‘আত্মহত্যা’ করেও আওয়ামীলীগ জিততে চায় !

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
  • 222 পাঠক

——————————–

জায়েদুল করিম চৌধুরী পলাশ

——————————

বাংলাদেশ । বর্তমানে বৈশ্বিক এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্রোতের উল্টোদিকে বহমান একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাম। দরজায় কড়া নাড়ছে ১২ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

ইতিহাসের নজিরবিহীন আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বেড়াজালে এক অন্যরকম সমীকরণের চাপে ও তাপে আওয়ামী লীগ সরকার। অন্যদিকে অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে আছে আঠারো কোটি মানুষের ভাগ্য । বর্তমান সরকার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম।

গত ১৫ বছরে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে এই সরকার যতগুলো ক্ষত তৈরি করেছে তাও নজিরবিহীন। সীমাহীন দুর্নীতি, অর্থ লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত পোশাক শিল্প বিপর্যস্ত। সুশাসন ও নাগরিকদের অধিকার ক্রমেই সীমিত হয়ে গেছে।

পুলিশ, সচিবালয় ও বিচার বিভাগ যেন এক বিনি সুতার মালায় গাথা ! রিজার্ভ তলানিতে। উন্নয়নের যাঁতাকলে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। হু-হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম।

মূল্যস্ফীতি সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। খুচরা বাজারে ডলারের মূল্যও রেকর্ড ভেঙেছে। বাংলাদেশ জন্মের পর এই প্রথম ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে।

রিজার্ভ চুরির ঘটনা আরেক ইতিহাস তৈরি করেছে। সাম্য, ন্যায় বিচার ও সামাজিক মর্যাদাসহ মৌলিক অধিকারগুলো আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধের মূল মন্ত্র হলেও, সেটি এখন শুধুই গল্প এবং স্বপ্ন।

মোটা দাগে বলতে হয় ; ভেঙ্গে পড়েছে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি এমনকি আজ বিভাজিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও। বর্তমানে ‘অঘোষিত এবং প্রচ্ছন্ন ‘ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চলছে। সুকৌশলে সকল ক্ষেত্রেই বিভাজনের রাজনীতির অপখেলা দেখতে দেখতে ক্লান্ত জনগণ। ফলে দেশের মুক্তিকামী মানুষ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হারাতে হারাতে ফিরে পাবে কিনা সেটি এখন বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।

আরেকটু খোলামেলাভাবে বলতে চাই ; বাংলাদেশকে অক্টোপাসের মত চেপে ধরেছে ভূ- রাজনীতি। বিশেষ করে এই স্বাধীন দেশটাকে ‘ভোগের পণ্য’ বানানোর জন্য চীন এবং ভারতের রশি টানাটানিতে জনগণ ত্যাক্ত-বিরক্ত।

বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করে ভোগ করতে চায় দুটি রাষ্ট্রই ! বর্তমান শাসক শ্রেণী ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে দুই দেশকেই বিলিয়ে দিতে চায় সর্বস্ব ! অস্তিত্ব! যৌবন ! এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ মানচিত্রও।

ইতিমধ্যে চীন ভোগের মেয়াদকে মজাদার ও দীর্ঘায়িত করতে টোপ দিয়েছে তলানিতে যাওয়া বাংলাদেশের রিজার্ভে অর্থ যোগান দিতে।পক্ষান্তরে, ভারত ললিপপ দিয়ে তুষ্ট করে ধারাবাহিক ভোগের প্রতিযোগিতায় বরাবরের মতোই সক্রিয়।

ইতিমধ্যে ভারত ললিপপ হিসেবে দিয়েছে মিস্টার বাইডেনের সাথে সেলফি তোলার সুযোগ, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য ভোট ; সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত টু প্লাস টু বৈঠকে অপ্রাসঙ্গিক একতরফাভাবে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি ‘সুপারি’।

এখন প্রশ্ন করাই যায়, বাংলাদেশকে ‘ভোগ ‘করার প্রশ্নে চীন এবং ভারত তাদের চির বৈরীতা ভুলে গেলো ? নাকি হাসিনা সরকার দুই দেশের বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে পড়ে নতুন কোন বেড়াজালে আটকে গেল ? তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলের বড় মিত্র ভারত বাংলাদেশ প্রশ্নে কি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্ব পলিসি পরিবর্তন করার সক্ষমতা রাখে ?

কারণ পশ্চিমা বিশ্ব জোটবদ্ধ হয়েছে তলানিতে যাওয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে উদ্ধার করতে। যার ফলশ্রুতিতে আগামী সংসদ নির্বাচনকে তারা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করাতে মরিয়া । পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিরোধী দলকে দমন, পীড়ন এবং ভূ-রাজনীতি তথা আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে বিভাজিত করতে মরিয়া।

এই কৌশলের অংশ হিসেবে আওয়ামীলীগ অনেকটা প্রকাশ্যে ভারত, চীন, রাশিয়া ও ইরানের বলয়ে ঢুকে পড়েছে। তবে এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান চীনের কারণে হয়তোবা দ্বিধা বিভক্ত অথবা আংশিক বা প্রশ্নবোধক। এই ত্রি-মাত্রিক আন্তর্জাতিক খেলায় এবং চলমান বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ, তাপ আওয়ামী লীগ সরকার কতটা সামলাতে পেরেছে বা পারবে তা কিছু দৃশ্যমান; অনেক কিছু এখনো অদৃশ্যমানও বটে।

তবে যতটুকু দৃশ্যমান হয়েছে সেটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে মূল্যায়ন করতে চাই; শাসক শ্রেণীর রাজনৈতিক ‘আত্মহত্যা হিসাবে। অর্থাৎ হিসাবটা এমন; বাংলাদেশকে হারিয়ে রাজনৈতিকভাবে ‘আত্মহত্যা’ করেও জিততে চায় আওয়ামীলীগ ! অন্তত এখন পর্যন্ত।

লেখক : শিল্প উদ্যোক্তা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!