পবিত্র কোরআনে এতিমদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৪, ২০২৪
  • 41 পাঠক

আহমাদ ইজাজ
২৪ অক্টোবর, ২০২৪

এতিম শব্দের অর্থ নিঃস্ব ও নিঃসঙ্গ। বাংলা অভিধান মতে, মাতা-পিতাহীন বালক-বালিকাকে এতিম বলা হয়। ইসলামী পরিভাষায়, যে শিশুর পিতা ইন্তেকাল করেছেন, শুধু তাকে এতিম বলা হয়। পিতা উপস্থিত থাকা অবস্থায় মাতাবিহীন শিশুকে ইসলামী পরিভাষায় এতিম বলা হয় না।

কেননা সন্তানের লালন-পালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব পিতার। তাই শিশু তখনই নিঃস্ব ও নিঃসঙ্গ ধরা হবে, যখন পিতা থাকবে না।

মাতার অবর্তমানেও এ দায়িত্বভার পিতার ওপর অর্পিত। তাই মাতাবিহীন শিশু নিঃস্ব ও নিঃসঙ্গ নয়।

আর সন্তান যখন বালেগ হয়ে যায়, তখন তাকে এতিম বলা হয় না। কেননা সে তখন স্বনির্ভর। এতিম সম্পর্কে ইসলাম শুধু নৈতিক নির্দেশনামা দেয়নি, বরং এতিমের প্রশাসনিক ও আইনগত অধিকারের ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে। এর বিস্তারিত বিবরণ আছে হাদিস ও ফিকহের কিতাবে।

পবিত্র কোরআনে এতিমের কথা

এতিমের দায়িত্ব গ্রহণে মর্যাদা ও নির্দেশনা সম্পর্কিত আয়াতগুলো পবিত্র কোরআনে অনেক। এক আয়াতে এসেছে, ‘তারা তোমাকে এতিম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলে দাও, তাদের ইসলাহ তথা সুব্যবস্থা (পুনর্বাসন) করা উত্তম…।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২২০)

অর্থাৎ আপনি যদি তাদের উন্নয়নে কল্যাণমূলক কিছু করতে চান, তাহলে তাদের ইসলাহ তথা সার্বিক দেখভালের সুব্যবস্থা করুন। যারা এতিমের প্রতি অবিচার করে আল্লাহ তাআলা তাদের ভর্ত্সনা করে বলেন, ‘অসম্ভব, (কখনোই নয়) বরং তোমরা এতিমের সম্মান রক্ষা করো না।’ (সুরা : ফজর, আয়াত : ১৭)

মক্কার কুরাইশরা এতিমদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করত। পিতা মারা গেলে চাচা এসে ভাতিজার সমুদয় সম্পদ আত্মসাৎ করে নিজ উদরে হজম করে ফেলত। আল্লাহ তাআলা তাদের এই মন্দ কর্ম নিষিদ্ধ করেন। এতিম ও অনাথকে ধমক দেওয়াও ইসলামে নিষিদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি এতিমের প্রতি কঠোর হয়ো না।’ (সুরা : দুহা, আয়াত : ৯)

এতিমদের প্রতিপালন, তাদের পুনর্বাসন ইত্যাদি হতে হবে নিঃস্বার্থে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও (আল্লাহর ভালোবাসায়) অভাবী, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে। (এবং তারা বলে) কেবল আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদের আহার্য দান করি। বিনিময়ে তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না।’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ৮-৯)

হাদিসে এতিমের কথা

সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব—তিনি তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন। এবং এ দুটির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩০৪)

আমাদের করণীয়

এতিম শিশুদের জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা দরকার। তাদের কাউন্সেলিং সম্পন্ন করা জরুরি। মনঃসামাজিক সহায়ক সেল গঠন করে সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বিশেষ আনন্দময় শিক্ষাদান পদ্ধতি নিশ্চিত করা আবশ্যক। বড় শিশুদের জন্য অনানুষ্ঠানিক স্বল্পমেয়াদি শিক্ষা চালু করে তাদের জন্য সময়োপযোগী বাস্তবমুখী কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়।

এতিম, অনাথ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বেশির ভাগই কোনো না কোনোভাবে মাদকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে পড়ে। তাই এই শিশুদের মাদকাসক্তি চিকিৎসার জন্য প্রতিটি সেবাকেন্দ্রে বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা দরকার। শিশু হোমে পাঠানোর আগেই তাদের মাদকাসক্তি চিকিৎসা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এতিম, অনাথ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পরিচয় ও ঠিকানা অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। অনেক সময় শিশুরা পিতা-মাতার নাম বলতে পারে না। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি শিশুর জন্ম নিবন্ধন, অভিভাবকত্বসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আইনি বাধা অপসারণ করা জরুরি।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!