ফয়জুল্লাহ রিয়াদ। ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫
গুজব মানে মিথ্যা। গুজব রটানো মানে মিথ্যার প্রচার। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘ রাসুল (সা.) একদিন কবিরা গুনাহের কথা উল্লেখ করলেন কিংবা তাঁকে কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো।
তখন তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার জন্য অংশীদারি সাব্যস্ত করা। মানুষ হত্যা করা ও মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। অতঃপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহের কথা বলব না ? এরপর বলেন, তাহলো মিথ্যা কথা বলা অথবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৫২)
করণীয় : কোনো খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ব্যাকুল হওয়া অনুচিত, বরং আমাদের জন্য উচিত বা করণীয় হলো, এই সংবাদের সত্য-মিথ্যা আগে যাচাই করে নেয়া।
————————————————————————————
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ হে ঈমানদাররা! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের নিকট কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যেন তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বসো। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৬)
————————————————————————————
সত্য-মিথ্যা পরীক্ষা না করে কোনো সংবাদের প্রচারকারীকে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিথ্যুক সাব্যস্ত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, ‘ কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা শুনে (তার সত্যতা যাচাই না করেই) তা বলে বেড়ায়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫)
মিথ্যা প্রচারণার শাস্তি
সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘ আমি আজ রাতে (স্বপ্নে) দুজন লোককে দেখতে পেলাম। তারা (ফেরেশতারা) বলল, আপনি যে লোকটির গাল চিরে ফেলতে দেখলেন, সে বড়ই মিথ্যাচারী। সে এমন মিথ্যা বলত যে পৃথিবীর সর্বত্র তা ছড়িয়ে দিত। ফলে কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এমন শাস্তি দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৯৬)
মিথ্যুকের সঙ্গে রহমতের ফেরেশতা থাকেন না। ফলে সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ কোনো বান্দা যখন মিথ্যা বলে, তখন তার মিথ্যা কথার দুর্গন্ধের কারণে ফেরেশতা এক মাইল দূরে চলে যায়।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭২)
বর্তমান সময়ে ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুজব ও মিথ্যা সংবাদের প্রচার-প্রচারণা দেখা যায়। অনেকেই এগুলো যাচাই-বাছাই না করেই ব্যাপকভাবে শেয়ার করতে থাকে। মিথ্যা সংবাদ শেয়ার করা মানে মিথ্যার প্রচারণায় অংশ নেওয়া। এটি নিন্দনীয় ও গর্হিত অপরাধ।
এ ছাড়া এর মাধ্যমে মিথ্যার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া হয়। মিথ্যা সাক্ষ্যদানও শরিয়ত নিষিদ্ধ কর্মের অন্তর্ভুক্ত। তাই এ থেকে বেঁচে থাকা অবশ্য কাম্য। আজকাল ইউটিউবেও দেখা যায়, ভিউ বাড়ানোর জন্য বাস্তবতাবিবর্জিত চটকদার থাম্বেইল ব্যবহার করতে। অথচ ভেতরের ভিডিওর সঙ্গে থাম্বেইলের শিরোনামের কোনো মিলই থাকে না। এটাও এক ধরনের ধোঁকা ও প্রতারণা।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ চক্রান্তকারী ও প্রতারক জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর যে আমাদের ধোঁকা দেয়, সে আমাদের (উম্মতের) অন্তর্ভুক্ত নয়। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৫৫৯)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে মিথ্যা, গুজব, ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
Leave a Reply