নিরীহ ও নিরপরাধী মানুষদের গ্রেপ্তার বন্ধ হোক 

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৩
  • 173 পাঠক

——————————————————————————————–

হরতাল–অবরোধের বিকল্প বের করতে হবে ?

———————————————————————————————

মতামত। ২৩ নভেম্বর, ২০২ ৩ খ্রিস্টাব্দ।

নোয়াখালী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়ন থেকে ইতোমধ্যে বিএনপির অনেক নেতা,কর্মীকে গ্রেপ্তার করে আসামীর তালিকা দীর্ঘায়িত করছে নোয়াখালীর পুলিশ। এ বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ। তারা বলেছেন, গত ক’দিনে আবদুল লতিফ, আবদুর রহিম (মেম্বার), ব্যবসায়ী স্বপনসহ যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা নিচক একটি অরাজনৈতিক কর্মধারার চিত্র।

স্থানীয়রা জানান, বিএনপির আন্দোলন শুরু হওয়ার পর গ্রেপ্তারকৃতদের অনেকেই নোয়াখালী শহরেও ওঠেননি। তবুও, জেলা শহরের কতেক বিচ্ছিন্ন ঘটনায় এসব নিরীহ ও নিরপরাধী মানুষগুলোকে আসামী হিসেবে চালান করা হয়েছে। এতে দৈনন্দিন জীবন সংসারের নানা টানাপোড়নের শিকার হচ্ছেন তাদের পরিবার। বেড়ে গেছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।

জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা অভিযোগ করেন, ” মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করা কোন সরকারের কাজ নয়। এভাবে কোন সুস্থ্য সমাজ চলতে পারেনা।

তিনি বলেন, বিএনপি তো পরিষ্কার জানিয়েছে, আমরা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবোনা। আমরা রাষ্ট্রবিরোধী কোন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডেও জড়িত নই। তবুও সরকার মনের ভয়ে বিএনপির নেতা, কর্মীদের ওপর দীর্ঘদিনের লালিত কালাকানুন খনন করছে।”

বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে বাসে-ট্রেনে-ট্রাকে আগুন দেয়ার খবর রয়েছে। অন্যদিকে আন্দোলন মোকাবেলার নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাইকারিহারে গ্রেপ্তার করছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের। দুটি ঘটনাই উদ্বেগজনক।

সরকারি দলের উসকানি সত্ত্বেও ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর কর্মসূচি ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। ওই দিন নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি আহূত সমাবেশটি কেন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হতে পারল না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। সেদিন বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে পারলে হয়তো রাজনীতির গতিপথ ভিন্ন হতো।

২৮ অক্টোবরের পর আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, একদিকে সন্ত্রাসী ঘটনার দায়ে সরকার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। সন্ত্রাস-অগ্নিসংযোগের অভিযোগে তঁাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে যতজনকে আসামি করা হয়, অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা থাকে তার কয়েক গুণ। এমনকি পুলিশ অভিযানকালে উদ্দিষ্ট নেতাকে না পেয়ে তাঁর আত্মীয়স্বজনকে পাকড়াও করে আনার ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে বিএনপির কতজন নেতা গ্রেপ্তার হলেন, পুরোনো মামলায় কতজন শাস্তি পেলেন, তার পরিসংখ্যান প্রকাশ পাচ্ছে।

অন্যদিকে সরকারের গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিরোধী দল একের পর এক হরতাল-অবরোধ পালন করছে। আমাদের দেশে এসব কর্মসূচিকে গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবেই দেখা হয় এবং যখন যারা বিরোধী দলে থাকে, তারা এর যথেচ্ছ ব্যবহার করে।

গণতান্ত্রিক সমাজে হরতাল-অবরোধ পালনের অধিকার যেমন সবার আছে, তেমনি পালন না করার অধিকারও। হরতাল-অবরোধ পালনের নামে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ কিংবা রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্ট করার মহড়া চলতে পারে না।

বিরোধী দলের নেতাদের দাবি, তাঁদের কোনো কর্মী বাসে, ট্রেনে ও ট্রাকে আগুন দেয়ার সঙ্গে জড়িত নন। বিরোধী দলের ওপর দায় চাপাতে সরকারি দলের কর্মীরাই এসব অপকর্ম করে থাকেন। ইতোমধ্যে যেসব খবর ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তাঁদের দাবি পুরোপুরি সত্য বলা যাবে না।

দ্বিতীয়ত, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো তাদের এই হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি কত দিন চালিয়ে যাবে, সেই প্রশ্নও আছে। হরতাল–অবরোধ পালন করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের যে মাঠে সক্রিয় থাকতে হয়, তা প্রায় অনুপস্থিত। দুই দিন পরপর ভার্চু্যয়াল সংবাদ সম্মেলন করে হরতাল-অবরোধ ডাকলে সেটি সফল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এই বাস্তবতায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে বিকল্প কর্মসূচির কথাই ভাবা উচিত। অকার্যকর কর্মসূচি কেবল আন্দোলনের লক্ষ্য পূরণেই ব্যর্থ হয় না, জনসমর্থন হারাতেও বাধ্য। ২৮ অক্টোবরের আগে বিরোধী দলের কর্মসূচিগুলো সফল হওয়ার কারণ, এর সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল।

কিন্তু হরতাল-অবরোধে সেটা ধরে রাখা যায়নি। সে ক্ষেত্রে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে কর্মসূচি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় কিংবা অর্থনীতির চাকা থমকে থাকে, এ রকম কর্মসূচির বিকল্প বের করতে হবে।

আবার সরকারকেও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পাইকারি গ্রেপ্তার অভিযান তথা দমন–পীড়নও বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দূরের কথা, একতরফা নির্বাচন করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!