দিশারী রিপোর্ট : নোয়াখালীর সর্বত্রই চরম ব্যাপকতা লাভ করেছে মাদক কারবার । এ কারবারীদের প্রকাশ্য আনাগোনা ও বাণিজ্য প্রসারের দৌঁড়ঝাপে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তার নি:শ্বাস ফেলছেন অভিভাবক ও সমাজ সচেতনরা।
————————————————————————–
উদ্বিগ্ন নোয়াখালীর অভিভাবকমহল
—————————————————————————-
সূত্র জানায়, স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার সুযোগে পেশাদার ইয়াবা কারবারীরা হালে তরুন সমাজকে ব্যবসা প্রসারের মূল উপাদান হিসেবে বেচে নিয়েছে। তরুণদের এ জালে নেশাগ্রস্ত করে নিজেদের আখের ঘুচিয়ে নিতে তৎপর তারা।
সমাজসচেতনরা জানান, ইয়াবা ব্যবসা বন্ধে বেশ কিছুদিন ধরে ঢিলেঢালেভাবেই তদারকি করছে নোয়াখালীর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তারা বলেন, পুলিশ আগে মাদকসেবী ও কারবারীদের ধরতে অনেক বেশি তৎপর ছিল। হালে তা নেই বললেই চলে।
এছাড়া, মাদক নিয়ে ডিবি পুলিশেরও কার্যক্রম অনেকটা ভাটা পড়ার ন্যায়। আগের মতো চোখে পড়েনা। এ সুযোগে মাদক প্রসারও আগের চেয়ে বেশ ব্যাপকতা লাভ করেছে।
শহরের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, নোয়াখালীতে মাদকের কারবার করে অল্পসময়ে অনেক বিপদগামী যুবক কোটিপতি হওয়ারও নজির হয়েছে। অনেকে আলিসান বাড়ি, গাড়িরও মালিক বনেছে। তাদের দেখেই অন্যরাও এ পথে পা বাড়িয়ে নিজেকে বিপদগামী করছে।
একজন আইনজীবি বলেন, যেখানে পুলিশ নিজেই মাদকাসক্ত হয় ; সেখানে কে কাকে ধরবে। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে টেষ্টে অনেক পুলিশই মাদকাসক্ততার প্রমাণ সরকারের কাছেও রয়েছে। তিনি আরো বলেন, শৃঙ্খলিত এ বাহিনী ঠিক থাকলে মাদক কারবারীরা অবশ্যই এ কারবার থেকে সরে যেতো।
অভিযোগ ওঠেছে, প্রায় থানার কর্তব্যরত পুলিশ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নিয়েই চুপসে থাকায় এর ব্যাপকতা পুরো সমাজকে গিলে খাচ্ছে। নোয়াখালী পৌর এলাকার প্রায় সচেতন নাগরিকই মনে করছেন, ইয়াবা ব্যবসা অনেক বেশি প্রকাশ্য হয়ে চলছে।
আবার মাঝেমধ্যে কিছু ধরা পড়লেও পুলিশ বিশেষ সখ্যতার কারণে মামলাকালে জব্দকৃত মালামালের পরিমাণ কম দেখিয়ে আদালতে জামিন পেতে সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, নোয়াখালী পৌরসভার কালিতারা বাজার, কাঞ্চন মেম্বারের পোল, ইনকাম চৌধুরীর পোল, গনির দোকান, পৌর বাসস্ট্যান্ড, সোনাপুর ধানহাটা, নুরিয়া স্কুল মোড়, মতিপুর রোড়,কাঠপট্রি, ইসলামিয়া মাদরাসা মোড়, সোনাপুর কলেজ গেইট, সোনাপুর বিআরটিসি বাসডিপো, তোফায়েলের পোল, উত্তর সোনাপুর, বিসিক শিল্পনগরী, গোরস্থান রোড়, মহিলা রোড়, দত্তের হাটের গরুর হাটা, ছাগলমারা পোল, দত্তবাড়ি মোড়, আইয়ুবপুর, খালপাড়া, গোপাই, উজিয়াল পুর, উপজেলা পরিষদ মোড়, গোদার মসজিদ মোড়, হরিনারায়ণপুর বাজার, কোর্ট ষ্টেশন, বার্লিংটন মোড়, মহিলা কলেজ মোড়, পৌরবাজার, ফ্ল্যাট রোড়, ছোল্লার দোকান, রশিদ কলোনী মোড়, জহুরুল হক মিয়ার গ্যারেজ, লক্ষীনারায়ণপুর বসিরার দোকান, মাইজদী ষ্টেশন, নোয়াখালী কলেজ মোড়, সিওর মোড়, মাইজদী বাজার, পৌরসভা গেইট, জেলখানা গেইট, হাসপাতাল রোড়, বিদ্যুৎ অফিসের মোড়, স্টেডিয়াম পাড়া এলাকা মাদক কারবারীদের অন্যতম চিহ্নিত বিক্রয় কেন্দ্র।
তবে , র্যাব ১১ এর নোয়াখালীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা খন্দকার শামীম জানান, তারা সঠিক খবর পেলেই মাদকসহ অপরাধীদের ধরার চেষ্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে ধৃতকালে আসামীর কাছে মালামাল যাই পাচ্ছেন, মামলায়ও তাই লিখছেন বলে জানান তিনি।
নোয়াখালী পৌরসভার একজন দায়িত্বশীল কাউন্সিলর বলেন, তার এলাকায় লকডাউনের মধ্যে মাদক কারবারীরা বেশ তৎপর হয়ে ওঠেছে। তাদের মাদক বাণিজ্য এখন খুবই তুঙ্গে। তারা ঘরে ঘরেই মাদক কারবার করতে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত রেখেছে।
তিনি বলেন, পুলিশের অভিযানে ভাটা। যে কারণে এ মাদক কারবারীরাও অবাধে এ বাণিজ্য চালিয়ে যচ্ছে। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে খুবই আশঙ্কা প্রকাশ করেন সমাজের এ দায়িত্বশীল ব্যক্তিও।
আরেকজন কাউন্সিলর বলেন, আগেকার পুলিশ সুপারকে জানালে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিতেন। এখন আর তা সহজে হয়না।
অবশ্য, অন্য একজন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে পুলিশ রাজনৈতিক মামলা, হামলা সামাল দিতেই বেশির ভাগ সময় পার করছে। তারপরেও আমরা খবর পেলে ব্যবস্থা যে নিইনা তাতো নয়।
এদিকে, জেলা শহরের সোনাপুর পুলিশ ফাঁড়িসহ জেলার অন্যান্য অঞ্চলের ফাঁড়ি পুলিশরাও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে মাসোয়ারার বিনিময়ে দহরম মহরম করার অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ সদস্য জানান, সোনাপুর ফাঁড়িতে দীর্ঘদিন ধরেই একই পদের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা (এসআই) এখানকার বেশ কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চাঁদা পেয়ে থাকেন। তিনি এ টাকায় নিজের এলাকায় স্বনামে বেনামে অনেক সহায় সম্পদও গড়ছেন।
সোনাপুর এলাকার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি জানান, সোনাপুর পুলিশ ফাঁড়ির বেশ কয়েক জন কর্মকর্তার সাথে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের চরম সখ্যতা রয়েছে। যে কারণে স্থানীয় মাদক কারবারীরাও পুলিশ ফাঁড়ির দুর্বল শৃঙ্খল ব্যবস্থাকে একপেশে রেখে অনেক বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন।
এর মধ্যে আসছে ভয়ংকর মাদক আইস। যার আরেক নাম ক্রিস্টাল মেথ। জানা যায়, ইয়াবার পথ ধরেই নোয়াখালীতে আসছে এই ক্রিস্টাল মেথ বা আইস নামের নতুন মাদক। চিকিৎসকরা জানান, ইয়াবার চেয়েও শতগুণ বেশি ক্ষতি হয় আইসে। এর দামও বেশি।
মৃত্যুর ঝুঁঁকিও বেশি। ইয়াবা তৈরির মুল উপাদান ‘এমপিটামিন’। ইয়াবার এমপিটামিন থাকে পাঁচ ভাগ আর ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের এমপিটামিনের পরিমাণ শতভাগ।
একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আইস’ লবণের মতো দানাদারজাতীয় মাদক। দেখতে কখনো চিনির মতো, কখনের মিছরির মতো। আইচ উচ্চমাত্রার মাদক। যা সেবনের পর মানবদেহে দ্রæত উত্তেজনার সৃষ্টি করে।
এই মাদক সেবনের পর মস্তিষ্ক বিকৃতিতে মৃত্যুও হতে পারে। তাছাড়া, অনিদ্রা, অতিরিক্ত উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম ও হৃদরোগকে বেগবান করে।
জানা গেছে, থাইল্যান্ড-মিয়ানমার হয়ে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার রুটে আইসের এ বিশাল চালান ঢুকছে বাংলাদেশে। আর তা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে।
তবে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, দেশের প্রতিটি ওয়ার্ড হতে শুরু করে সরকারের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি জনপ্রতিনিধি মাদক বিরোধী সমাজ বির্নিমাণে উদার ও আন্তরিক হলে সমাজ থেকে এর বীজ সমূহে নির্মূল সম্ভব। কিন্তু সমাজের দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধিরাই যদি হয় এর কারবারী, তাহলে নির্মূল ব্যবস্থা আশা করাটা অনেক দূরুহ ও বোকামী।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, থাইল্যান্ড-মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে আইস বা ক্রিস্টাল মেথ দেশে ঢুকছে বলে তারা জেনেছেন। তবে এখনো সর্বত্র হয়নি।
মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর নোয়াখালীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাচারকারিরা বাংলাদেশে আইস বাজারজাত করার চেষ্টা করছে। ‘আইস’ দেশে বাজারজাত হয়ে গেলে ইয়াবার চেয়ে শতগুণ ক্ষতির মুখে পড়বে যুবসমাজ। কারণ স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ছে না আইস |
Leave a Reply