সাআদ তাশফিন। ১৫ আগস্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
পরিশুদ্ধ অন্তর মুমিনকে খাঁটি মুমিনে পরিণত করে। নবীজি (সা.)-এর প্রিয় মানুষ ছিলেন, পরিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী ব্যক্তিরা। নবীজি (সা.)-এর চোখে তারা ছিলেন সর্বোত্তম মানুষ। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম ? তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি।
’ তারা বলেন, সত্যভাষীকে তো আমরা চিনি ; কিন্তু বিশুদ্ধ অন্তরের ব্যক্তি কে ? তিনি বলেন, ‘ সে হলো পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ, যার কোনো গুনাহ নেই, নেই কোনো দুশমনী, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্মঅহমিকা ও কপটতা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২১৬)
তাই পূর্বের মুসলিম মনীষীরা অন্তরের পবিত্রতা অর্জনের প্রতি তাগিদ দিতেন। ইবনে রজব রহ. বলেন, ‘সর্বোত্তম আমল হলো, অন্তরকে হিংসা, বিদ্বেষ, লোভসহ সমস্ত কলুষ থেকে মুক্ত রাখা।’ এর কারণ হলো, এগুলো অন্তরের ব্যাধি।
যা মানুষের ইহকাল-পরকালের প্রশান্তি কেড়ে নেয়। মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয় এবং মানুষকে পাপের পথে ঠেলে দেয়।
পরিশুদ্ধ অন্তর জান্নাতে যাওয়ার পূর্বশর্ত। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জান্নাতে প্রবেশ করানোর আগে তাদের অন্তরকে সব ধরনের কলুষ থেকে পবিত্র করবেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তাদের অন্তর থেকে ঈর্ষা দূর করব, তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। (সুরা আরাফ, আয়াত : ৪৩)
বোঝা গেল যে অন্তরে ঈর্ষা নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ সম্ভব নয়। এমনিভাবে হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি অন্তরে নিয়েও জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। অন্তরের এই ব্যাধি নিয়ে জান্নাতের মতো পবিত্র জায়গায় প্রবেশ করা সম্ভব নয়। তাই মহান আল্লাহ যাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তাদের অন্তরকে এগুলো থেকে পরিশুদ্ধ করে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, আর আমরা তাদের অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করব, তারা ভাইয়ের মতো পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে। (সুরা : হিজর, আয়াত : ৪৭)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, মুমিনগণ যখন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এক পুলের ওপর তাদের আটকে রাখা হবে। তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা জুলুম ছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার আবাসস্থল যেরূপ চিনত, তার চেয়ে অধিক তার জান্নাতের আবাসস্থল চিনতে পারবে। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪০)
এভাবে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্তরা হিংসা, বিদ্বেষ, শক্রতা, ঘৃণা ইত্যাদি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে। অতএব যারা মহান আল্লাহর প্রিয় হতে চায়, জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়, তাদের উচিত, অন্তরে যেন এসব রোগ-ব্যাধি বাসা বাঁধতে না পারে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকা। পরিশুদ্ধ অন্তর গঠনে সচেষ্ট হওয়া।
Leave a Reply