স্বাস্থ্য ডেস্ক।১৮ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
ঝালজাতীয় খাবার প্রতিদিনই কমবেশি আমরা সবাই খাই। তবে কিছু কিছু মানুষ অতিরিক্ত ঝাল খেতে ভালোবাসেন, যা দেখলে অন্যদেরই হয়তো জিহ্বায় জ্বালাপোড়া শুরু হয়। তবে জানলে অবাক হবেন, ঝালজাতীয় খাবার শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বিভিন্ন রোগের সমাধান মেলে ঝাল খাবারে।
ঝাল ও মসলাদার খাবার খেলে জিহ্বার রিসেপ্টরগুলোতে জ্বলন্ত অনুভূতি হয়। যা মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিনের কারণে ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ খাবারের তুলনায় লাল মরিচ দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে মোট ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া যায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মরিচের রাসায়নিক যৌগ ক্যাপসাইসিনয়েড অন্যান্য স্বাদের খাবার যেমন- মিষ্টি, নোনতা ও চর্বিযুক্ত খাবারের লোভ কমাতে সাহায্য করে।
অনেকেরই ধারণা মসলাযুক্ত ঝাল খাবার স্বাস্থ্যকর নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝালজাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
যেসব কারণে ঝাল খাবার খাওয়া ভালো
স্থূলতা প্রতিরোধে
ক্যাপসাইসিনযুক্ত খাবার খাওয়ার তৃপ্তি বাড়ায়, ক্যালোরি ও চর্বির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ক্যাপসাইসিনযুক্ত খাবার খেলে শক্তি ব্যয় ও ফ্যাট টিস্যু অক্সিডেশন বাড়ে, যা ওজন বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। গবেষণা অনুসারে, জিরা, দারুচিনি, হলুদ ও মরিচের মতো মসলা আপনার বিপাকীয় হার বাড়িয়ে তুলতে পারে। এমনকি ক্ষুধাও কমিয়ে আনে।
এ ছাড়া নিয়মিত ঝাল খাবার খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য হয়। ঝাল খাবার খাওয়ার পর প্রায় ২০ মিনিট পর্যন্ত ক্যাপসিসিন শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদকে গলাতে থাকে। তাই তো চটজলদি ওজন কমাতে ঝাল জাল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
ক্যানসার প্রতিরোধ করে
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চের গবেষণা অনুসারে, ঝাল খাবারে থাকা ক্যাপসাইসিন ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করে।
সেই সঙ্গে ঝাল খাবার তৈরি করার সময় ব্যবহৃত হলুদ ও সরষের তেলও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গবেষণা অনুসারে হলুদ ও সরষের তেল ক্যান্সার সেলের গ্রোথ আটকাতে এবং টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা অনেকেই খাবারের স্বাদ বাড়াতে গোলমরিচ ব্যবহার করে থাকে। এই মশলাটিও ক্যান্সার প্রতিরোধে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। যদিও গবেষণায় ঝালজাতীয় খাবার খেলে ক্যানসার প্রতিরোধ হবে কি না এমন কোনো তথ্য নেই। তবে গবেষকরা ক্যাপসাইসিন ধারণকারী ওষুধের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছেন।
সর্দি-কাশি উপশম করে
মৌখিক গহ্বর ও গলায় থাকা ক্যাপসাইসিন শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক্টে তরল প্রবাহিত করে। তাই মসলাদার খাবার খেলে সর্দি, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, সাইনোসাইটিস ও হাঁপানি সমস্যার সমাধান ঘটে। এমনকি নাকের বন্ধভাব কিংবা কফ নির্গত আরো সহজ হয়।
আয়ু বাড়ে
হার্ভার্ড ও চায়না ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন দ্বারা পরিচালিত একটি বৃহৎ সমীক্ষা অনুসারে, সপ্তাহে ৩-৪ দিন মসলা ও ঝালজাতীয় খাবার খেলে মৃত্যুহার ১৪ শতাংশ কমে যায়।
হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দেশের নাগরিকরা বেশি মাত্রায় ঝাল খেয়ে থাকেন, তাদের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। কারণ ঝাল খাবার খেলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। সেই সঙ্গে হার্টের অন্দরে হওয়া ইনফ্লেমেশনও কমে। ফলে নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
সাইনাসের সমস্যা কমায়
ঝালজাতীয় খাবার খেলে সাইনাস কনজেশন কমে ও অনুনাসিক প্যাসেজগুলোর বন্ধভাব কেটে যায়। মরিচের মতো মসলাদার খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়, যা কার্যকরভাবে জ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এমনকি ফ্লুর লক্ষণগুলোও উপশম করতে পারে।
রাগের প্রকোপ কমে
বেশি মাত্রায় ঝাল-মশলা দেওয়া খাবার খেলে রাগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ঝাল খাবার খাওয়া মাত্র সেরোটোনিনের মতো হরমোনের ক্ষরণ বাড়তে শুরু করে। ফলে রাগের প্রকোপ কমতে থাকে।
মানসিক অবসাদের মাত্রা কমে
মানসিক অবসাদে দিন কাটতে থাকলে ঝাল খাবার খেতে পারেন। দেখবেন নিমেষেই মন ভালো হয়ে যাবে। কারণ এ ধরনের খাবার খাওয়া মাত্রই আমাদের মস্তিষ্কে সেরাটোনিন নামক ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে মন খারাপের কালো মেঘ কাটতে সময় লাগে না।
ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে
ঝাল খাবার খাওয়া মাত্র সারা শরীর গরম হয়ে যায়। ফলে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে আসতে সময় নেয় না। মরিচে থাকা ভিটামিন এ এবং সি-ও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে মজবুত করতে এবং সংক্রমণকে দূরে রাখতেও সাহায্য় করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে মসলাদার খাবার খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে প্রচুর পরিমাণে খাওয়া হলে, মরিচের মধ্যে থাকা জ্বলন্ত যৌগ ক্যাপসাইসিন আবার বিভিন্ন সমস্যার কারণও হতে পারে।
অতিরিক্ত ঝাল খাবার বমি বমি ভাব, বমি ও ডায়রিয়ার মতো তীব্র স্বল্পমেয়াদী লক্ষণগুলোর কারণ হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্রের অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে অন্ত্রের আস্তরণের তেমন কোনো স্থায়ী ক্ষতি হয় না।
সূত্র : বোল্ডস্কাই
Leave a Reply