নোয়াখালীর উপকূলে বিপন্ন ডাহুক

  • আপডেট সময় শনিবার, নভেম্বর ৬, ২০২১
  • 613 পাঠক

দিশারী ডেস্ক

————

‘রাত্রিভর ডাহুকের ডাক…এখানে ঘুমের পাড়া, স্তব্ধদীঘি অতল সুপ্তির। দীর্ঘ রাত্রি একা জেগে আছি। ছলনার পাশা খেলা আজ পড়ে থাক, ঘুমাক বিশ্রান্ত শাখে দিনের মৌমাছি, কান পেতে শোনো আজ ডাহুকের ডাক।…’ কবি ফররুক আহমেদের কবিতার মতোই গভীর রাতেও শোনা যায় ডাহুকের ডাক। সে ডাকে অনেকের ঘুম ভাঙে।

তবে আজকাল আর ডাহুকের কণ্ঠ শোনা যায় না। এক সময় বর্ষা ও শরতে ডাহুক পাখি নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার বাড়িতে গৃহপালিত হাঁস-মুরগির সঙ্গে বেড়াত। এখন আর তাদের আনাগোনা চোখে পড়ে না। দৃষ্টিনন্দন ডাহুক পাখি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

ডাহুক খুব সতর্ক পাখি। আত্মগোপনে পারদর্শী। পাখিটি খুব ভীরু। দেখতে খুব সুন্দর। পুকুর, খাল, জলাভূমি, বিল বা নদীর তীরে গর্ত করে বসবাস করে। মাত্র এক দশক আগেও আমতলীসহ উপকূলের খাল, বিল-ঝিল, ডোবা, নালা-পাশের ঝোপঝাড়ের ভেতরে, গাছের ঝোপযুক্ত ডালে দলবেঁধে বাস করত ডাহুক পাখি। আর নিরাপত্তা পেলে মাটিতেও বাসা করে এ পাখি। পাঁচ থেকে ছয়টি ডিম পাড়ে এরা, ডিমের রং ফিকে হলুদ বা গোলাপি আভা। বর্ষাকাল এদের প্রজনন ঋতু। মা ডাহুকের সঙ্গে বাবা ডাহুকও ডিমে তা দেয়। বাচ্চার রং সবসময় হয় কালো। ডিম ফোটে প্রায় ২১ থেকে ২৪ দিনে। আর ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টা পরই বাচ্চারা বাসা ছাড়ে।

মাস তিনেক পরে বাচ্চা ডাহুক আলাদা জীবন বেছে নেয়। প্রজননের সময় একটি পুরুষ ডাহুক অন্য পুরুষ ডাহুককে সহ্য করতে পারে না। দেখলেই তারা মারামারি করে। এই পাখি লড়াকু প্রকৃতির।

ডাহুকের খাদ্য জলজ পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ। এছাড়াও শাপলা-পদ্ম ফুলের নরম অংশ, কচি পানিফল, জলজ শেওলা, লতাগুল্মের নরম অংশ, ধান, কাউন, ডাল, সরিষা, শামুক, কেঁচো, জোঁক, মাছ, ছোট মাছ, শাকসবজি ও ফল খেয়ে থাকে।

বর্তমানে ডাহুকের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। খাদ্য সংকট ও প্রজননকালীন শিকারিদের উৎপাতে হারিয়ে যাচ্ছে এই পাখি। গভীর বনজঙ্গলেও এখন শিকারিদের হানা। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।

জেলার সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের আবু তাহের মিয়া বলেন, ডাহুক বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দেখা মেলে। ঝোপঝাড়ের আড়াল ধ্বংসের ফলে ডাহুকের আবাসস্থল হুমকিতে।

নোয়াখালী জেলা বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন, ‘প্রকৃতিকে সুন্দর রাখতে পাখপাখালিকে নিরাপত্তা দিতে হবে। কোথাও পাখি আটকের খবর পেলে আমরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে থাকি।’

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!