দিশারী রিপোর্ট : গ্রামীন সভ্যতায় লেগেছে শহুরে হাওয়া। বিদ্যুৎ আর রাস্তাঘাটের উন্নয়নের ছোঁয়ায় গ্রামের যে কোন সরুগলিই এখন যেন শহুরে সমাজ। অবস্থাদৃষ্টে সব জায়গায় হয়ে গেছে দিনরাতের হাট-বাজার।
সর্বত্রই মিলছে সেকালের হাটে বেচাকেনার পণ্যসামগ্রী। যেকারণে শুধু নামেই টিকে আছে নোয়াখালীর সাপ্তাহিক হাটগুলো। হারিয়ে গেছে এর গৌবরগাঁথা ঐতিহ্য। হাটবাজারের একসময়ের বাজারজুড়ে হাঁটাচলার ঠেলাঠেলি আর শোরগোলের দৃশ্য এখন অনেকটাই অতীত। হাটগুলো এখন আর তেমন একটা জমে না।
নিত্যপ্রয়োজনীয় সওদাপাতি আর পণ্য বেচা-কেনার জন্য এখন তেমন একটা হাটে যান না কেউ। এলাকার মোড়ে-মোড়ে গড়ে ওঠা —দৈনিক বাজারগুলোতে সেরে নিচ্ছেন হাটের প্রয়োজনীয়তা। ফলে জৌলুস হারাচ্ছে এখানকার হাটগুলো।
—————————————————————–
ঐতিহ্য
—————————————————————-
জানা যায়, নয়টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নোয়াখালী জেলায় একসময় শতাধিক সাপ্তাহিক হাট বসতো। এসব হাটের মধ্যে পৌর এলাকার দত্তের হাটও ছিল অন্যতম। অবশ্য এ জেলার বাণিজ্যিক নগরী চৌমুহনীরও সেই পুরোনো দাপট এখন অনেকটা অতীত হয়ে গেছে। এখন আর সকাল সন্ধ্যে পাইকারী খরিদাররাও আগের মতো আসতে হয়না। মুঠোফোনই চলে ব্যবসায়িক লেনদেনসহ মালপত্রের চালানপত্রের কথোপকথন।
হাতিয়ায় আফাজিয়া বাজার, দাসের হাট, তমরুদ্দিন বাজার, সাগরিকা বাজার, ভুইয়ার হাট, সাহেবানী বাজার, ওছখালি বাজার, সুবর্ণচরের হারিছ চৌধুরী বাজার, খাসের হাট, ভুইয়ার হাট, আক্তার মিয়ার হট, জনতা বাজার, বাংলাবাজার, আবদুল্যাহ মিয়ার হাট, থানার হাট, ছমির মুন্সির হাট, সদরের নুরু পাটওয়ারি হাট, দুম্বা পাটওয়ারী বাজার, বাংলাবাজার, ওদার হাট, শান্তির হাট, ভাটিরটেক চৌমুহনী বাজার, ওয়াপদা বাজার, খলিফার হাট, দানা মিয়ার বাজার, দিনমনির হাট, বেগমগঞ্জের বাংলাবাজার, ছমির মুন্সি, একলাশপুর বাজার, সেনবাগের ছাতারপাইয়া, কানকির হাট, সোনাইমুড়ির আমিশাপাড়া, বাংলাবাজার, বজরা বাজার, চাটখিলের সোমপাড়া, আমিশাপাড়া, খিলপাড়া বাজার, কোম্পনীগঞ্জের বাংলাবাজার, চাপরাশির হাট, কবিরহাট, ভুইয়ার হাট, কালামুন্সি, শাহজীর হাট উল্লেখযোগ্য।
সপ্তাহে দু’দিন করে এসব হাট বসতো বাজারের মূল রাস্তা ঘিরে কিংবা কোন গাছের ছায়ায়। কালের প্রবাহে যেমন হারিয়ে যাচ্ছে হাটগুলো, তেমনি অমৃত সেই জিলাপী ও গুলগুল্যাও। এসবের স্বাদ এখন আর অবশিষ্ট নেই।
জানা গেছে, হাটের দিন সকালে পলিথিনের অথবা কাপড়ের ছাউনি দিয়ে ব্যবসায়ীরা সাজাতো দোকানপাট। এরপর গ্রামের কৃষকেরা হাটে নিয়ে যেতেন তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত টাটকা শাকসবজি ও মৌসুমী শস্যসামগ্রী।
দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কেনা-বেচা চলতো ধুমছে। ওসব দোকানগুলোতে পাওয়া যেতো চাল, ডাল, শাকসবজি, ফল, মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারাতে বসেছে গ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা এসব হাটবাজারগুলো। এর ফলে আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এসব হাটগুলো।
বর্তমান বাজারে গিয়ে এখন পাওয়া যায় না অমৃত সেই বাতাসা। পাওয়া যায় না টাটকা শাকসবজি এবং নদী-নালা ও খাল-বিল থেকে ধরে আনা ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য দেশীয় মাছ।
জেলার সদরের ধর্মপুরের ভাটিরটেক বাজারের নজির আহমেদ বলেন, কয়েক বছর আগে এখানকার হাটগুলো ছিলো বেশ জমজমাট। এখন আগের মতো সেই অবস্থা নেই। এখন হাটে তেমন লোকজন আসে না। বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট হয়ে যাওয়ায় হাটের দিকে মানুষের আসা কমে যাচ্ছে। দিন পাল্টে গেছে। সব কিছু আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। যার ফলে প্রায় বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব হাটগুলো।
এছাড়া, গ্রাম বাংলার এখানে সেখানে, যার যেখানে মনে হচ্ছে তিনি সেখানেই দোকানপাট গড়ছেন বলেও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি বাজারগুলো দিনদিন প্রদীপ নিভিয়ে চলছে বলেও মন্তব্য করেন থানার হাট বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ার মাস্টার।
Leave a Reply