দিশারী রিপোর্ট
————–
মুখরোচক খাবার চকলেট। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই যার ক্রেতা। ফলে চাহিদাও রয়েছে এর। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল চকলেট উৎপাদন করে দেশি এবং বিদেশি ব্যান্ডের মোড়ক লাগিয়ে বাজারজাত করছে।
শুধু তাই নয়, নামিদামি চকলেটের মোড়ক হুবহু নকল করে বাজারজাত করছে তারা। বিদেশি মোড়ক দেখেই ক্রেতারা আস্থার সঙ্গে কিনে নিচ্ছেন এবং খাচ্ছেন। এই ভেজাল চকলেট খাওয়ার কারণে নানা রোগ বাসা বাঁধে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, এসব চকলেট খেয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে শিশুরা। তাদের লিভার ও কিডনি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। দিন দিন হ্রাস পেতে পারে স্মরণ শক্তিও।
এ ব্যাপারে র্যাবের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, মুখরোচক খাদ্য চকলেটও ভেজাল পাওয়া গেছে। খুচরা এবং পাইকারি সব দোকানে এই ভেজাল চকলেট বিক্রি হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে এই ভেজাল চকলেট উৎপাদন করে বিদেশি চকলেটের মোড়ক লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। এই চক্রকে ধরে আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, দেশি চকলেটের বড় সরবরাহকারী জেলা হচ্ছে নরসিংদী। এই জেলায় বিপুল পরিমাণের চকলেটের কারখানা আছে। তারা চকলেট উৎপাদন করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করে।
এছাড়াও পুরান ঢাকা, শ্যামপুর এবং সাইনবোর্ড এলাকায় বিপুল পরিমাণের কারখানা রয়েছে। তারা পাইকারি দরে ঢাকার ইসলামপুরসহ বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করে চকলেট।
জেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের চকলেট উৎপাদন করে অলিম্পিক প্লাস, অরেঞ্জ, সান ও ম্যাঙ্গোর মোড়ক লাগিয়ে বাজারজাত করছে। তারা এগুলো মূলত খুচরা বাজারে সরবরাহ করে। তবে পুরান ঢাকা, শ্যামপুর ও সাইনবোর্ড এলাকায় কারখানার মালিকরা তাদের সেইসব কারখানায় চকলেট উৎপাদন করে বিদেশি চকলেট কোকাকোলা, ক্র্যাকার্স, সুমো, চিলড্রেন বয় ও ফনিকোর মোড়ক লাগিয়ে বাজারজাত করছে। মোড়কগুলো এমনভাবে নকল করে যাতে ক্রেতারা বুঝতে না পারেন।
জেলা পর্যায়ের কারখানার মালিকরা তাদের উৎপাদিত ভেজাল চকলেট খুচরা মার্কেটে সরবরাহ করলেও ঢাকার বিভিন্নস্থানের কারখানার মালিকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো খুচরা মার্কেটে সরবরাহ করেন না। তারা এসব চকলেট সরবরাহ করেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নামিদামি শপিংমলগুলোতে। সেখানে এসব চকলেটের যেমন প্রচুর চাহিদা রয়েছে পাশাপাশি বিক্রেতারা বেশি মূল্য পান। এছাড়াও বিত্তশালী পরিবারের লোকজন এইসব নামিদামি শপিংমলগুলোতে যান। সেই শপিংমলে বিভিন্ন খাবার খাওয়ার পাশাপাশি মুখরোচক খাবার চকলেট কিনে খান।
র্যাব জানায়, ভেজাল চকলেট চুষে খেলে তা বোঝার অনেক উপায় আছে। সেইসব চকলেটগুলো কোনোটা বেশি মিষ্টি আবার কোনোটা বেশি ঝাল। খাওয়ার পর মাথা ঘুরে ওঠে। হালকা ঝিমুনি আসে। মাত্রাতিরিক্ত রং থাকার কারণে বমি বমি ভাব আসে।
যেসব কারখানার মালিকরা পাইকারি দরে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে তাদের উৎপাদিত চকলেট সরবরাহ করেন তার মোড়ক দেখেই ভেজাল চকলেটের বিষয়টি বুঝতে পারেন পাইকারি ক্রেতারা। কিন্তু, অধিক মুনাফা লাভের আশায় ওইসব ব্যবসায়ীদের কিছু বলেন না। বরং অনেক অসাধু পাইকারি ব্যবসায়ী এসব চকলেট সরবরাহ করতে তাদের উৎসাহ দেন। কেউবা অতিরিক্ত টাকা প্রদান করেন।
এসব কারণে ভেজাল চকলেট উৎপাদন, সরবরাহ এবং বিক্রিতে বড় ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে বলে জানিয়েছে র্যাব। রাজধানীর পাইকারি বাজার ইসলামপুরে এ বিষয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। ইসলামপুরের আরিফ স্টোর নামে এক দোকানের কর্মচারী শহিদুল ইসলাম জানান, ভেজাল চকলেট দেখে বোঝার উপায় নেই। কারণ, হুবহু নকল মোড়ক লাগিয়ে তা বাজারজাত করা হয়। যারা নিয়মিত চকলেট খান তারা ভেজাল চকলেট মুখে দিলেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। তিনি আরো জানান, কিছুদিন আগে র্যাবের একটি ভ্রাম্যমাণ টিম ভেজাল প্রতিরোধ করার জন্য ইসলামপুরে এসে অভিযান চালিয়ে গেছে। ওই টিম আসার কারণে অনেক দোকানি দোকান বন্ধ করে পালিয়ে গেছে।
ভেজাল চকলেট খাওয়ার ক্ষতির বিষয়ে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জানান, ভেজাল চকলেটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। ভেজাল চকলেট খেলে লিভার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিডনি ড্যামেজ হয়। পাশাপাশি স্মরণ শক্তি কমে যায়। এইসব রোগ হয় ধীরে ধীরে, সময় নিয়ে। একটি সুস্থ মানুষ অসুস্থ রোগীতে পরিণত হয়।
Leave a Reply