পাপপ্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ

  • আপডেট সময় সোমবার, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
  • 60 পাঠক

মোহাম্মদ সাইফুল মিয়া। ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

মহান আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে মানুষের স্থান সর্বশ্রেষ্ঠ। মানুষের রয়েছে বিবেক ও বুদ্ধির প্রাবল্য, যা অন্য কোনো জীবের নেই। এই পৃথিবীতে মানুষের পাপ ও পুণ্যের সক্ষমতা আছে। যদিও কোরআনে আল্লাহ পাপ-পুণ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, তবু মানুষের প্রবৃত্তি তাকে পাপের দিকে টানে। প্রবৃত্তির অনুসরণে মানুষের মনুষ্যত্ব লোপ পায় এবং পশুত্ব বৃদ্ধি পায়। তাই বলা হয়, প্রবৃত্তির অনুসরণ অত্যন্ত নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য। বিভিন্ন কারণে মানুষ প্রবৃত্তির অধীন হয়ে পাপের পথে পা বাড়ায়।

এখানে এ নিয়ে আলোচনা করা হলো :

১. দিকনির্দেশনার অভাব :

প্রতিটি শিশু নিষ্পাপ অবস্থায় জন্ম নেয়। মা-বাবা, পরিবার ও পরিবেশের প্রভাবে ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা গড়ে ওঠে। একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শৈশব থেকে পরিবারের পক্ষ থেকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক সন্তান ইসলামী ফিতরাতের ওপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মা-বাবা তাকে ইহুদি, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে। (বুখারি, হাদিস : ১৩৫৮; মুসলিম, হাদিস : ২৬৫৮)।

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) শিশুদের প্রতি স্নেহ, ভালো ব্যবহার, সদাচরণ ও শিষ্টাচার শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। অতএব, অভিভাবকদের উচিত শৈশব থেকেই শিশুদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা।

২. সঙ্গী নির্বাচনে অসর্তকতা : মানুষ সামাজিক জীব। বলা হয়, সঙ্গী ছাড়া মানবজীবন অতিবাহিত করা সম্ভব নয়। ভালো সঙ্গী জীবনকে সাফল্যের দিকে পরিচালিত করে এবং কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করে। অন্যদিকে খারাপ সঙ্গী মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও আচরণ নষ্ট করে। ফলে মানবজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই ইসলাম বন্ধু নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ মুমিনরা যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২৮)

৩. দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা : দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা সব পাপের মূল। মানুষের মনে দুনিয়ার মোহ আল্লাহকে ভুলিয়ে দেয় এবং তাকে পাপ কাজে লিপ্ত করে। তাই মুমিন ব্যক্তির দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, টাকা-পয়সার পূজারিরা ধ্বংস হোক। পোশাকবিলাসী ধ্বংস হোক। তাকে দিতে পারলে খুশি হয়, দিতে না পারলে রাগান্বিত হয়। (মিশকাত, হাদিস : ৫১৬১)

৪. ইসলামী জ্ঞানের স্বল্পতা :

ইসলামী শিক্ষা মানুষের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মানবিক গুণাবলি জাগিয়ে তোলে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের সমাজে আমরা ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছি। দুনিয়াবি শিক্ষার জন্য আমরা যত অর্থ ও সময় ব্যয় করি, ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে তার সামান্যতম করি না। এ কারণে আমাদের ছেলে-মেয়ে ও ভাই-বোন পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ছে।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৬৫৩)

৫. পরিণাম সম্পর্কে অজ্ঞতা :

প্রবৃত্তির অনুসরণে অস্থায়ী এই দুনিয়ায় ক্ষণস্থায়ী লাভবান হওয়া যায়, কিন্তু এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়ংকর। প্রবৃত্তির অনুসরণে হাশরের ময়দানে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে, যে ইসলাম গ্রহণ করল এবং তাকে প্রয়োজনমাফিক রিজিক প্রদান করা হলো এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট রেখেছেন। (মিশকাত, হাদিস : ৫১৬৫)

পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি, মুসলিম উম্মাহকে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!