ফেনী নদীতে বালি উত্তোলনে হুমকির মুখে বসতি

  • আপডেট সময় শনিবার, এপ্রিল ১, ২০২৩
  • 179 পাঠক

দিশারী ডেস্ক

————

যত্রতত্র বালি তোলায় ফেনী নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোয় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। আর হুমকির মুখে পড়েছে জনপদের করুণ বসতি। ইজারাবিহীন অবস্থায় অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর তীরঘেঁষা মানুষগুলো।

নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোয় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি মহল। এরই মধ্যে অনেক কৃষকের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়া বালিমহাল নিয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার পর এ বিষয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

জানা যায়, বালি তোলার প্রতিবাদে স্থানীয়রা এরই মধ্যে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বালি উত্তোলন করায় প্রায় ২০০ একর ফসলি জমি এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়েছে, যে কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে মীরসরাইয়ের মানচিত্র।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে ফেনী নদীর কোলঘেঁষে পশ্চিম জোয়ার, কাটাগাং ও হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মধ্যম আজম নগর এলাকায় হিঙ্গুলী খালের মুখে ফেনী নদীর মোহনায় ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি তোলা হচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ বালি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয়রা কিছু বলার সাহস পান না। বৈধ ইজারাদারের মধ্যে নাঙ্গলমোড়া, কাটাপশ্চিম জোয়ার, হিঙ্গুলী, পশ্চিম জোয়ার, মোল্লাঘাটায় থাকলেও বেশিরভাগ ড্রেজার মালিক অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছেন।

জোসনা বেগম (৬০), অহিদের নবী (৬২), ছায়েরা খাতুন (৫০), জসিম উদ্দিন (৪২) ও নুর উদ্দিনসহ (৪৬) একাধিক ভুক্তভোগী জানান, প্রায় দেড় বছর ধরে ফেনী নদীর শুভপুর অংশে বালি উত্তোলন চলছে। লিজকৃত জায়গা ছাড়াও অবৈধ স্থান থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে নদীর পাড় ভেঙে কৃষিজমি বিলীন হচ্ছে।

বালি উত্তোলনে ফেনী নদীর চট্টগ্রাম অংশ দুই ভাগে ইজারা দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। মিরসরাই উপজেলার অলিনগরের মোল্লাঘাট ইজারা নেয় আবুল হোসেন এন্টারপ্রাইজ। অন্যদিকে করেরহাটের জালিয়াঘাট ইজারা নেন করেরহাট আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান গিয়াস উদ্দিন। ইজারা নিয়ে তারা নদী ছাড়াও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন ফসলি ও সরকারি জমি থেকে বালি তুলে নেয় বলে অভিযোগ ওঠে, যা নিয়ে ইজারাদারদের সঙ্গে ছাগলনাইয়ার একটি পক্ষের বিরোধ চলছিল।

এদিকে অবৈধ বালি উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল চৌধুরী ও করেরহাটের আওয়ামী লীগ নেতা কামরুলের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয় মেম্বার আনোয়ার হোসেন পলাশসহ এলাকাবাসী অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় থানা প্রশাসন একটি কাটার ও একটি বোট জব্দ করে। পরে কামরুলের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়।’

অন্যদিকে ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবরে ফেনী নদীতে বালি উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকনসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। আহত অন্য দুজন হলেন হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা অসোক সেন (৪২) ও যুবলীগ কর্মী সায়েদ খান দুখু (৩৫)। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে একাধিক মামলা করা হয়। পরে স্থানীয় ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের তত্ত্বাবধানে মামলাটির নিষ্পত্তি হয় এবং উভয় গ্রুপের সংঘাত দূর হয়।

২০২৩ সালের শুরুতে কোনো ধরনের সংঘাত না হলেও রমজানের এক সপ্তাহ আগে থেকে আবার নিয়মিত গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গত ২৭ মার্চ ১৫ থেকে ২০ জন অজ্ঞাত অস্ত্রধারী বালি উত্তোলোনের স্থানে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা না হলেও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পাশেই বিজিবি ক্যাম্প থাকায় ধাওয়ায় গোলযোগকারীরা পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলামকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন, তার কোনো অস্ত্রধারী ক্যাডার নেই। তবে যে বা যারা তার নামে এসব কথা প্রচার করছে, তারা ভুল কথা বলছে। তাছাড়া আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়ায় একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে অপ্রচার করছে বলে তিনি দাবি করেন।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ অস্ত্রধারীদের ধাওয়ার বিষয়ে অলিনগর বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার সহিদুল ইসলাম জানান, তাদের ধাওয়া খেয়ে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। তবে তিনি কোনো সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করতে পারেননি বলে জানান।

ছাগলনাইয়া ইউএনও মৌমিতা দাস জানান, একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে বালি উত্তোলনকারীদের দমন করতে পারেননি। অভিযান চলাকালে তারা বোট ও কাটার নিয়ে পালিয়ে যায়। অভিযান থেকে ফিরে আসার প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর তারা আবার এসে বালি উত্তোলন করে।

ছাগলনাইয়া থানার ওসি সুদীপ রায় পলাশ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তবে ঘটনাটি মিরসরাইয়ের করেরহাট অংশে হওয়ায় ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের এখতিয়ারে ছিল না। তাই তারা কোনো অ্যাকশনে যেতে পারেননি। তবে অস্ত্রধারীরা বিজিবির ধাওয়া খেয়ে ছাগলনাইয়ার শুভপুরে পালিয়ে যায় বলে যে অভিযোগ এসেছে, তার সত্যতা পেলে সন্ত্রাসীদের আটকের জন্য অভিযান চালানো হবে।

 

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!