ফেনী প্রাণিসম্পদ দপ্তরে জনবল সংকটে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, মার্চ ৫, ২০২৪
  • 71 পাঠক

দিশারী ডেস্ক।০৫ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

পশুচিকিৎসক সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ফেনীর প্রান্তিকপর্যায়ের খামারি ও পশুপালনকারীরা। ছয় উপজেলার পাঁচটিতেই কোনো চিকিৎসক নেই, দপ্তরগুলোতে ৮৩ পদের বিপরীতে ৩৫টি পদই রয়েছে শূন্য। জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকমে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, রোগাক্রান্ত গরু-ছাগল নিয়ে এসে চিকিৎসকের অভাবে তাদেরকে ফিরে যেতে হয়। আর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শূন্যপদে পদায়ন না হওয়ায় চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যেতে তাদের হিমশিম খেতে হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, ছয় উপজেলার মধ্যে শুধুমাত্র ফুলগাজী উপজেলায় ভেটেরিনারি সার্জন আছেন। বাকি উপজেলাগুলোতে কোনো সার্জন নেই। যেসব পদে লোকবল নেই সেসব পদে নিয়োগ দেওয়া হলে আমাদের সার্বিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে।

সরেজমিনে ফেনী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে আসা অসুস্থ পশুর চিকিৎসা দিচ্ছেন উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) মো. ছাদেক মজুমদার। তিনি বলেন, চিকিৎসক না থাকায় আমি বাড়তি দায়িত্ব পালন করছি। ভেটেরিনারি সার্জন থাকলে আমাকে পশুর চিকিৎসা করতে হতো না। তিনজনের দায়িত্ব একজন পালন করতে গেলে সমস্যা তো হবেই। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ করা গেলে সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি কাজের পরিধিও বাড়বে।

জনবলসংকটের কারণে প্রান্তিকপর্যায়ে সেবা কার্যক্রম সম্ভব হয় না, ফলে কোনো কোনো এলাকার মানুষ প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কার্যক্রম সম্পর্কেই জানেন না। মাঠপর্যায়ে খামারি ও পশুপালনকারীদের সঙ্গে কথা বললে এ বিষয়টি ওঠে আসে।

গত ১৫ বছর ধরে বাড়িতে গরু পালন করছেন জাহিদ হোসেন।যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় গ্রাম্যচিকিৎসক এনে টাকা দিয়ে চিকিৎসা করান। সরকারি পশুচিকিৎসকের কাছ থেকে বিনামূল্যে সেবা পাওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। এভাবে বাড়িতে পশু পালনে নিজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি।

ফেনী সদরের ধর্মপুর মা ডেইরি ফার্মের মালিক মাজারুল হক সুমন বলেন, আমার খামারে ১৫টি গরু রয়েছে। এসব গরু অসুস্থ হলে বাইরে থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করাতে হয়। প্রাণিসম্পদ দপ্তরে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। সরকারিভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া গেলে খরচের পরিমাণ কম হতো। প্রাইভেট চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা দেয়ার কারণে খরচ বেশি। যদি সরকারি চিকিৎসক পেতাম তাহলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যেত।

ছাগলনাইয়া উপজেলার ছোট খামারি কামাল মোকতার বলেন, ‘আমার ৮টি গরু ও ৫টি ছাগল রয়েছে। রোগবালাই সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকায় প্রায় সময় পশু হাসপাতালে আসা হয়। সেখানে ভালো কোনো পশু চিকিৎসক নেই। একজন আছে, তিনি কিছু ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু সরকারি কোনো ওষুধ দেন না। আমাদের বাইরে থেকে কিনতে হয়। সরকারিভাবে ওষুধগুলো পাওয়া গেলে অনেক উপকার হত।’

শহরের একাডেমি এলাকার বাসিন্দা জহির উদ্দিন বলেন, হাসপাতাল থেকে ভ্যাকসিনগুলো দেয়া হয়। অন্য ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। চিকিৎসক না থাকায় স্বয়ং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজেই চিকিৎসা দিয়েছেন। চিকিৎসক থাকলে আমরা আরও ভালো সেবা পেতাম।

সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের পোলট্রি খামারি ইয়াসিন শরীফ বলেন, এ অঞ্চলটি পশু পালনের উপযুক্ত স্থান হওয়ায় এখানে অনেক পোলট্রি খামারি রয়েছেন। এখানে উৎপাদিত মুরগি দিয়ে পুরো জেলার চাহিদা পূরণ করা হয়। কিন্তু উপজেলায় প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসক না থাকায় আমরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছি না। বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। যথাসময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়া গেলে বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।

যোগাযোগে দূরত্বের কারণে ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর প্রাণিসম্পদ বিভাগের সেবা বঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষ। সরকারি ওষুধ, চিকিৎসা, প্রজনন সেবাসহ কোনো সেবাই পাচ্ছে না দেড় লাখেরও বেশি গবাদিপশু। এতে বেসরকারি বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চড়া দামে সেবা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন পশু পালনকারীরা।

ফেনী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শহীদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১১টি পদের মধ্যে ভেটেরিনারি সার্জন, কম্পাউন্ডার ও ড্রেসারসহ তিনটি পদই শূন্য। পশুচিকিৎসা সম্পর্কিত প্রধান তিনটি পদে কোনো জনবল না থাকার পরেও আমরা সেবা প্রত্যাশীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। প্রান্তিক পর্যায়ের পশু পালনকারী ও খামারিদের আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া টিকাদান কার্যক্রমে গুরুত্ব দেয়ায় আগের চেয়ে অনেক রোগবালাইয়ের সংক্রমণ থেকে পশুপাখি রক্ষা পাচ্ছে।

জেলায় চলমান কার্যক্রম প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হক বলেন, বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পশু পালনের বিষয়ে খামারিদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠপর্যায়ের প্রাণিসম্পদ বিভাগ কাজ করছে। এ ছাড়া গবাদিপশুকে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই থেকে রক্ষা করার জন্য টিকাদান, কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!