আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন—তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাকো। কেননা মিথ্যা উপনীত করে পাপাচারে। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এভাবে একসময় আল্লাহর কাছে সে চরম মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬০৭)। আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষকে মিথ্যার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং মিথ্যা পরিহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
যেসব মিথ্যার ব্যাপারে মানুষ অসচেতন : এমন কিছু মিথ্যা রয়েছে, যাকে সমাজের মানুষ মিথ্যা মনে করে না, অথচ এগুলো মিথ্যা এবং তা বললে মিথ্যা বলার পাপ হয়। এমন কিছু মিথ্যার পরিচয় তুলে ধরা হলো—
১. যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো কথা বলে বেড়ান : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কারো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা শোনে (কোনো বাছ-বিচার ছাড়া) তাই প্রচার করতে থাকে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯২)
২. গণমাধ্যমে অসত্য প্রচার : গণমাধ্যমে অসত্য বা অর্ধ-সত্য প্রচার করা, মানুষকে বিভ্রান্ত করা মিথ্যাতুল্য অপরাধ। মেরাজের রাতে রাসুল (সা.)-কে বিভিন্ন অপরাধীদের শাস্তি দেখানো হয়—এক লোক বসা, পাশে আরেকজন দাঁড়ানো। তার হাতে লোহার পেরেক। লোহার পেরেক দিয়ে এই লোক পাশের লোকটির চোয়ালে আঘাত করে এবং পেরেকটি তার চোয়ালে ঢুকিয়ে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যায়। তারপর একইভাবে অপর চোয়ালে আঘাত করে। ততক্ষণে আগের চোয়াল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং সে আবার আঘাত করতে থাকে। এ ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়—সে ছিল মিথ্যাবাদী। মিথ্যা বলত এবং তা প্রচার করত। ফলে তার বলা মিথ্যা প্রচার হতে হতে দিগদিগন্তে ছড়িয়ে পড়ত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩৮৬)
৩. মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে কোনো মুসলমানের হক বিনষ্ট করল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে দেবেন এবং জান্নাত তার ওপর হারাম করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৭)
৪. ব্যবসায় মিথ্যা : মিথ্যা বলে গ্রাহককে প্রলুব্ধ করা মিথ্যা। হাদিসে এসেছে, ‘এটা অনেক বড় খেয়ানত যে তুমি তোমার ভাইকে কোনো কথা বলছ, সে এটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করছে অথচ তুমি এতে মিথ্যাবাদী।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৭১)
৫. মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া : মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া মুনাফিকির নিদর্শন। হাদিসে এসেছে, ‘মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি; কথা বললে মিথ্যা বলে। ওয়াদা করে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৯)
৬. শিশুদের সঙ্গে মিথ্যা বলা : বাচ্চাদের মন ভোলানো বা তাদের কান্না থামানোর জন্য তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও প্রলোভন দেওয়া মিথ্যার নামান্তর। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো শিশুকে বলল, এসো তোমাকে (এটা-সেটা) দেব। তারপর দিল না; এটিও একটি মিথ্যা।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৯৮৩৬)
৭. ঠাট্টার ছলে মিথ্যা বলা : নবী করিম (সা.) বলেন, ‘ধ্বংস তার জন্য, যে মানুষকে হাসানোর জন্য কথা বলার সময় মিথ্যা বলে! ধ্বংস তার জন্য! ধ্বংস তার জন্য!’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৯০)
Leave a Reply