আমরা কেন পারিনা ?

  • আপডেট সময় রবিবার, মার্চ ৩, ২০২৪
  • 163 পাঠক

মতামত ।০৩ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

এক সম্পাদক লিখেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দরের একটি দুবাই। ২৪ ঘণ্টা মানুষের ঢল লেগেই থাকে। দুবাই থেকে সারা দুনিয়াতে যাওয়া যায়। অথচ সেই বিমানবন্দরের বাথরুমগুলো সব সময় ঝকঝকে তকতকে থাকে। কী করে সম্ভব? কোনো রহস্য নেই এখানে। শুধু রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সারাক্ষণ কাজ করছেন নীরবে। কোনো ঝামেলা নেই। উচ্চবাচ্য নেই। যার যার কাজ করে বাড়ি ফিরছেন। কেউ কাউকে দোষারোপ করছেন না।

বিপরীতে আমাদের শাহজালালের সাধারণ বাথরুমগুলোতে যাওয়ার পরিবেশ নেই। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর কথা না-ই বললাম। এখানেও রক্ষণাবেক্ষণে লোক আছে। তারা তাদের কাজ করে না ঠিকভাবে। অথচ এ মানুষগুলো বিদেশ গিয়ে একই কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করছে। বাংলাদেশে মনিটরিং নেই বলেই সমস্যা হচ্ছে। অন্য কিছু নয়। সঠিকভাবে সবকিছুর মনিটরিং হলে মানুষের মনভাবনায় পরিবর্তন আসবে।

মাঝেমধ্যে লোকদেখানোর জন্যে খাল উদ্ধার অভিযানে নামে প্রশাসন। দাবি করে খাল উদ্ধার করেছি। কিছুদিন পর দেখা যায় সেই খাল আবার দখল হয়ে গেছে। কেন এমন হয় ? খাল উদ্ধারের পর দায়িত্বশীলমহল একটা হাঁটাপথ অথবা যান চলাচলের মতো সড়ক তৈরি করলে চিরতরে বন্ধ হয় দখল। এ কাজটি তারা করতে পারে না। বছর বছর লোকদেখানো উদ্ধার অভিযান করে সাময়িক বাহবা নেয়। তারপর সব আগের মতো হয়ে যায়।

শরীরের সব খানে ক্ষত থাকলে মলম কত স্থানে লাগাবেন ? এই দেশের হাসপাতালে চিকিৎসক ইউটিউব দেখে খতনা করান। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর পর প্রকাশ পায় সেই হাসপাতাল এতদিন চলেছিল অনুমোদন ছাড়া। ভয়াবহ আগুনে মৃত্যুর মিছিলের পর খবর বের হয় ভবনের নকশার ত্রুটি ছিল। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ছিল না। দুর্ঘটনার আগে কোনো কিছু বের হয় না। জানি আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ। তারপরও নিয়ম বাস্তবায়ন কঠিন কিছু নয়। দূষণমুক্ত শহর গড়া অসম্ভব নয়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেয়া মানুষ দরকার। যা আমাদের এখন নামখাওয়াস্তে।

নিয়ম সঠিকভাবে তৈরি হলে সবাই মানবে। মানসিকতার পরিবর্তন না আনলে সমস্যা থেকেই যাবে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে সমস্যার অভাব নেই। নিয়ম না মানলে সমাধান আসবে না। সেবা খাতগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

সারা দুনিয়াতে বড়দিন, ঈদ, পূজা-পার্বণে জিনিসপত্রের দাম কমে। ছাড় দেন ব্যবসায়ীরা। লাভ করেন কম। আমাদের ব্যবসায়ীরা হাঁটেন আরেক পথে। ধর্মীয় উৎসবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেন। রমজান এলে লম্বা টুপি লাগিয়ে মুনাফা লুটেন। বুট, খেজুর, চিনি, তেল, লবণের দাম হুট করে বেড়ে যায়। এভাবে মানুষকে জিম্মি করা ব্যবসায়ীরা ভাবেন না এই ভন্ডামির কারণে ইহকাল পরকাল সব যাবে। দুনিয়া আখেরাত বরবাদ হবে। তারা ভুলে যান সৃষ্টিকর্তা ওপর থেকে সব দেখছেন।

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কিছু মানুষ কাজ করার সুযোগ পেলে মগের মুল্লুক বানিয়ে ফেলেন। ব্যাংকের রক্ষক হয়ে ওঠেন ভক্ষক। ঠিকাদার কাজ পেয়ে বাজে নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করেন। মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী কমিশন নিয়ে লিখে দেন সব ঠিক আছে। মানুষের জীবন নিয়ে কাজ করা হাসপাতালগুলো এখন ব্যবসার আখড়া। সরকারি হাসপাতালের কেনাকাটার পুরোটাই ফাঁকি। বেসরকারি হাসপাতালে হয় শুধুই ব্যবসা। নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে আল্লাহর ফেরেশতা কাউকে সোজা করতে পারবে না।

উন্নত সমৃদ্ধির পথে হাঁটা এই বাংলাদেশকে ঠিকভাবে ধরে রাখতে মেশিনের পেছনের মানুষগুলোকে ঠিক হতে হবে। সৃষ্টিকর্তা দুনিয়াটা গড়েছেন সুন্দর ও স্বাভাবিকতার জন্য। যুদ্ধবাজ, হিংসুটে মানুষ দুনিয়াটাকে অস্বাভাবিক করে রেখেছে। ১৮ কোটি মানুষের দেশ এমনিতে শত সমস্যায় জর্জরিত। নাগরিক ও ব্যক্তি সচেতনতা না বাড়লে রাষ্ট্রযন্ত্র হবে আরও অসহায়। চারপাশের সমস্যা দেখলে আমরা ভেঙে পড়ি। ভাবনায় আসে কোনো দিন কিছু স্বাভাবিক হবে না।

সবকিছু এক দিনে ঠিক হবে বলছি না। সময় লাগবে। নেতিবাচক অবস্থান থেকে বেরিয়ে আলোর পথ খুঁজতে হবে। নেলসন ম্যান্ডেলার আত্মজীবনীতে লেখা একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। আফ্রিকান ঝোসা সম্প্রদায়ের বিখ্যাত কবি স্যামুয়েল এমখাওয়ারি একবার সংসারবিবাগি হলেন। তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন দূরে কোথাও। বাউন্ডুলে এই কবি এক বছর পর বাড়ি ফিরলেন। দেখলেন তার স্ত্রী কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছেন। বাড়ি ত্যাগের সময় স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন বলে তার মনে পড়ছিল না। তাই সন্তানের খবর শুনে বিস্মিত হলেন। শুধু বিস্ময় নয়, ক্ষুব্ধও হলেন। তীব্র ক্ষোভ থেকে সিদ্ধান্ত নিলেন শিশু ও তার মাকে খুন করবেন। সবকিছু শেষ করে দেবেন চিরতরে। ভোজালি হাতে প্রবেশ করলেন বেডরুমে। চোখে-মুখে আগুনের ফুলকি। শিশুর দিকে তাকালেন খুনির চোখে। দেখলেন ফুটফুটে শিশুটি তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। কবি খেয়াল করলেন শিশুটি হুবহু তার চেহারা পেয়েছে। নিজের ছায়া দেখে চমকে ওঠলেন। তারপর শিশুটির দিকে তাকালেন অপার বিস্ময়ে। বললেন, ও জিনজিলে ! তুমি ভালোভাবে এ পৃথিবীতে এসেছো ? স্যামুয়েল এমখাওয়ারি শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। কোলে নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করলেন। কবিতার ছন্দে শিশুটির নাম রাখলেন জিনজিশওয়া। অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসা এক মানব শিশু।

শত সংকটেও বাঁচতে হয় আশার আলো নিয়ে। বাস্তবতায় থাকতে হবে। লোভকে বিসর্জন দিতে হবে। আলোর পথ খুঁজে নিতে হবে। সামাজিক সংকটগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা তৈরি করতে হবে। সেবা খাতগুলোকে আনতে হবে শৃঙ্খলায়। সেবা খাতে সমস্যা থাকলে ঝামেলার অবসান হবে না।

অনিয়মে বারবার ঘটবে দুর্ঘটনা। মানুষের জীবন যাবে। প্রাণহানি বাড়বে। তাজরীন গার্মেন্ট ও নিমতলী, চুড়িহাট্টা, সজিব ফ্যাক্টরি, বনানীর মতো দুর্ঘটনা আলোড়ন তুলবে। কোনো কিছুর স্থায়ী সমাধান আসবে না। মালিকরা বীমা পাবেন। নিরীহ শ্রমিকরা প্রাণ হারাবেন। পরিবার নিঃস্ব হবে। অতি লাভ, লোভ আর নয়। সচেতনতা, সতর্কতা বাড়াতে হবে।

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!