অন্যের প্রতি খারাপ ধারণা থেকে বেঁচে থাকে মুমিন

  • আপডেট সময় রবিবার, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
  • 77 পাঠক
মুফতি ইয়াসীন আরাফাত। ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

মানুষের প্রতি অযথা কোনো ধরনের খারাপ ধারণা করার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যের প্রতি খারাপ ধারণা থেকে বেঁচে থাকা মুমিনের কর্তব্য। এমনকি সমাজে কারো ব্যাপারে খারাপ ধারণা ছড়িয়ে পড়লেও তার প্রতি যথাসম্ভব ভালো ধারণা পোষণ করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘ হে মুমিনরা, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান পাপ।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)

হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ সাবধান! খারাপ ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকো। কেননা খারাপ ধারণা হচ্ছে বড় মিথ্যা। আর কারো বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি কোরো না। একে অপরের পতন বা ধ্বংস সাধন করে নিজের কল্যাণ কামনা কোরো না। একে অপরের পশ্চাৎ অবলম্বন কোরো না। একে অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ কোরো না।  তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই-ভাই হয়ে যাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৬)

——————————————————————————–

অন্যের প্রতি সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ

——————————————————————————–

মুমিনদের বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা রাখা কর্তব্য। আয়েশা (রা.)-এর ওপর একবার অপবাদ আরোপ করা হয়, তখন এ বিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহ বলেন, ‘ যখন তোমরা এ কথা শুনলে তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারীরা নিজেদের বিষয়ে কেন ভালো ধারণা করলে না এবং বললে না—এটা সুস্পষ্ট অপবাদ। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১২)

এই আয়াতে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে দ্বিন ও ঈমানের ভিত্তিতে সব মুমিন নর-নারী একান্তই আপনজন। কাজেই কোনো মুমিন নারী সম্পর্কে কোনো মন্দ প্রচারণা শুনলে আপনজন হিসেবে তাতে কর্ণপাত না করে তার প্রতি সুধারণা রাখতে হবে।(তাফসিরে তাওজিহুল কুরআন)

প্রকৃত মুমিন কখনো অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করে না ; বরং অন্যের মন্দ ধারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করে। কখনো কেউ মন্দ ধারণা করতে পারে, এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে ব্যাখ্যা করে স্পষ্ট করে দেয়া উচিত।

উম্মুল ‍মুমিনিন সাফিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) ইতিকাফে ছিলেন। রাতে আমি তাঁকে দেখতে এসেছিলাম। এরপর তাঁর সঙ্গে কথা বলে আমি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালাম। তিনিও আমাকে এগিয়ে দেয়ার জন্য দাঁড়ালেন। ওই সময় আনসারদের দুই ব্যক্তি আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করল।

যখন তারা নবী (সা.)-কে দেখল, দ্রুত চলে গেল। নবী (সা.) তখন তাদের ডাক দিয়ে বললেন, দাঁড়াও, অসুবিধা নেই। সে আমার স্ত্রী সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই। তারা উভয়ে তখন বলল, সুবহানাল্লাহ হে আল্লাহর রাসুল! (আপনার সম্পর্কে আমরা কখনো ধারণা-অনুমান করতে পারি না।) তখন রাসুল (সা.) বলেন, শয়তান রক্তপ্রবাহের মতো মানুষের তরে বিচরণ করে। (বুখারি, হাদিস : ২০২৫)

প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের সুধারণামূলক মনোভাব থাকা আবশ্যক। কেননা অপরের ওপর ভালো ধারণা পোষণ করা পুণ্যে পরিণত হয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘ সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮০৩৬)

পরিশেষে বলা যায়, সুধারণা পোষণ উন্নত চরিত্রের ভূষণ। অন্যের সম্পর্কে সুধারণার ফলে পারস্পরিক ভুল-বোঝাবুঝির অবসান সম্ভব। ফলে সমাজের দ্বন্দ্ব-কলহ নিঃশেষ হয়ে ভ্রাতৃত্ববোধ অটুট হয়। দৃঢ় হয় সামাজিক বন্ধন।

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!