যে কারণে মানুষ শহর ছাড়ছে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, আগস্ট ৮, ২০২৩
  • 95 পাঠক
————————————————————————-
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন
————————————————————————-
দিশারী ডেস্ক। ০৭ আগস্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এবং বিশ্লেষকদের মতে, গত দুই বছরে ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় যে হারে বেড়েছে সে হারে মানুষের আয় বাড়েনি। বরং আয় আরও কমেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে না পেরে শহর ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।
সরকারি হিসেবে ২০২০ সালে প্রতি হাজারে চারজন মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমায় আর ২০২১ সালে এসে সেই হার দ্বিগুণ হয়ে আটজনে দাঁড়ায়। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বলছে, নানামুখী চাপ সামলাতে না পেরে শহর ছাড়ছে মানুষ। তবে গ্রামে জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক কম। শহর ছাড়ার পেছনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে- জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হওয়া।
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চাপ সামলাতে না পারা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হওয়ায় ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে মানুষ। অথচ আগে উন্নত জীবনব্যবস্থার খোঁজে শহরে আসত মানুষ। গত পাঁচ বছরে এ সংখ্যা কমে এসেছে। সরকারি হিসেবে ২০২০ সালে প্রতি হাজারে ৪ দশমিক সাতজন মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমায়।
২০২১ সালে এসে সেই হার দ্বিগুণ হয়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে- জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সুযোগ সংকুচিত হওয়া, গ্রামে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। এর পেছনের আরেকটি কারণ হলো, গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে করোনা মহামারির প্রভাব ছিল বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২১’ শীর্ষক জরিপে এ তথ্য ওঠে এসেছে।
একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক তাদের এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলছে, ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোর তুলনায় গ্রামাঞ্চলে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক কম। গত মাসে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে এসে ফিরে যাওয়ার সময় এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দিয়ে গেছে। সেই প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে নানামুখী সংকটের দরুণ শহরে কাজের ক্ষেত্র অনেকটাই সংকুচিত হয়ে এসেছে। যার ফলে মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমাচ্ছে। অবশ্য গ্রামাঞ্চলে জীবনযাত্রার মান কিছুটা উন্নতও হয়েছে গত এক দশকে।
বিবিএস বলছে, শহরাঞ্চলে অন্যান্য সিজনাল মহামারি ও অসুখ-বিসুখ বেড়ে যাওয়াতেও মানুষ শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তরিত হচ্ছে। তবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বলছে, এর পেছনে আরও ইতিবাচক কারণ রয়েছে। তা হলো গ্রামে শহরের মতো কিছু সুযোগ-সুুবিধা ও কাজের পরিধি বেড়েছে।
এ ছাড়া যোগাযোগব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসায় মানুষ নিকটবর্তী শহরে কাজ করলেও বাস করে গ্রামের বাড়িতে। এ ধরনের মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে।
সরকারি সংস্থা বিবিএসের হিসেবে ২০২১ সালে প্রতি হাজারে আটজন মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। সেই হিসেবে ২০২১ সালের পুরো সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৬ হাজার। তবে এর প্রায় অর্ধেক সংখ্যক ঢাকা থেকে গ্রামে স্থানান্তর হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করোনা মহামারির সময় বিপুল সংখ্যক মানুষ শহর থেকে (বিশেষত ঢাকা) গ্রামে স্থানান্তর (ড্রপআউট) হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই কাজ হারিয়ে গ্রামে চলে গেছে। আর যারা গ্রামে চলে গেছে তাদের বেশির ভাগই আর ফিরতে পারেনি। এর পর থেকে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে আরও বেশি। ফলে এখনো নিম্ন ও মধ্য আয়ের বহু মানুষ নিজেদের ঢাকা থেকে গ্রামে স্থানান্তর করছে। এটা কিন্তু এমন নয় যে, গ্রামে গিয়ে তারা শহরের চেয়েও উন্নতমানের জীবনধারণ করবে। বরং শহরের তুলনায় গ্রামের সুযোগ-সুুবিধা অনেক কম। তবে এটা ঠিক যে, শহরের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেকটা ভালো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা-পরবর্তী দীর্ঘ সময় ধরে দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শহরে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি না হওয়া এবং গ্রামাঞ্চলে কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হওয়ার কারণে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে স্থানান্তর হচ্ছে। এটা একদিক থেকে বিবেচনা করলে বেশ ইতিবাচক।
বিবিএসের প্রতিবদেন ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২১ সালে শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তর হয়েছে হাজারে আটজন, যা ২০২০ সালে ছিল ৪ দশমিক সাতজন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে স্থানান্তর বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এর আগে ২০১৭ সালে গ্রাম ছেড়ে শহরে স্থানান্তর হয়েছিল হাজারে পাঁচজন এবং ২০১৮ সালে তা কমে ৪ দশমিক ৯ জনে দাঁড়ায়। ২০১৯ সালে তা আরও কমে ৪ দশমিক তিনজনে দাঁড়ায়।
বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুন শেষে মূল্যস্ফীতির চাপ দুই অঙ্কের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে। তবে বেসরকারি খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে মূল্যস্ফীতির এই চাপ আরও অনেক বেশি। এ জন্য মানুষকে স্বস্তি দিতে হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!