ইনানী বিচ : ভ্রমণ প্রেয়সীদের প্রিয় সমুদ্র সৈকত

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৩, ২০২১
  • 1235 পাঠক

দিশারী রিপোর্ট

————-

বছরের এ সময় টুকু বঙ্গোপসাগর একেবারে শান্ত, স্নিগ্দ্ধ। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের ভ্রমণ প্রেয়সীদের অবকাশ যাপনের প্রিয় গন্তব্য স্থল সমুদ্র সৈকত। সাগর পাড়ে নিবিড় প্রশান্তিতে অবকাশ যাপনের জন্য কক্সবাজারের সুবিশাল বিচ ও বেলাভূমি সবার প্রথম পছন্দ।

নাগরিক দৌড়-ঝাপে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত, তখন ছুটি পেলেই সুনীল সাগরের জলে পা ভেজানোর সুযোগ কেইবা হাতছাড়া করে। শহুরে জীবনের ঘিঞ্জিঘেরা পরিবেশ থেকে ন্যূনতম অবকাশ যাপনের চেষ্টা প্রায় সকলের মাঝে থাকে। শহরের যান্ত্রিকতা থেকে একটু ভিন্নতা খুঁজেন ভ্রমণ পিপাসুরা। এধরনের মনো শৈলী পর্যটকদের জন্য পছন্দনীয় অবকাশ যাপনের উত্তম ইনানী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত।

কোরাল পাথর ঘেরা এক অপূর্ব সৈকত এই ইনানী বিচ। সমুদ্রের নীল জলরাশি আর সারি সারি পাথরের মেলা। পাথরগুলো সমুদ্রের জোয়ারের জলে ডুব দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভাটার টানে আবার যেন ভেসে ওঠে। ইনানী বিচের দীর্ঘ এলাকা জুড়ে প্রাকৃতিক পাথরের সৌন্দর্য্য বিমুগ্ধ হয়ে পড়ে ভ্রমণার্থীরা। এসব পাথরের উপর ছুটোছুটি, সাগরের নীল জলে নিজেকে ভিজিয়ে নেয়া, স্মৃতির পাতা ভরাতে সে এক অপার্থিব অনুভূতি।

পাথরগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে অস্তগামী সূর্যের সৌন্দর্য কল্পনাকেও হার মানায়। গোধূলি বেলার রক্তিম আভা ও বিচের রঙ যখন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, তখন চারপাশের সৌন্দর্য দেখে মনে হয় যেন মুঠো মুঠো সোনা ছড়িয়ে আছে পুরো সৈকত জুড়ে। একদিকে দীর্ঘ সাগরে স্থানীয় জেলেদের ছোট ছোট নৌকা ও ইঞ্জিন বোটের ছুটোছুটি, মাছ ধরা, সাগরের ওপাড়ে সবুজ, শ্যামল গ্রাম ও সবুজ পাহাড়ের সারি। এ যেন প্রকৃতি তার খেয়ালে সব সৌন্দর্য অপরূপ ভাবে সাজিয়ে রেখেছে।

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার ও হিমছড়ি থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রবাল ও কোরাল সমৃদ্ধ ইনানীর বিচ। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে ছোট বাস, অটোরিকশা, সিএনজি, মাইক্রোবাস, জীপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন করে পুরো কক্সবাজার শহর ঘুরে আসা যায়।

ইনানীতে গড়ে উঠেছে দীর্ঘ অবকাশ যাপনের মত স্থাপনা, অবকাঠামো। সাধ্যের মধ্যে রয়েছে খুবই ভাল মানের হোটেল ও কটেজ। আছে বিশ্ব মানের তারকা হোটেল। কক্সবাজার শহর ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশ ও বিদেশ থেকেও এসব হোটেল বুকিং করে ইনানী আসা সহজ। কক্সবাজার বিমান বন্দর বা বাসে করে সরাসরি কক্সবাজারের লিংক রোড বা কলাতলী মোড় থেকে আসা যায়। লিংক রোড থেকে টেকনাফ সড়ক দিয়ে উখিয়ার কোটবাজার হয়ে যেকোনো বাহনে ইনানী যাতায়াত করা সহজ।

ইনানী সৈকতে এসেই মিল খুঁজে পাওয়া যায় সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতের। এখানে স্বচ্ছ জলের বুকে জলকেলিতে মেতে উঠার মজাই আলাদা। এ বিচে বিস্তীর্ণ বালুকা বেলায় ছুটে বেড়ানো লাল কাঁকড়ার দলের ছুটোছুটি। পড়ন্ত বিকালে কাঁকড়াগুলো যেন অস্তগামী সূর্যকে বিদায় জানানোর জন্য প্রতিযোগী হয়ে পড়ে।

পর্যটকদের সুবিধার্থে বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় সাগরের বিভিন্ন তাজা মাছ, কাঁকড়াসহ নানা খাবার। পর্যটকদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার লবস্টার। ইনানীতে দেশিয় কারু শিল্পে গড়ে তোলা ইনানী বীচ ক্যাফেতে কম খরচে প্রয়োজনীয় খাবার পাওয়ায় পর্যটকরাও খুশি।

তবে দেশের অগ্রগতি, সার্বিক উন্নয়নের তুলনায় পর্যটন স্পটগুলোর তেমন আর্কষণীয় পরিবর্তন নেই। এতে দেশ ও বিদেশে ভ্রমণকারী অনেক পর্যটক বলেন, প্রচুর সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকার পরও সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে পর্যটন স্পষ্ট গুলোর আধুনিকায়ন করা যাচ্ছে না। এতে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বিদেশি পর্যটক আর্কষণে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পর্যটন খাত থেকে বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন থেকে অহেতুক বঞ্চিত হতে হচ্ছে বলে তাদের অভিমত।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!