বিচারকার্যে জুলুম করা, তিনজনের মধ্যে দুজন কানাঘুষা করা, একাকী সফর করা, মাহরাম নারীর সঙ্গে নিরিবিলি থাকা, কবুতর নিয়ে খেলা করা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো, উলঙ্গ হওয়া, বাম হাতে পানাহার করা, কথার মাঝে লৌকিকতা অবলম্বন করা, মদ পান করা, জুয়া খেলা, মিথ্যা বলা—এ সবই শয়তানের কাজ। প্রত্যেকটির ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণনা এসেছে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!