দিশারী ডেস্ক।। ২৫ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।।
নোয়াখালীতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় নির্বাচনের একটি বিশুদ্ধ আবহ তৈরীর আহবান জানান জেলার সচেতন নাগরিকেরা। একটি অর্ন্তবর্তী সরকারের একটি বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সন্ত্রাসীদের হাতে সেসব অস্ত্র রক্ষিত থাকায় তারা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সন্ত্রাস, কেন্দ্রদখল এবং সর্বোপরি নির্বাচনকে একতরফা ও দলীয়ভাবে প্রভাবিত করতে প্রতিটি সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যপদের প্রার্থীরা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। এসব অস্ত্রের ব্যবহার কোথাও দরকার না হলেও দলের সেসব নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরা নিজেদের জাহির করতে মিছিল, সভা, সমাবেশে সেসব অস্ত্র প্রকাশ্যে প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের ক’দিন আগে সেসব অবৈধ অস্ত্রের রোষানলে দলের সদর উপজেলার একজন কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লুটতে নাটক সাজিয়েছিল সে সময়ের সংসদ সদস্য পদের এক প্রার্থী একরামুল করিম। বিপরীতে বিএনপির শত-শত নিরপরাধী লোকজনকে হত্যা মামলায় জড়িয়ে মাঠ ছাড়া করা হয়েছিল।
অপরদিকে, বিভিন্ন সময়ে নোয়াখালী শহরে সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পদের আরেক প্রার্থী এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার কোন্দলের সময়েও একরামুল সমর্থকরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে শহরে মিছিল করতে দেখা গেছে। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলিরও ব্যবহার করেছে তারা।
একইভাবে, ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট, নোয়াখালী শহরের টাউন হল মোড় এলাকায় জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনকারীদের ওপরও প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চড়াও হতে দেখা গেছে ও তার সমর্থকেরা।
সূত্র জানায়, এসব অস্ত্র আজো আওয়ামী লীগের কথিত সেসব নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের দখলে রয়েছে। ফলে তা আরেকটি পর্যায়ে এ সরকার কিংবা যে কোন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জেলার সচেতন নাগরিকেরা।
এদিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জেও এমন অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানী দেখা গেছে প্রকাশ্যে। সেখানেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকেই এসব অস্ত্রের ব্যবহার ও প্রদর্শনী দেখানোয় ছিল অনেকটাই হরহোমেশা।
বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক ভাগের নের্তৃত্ব দেন খোদ ওবায়েদুল কাদেরের ছোটভাই আবদুল কাদের মীর্জা। আরেক ভাগে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল। এ দুগ্রুপের মধ্যে আন্ত:দ্বন্ধে বেশ ক’মাস স্থায়িত্ব পায় লাশ ও রক্তের হোলিখেলা। সে সময়ে দু’পক্ষের কাছে মজবুত হয় প্রচুর পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র।
বসুরহাটে অস্ত্রের প্রকাশ্য ব্যবহারে সেখানকার স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কর্মী নিহতও হয়েছিল। অন্যদিকে, এক শুক্রবারে দু’পক্ষের প্রকাশ্য বিরোধে দিনে-দুপুরে ছবি তুলতে গিয়ে অস্ত্রের মুখে প্রাণ হারায় মোজাক্কের হোসেন নামের একজন স্থানীয় সাংবাদিক।
এরপরও দলের সেসব অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে পলাতক হাসিনার সরকার কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে সেসব অস্ত্র এখনো রয়েছে রক্ষিত ও হাতে হাতে।
—————————————————————————————————————–
যে কারণে সমাজের সচেতন নাগরিকেরা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করে বলেন, এখনো সেসব অস্ত্রবাজেরা এসব অবৈধ অস্ত্র দেশে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই কাজে ব্যবহার করছে। যে কারণে তারা মনে করেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতায় রুপান্তর করতে দেশের আনাছে-কানাছে থাকা অস্ত্রবাজদের হাতে রক্ষিত অস্ত্রসমূহ উদ্ধারকরণ খুবই জরুরী।
Leave a Reply