বিলুপ্তের দ্বারপ্রান্তে নোয়াখালীর বাঁশশিল্প

  • আপডেট সময় বুধবার, জুন ২৮, ২০২৩
  • 134 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। বুধবার। ২৮ জুন, ২০২৩

————————————–

নোয়াখালীর গ্রামাঞ্চলসহ শহর এলাকাতেও এক সময় বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যাপক প্রচলন ছিল। তখন জেলার সাত উপজেলাতেই অনেক পরিবার এগুলো তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করত।

কিন্তু বর্তমানে এ শিল্পটি বিলুপ্তের দ্বারপ্রান্তে। অবশিষ্ট যে কয়েকটি পরিবার এখনো এ পেশায় টিকে আছে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দারিদ্র্যসীমার অনেক নিচে। প্লাস্টিকসহ বিকল্প পণ্যের প্রচলনের কারণে বাঁশের তৈরি সামগ্রীর চাহিদা কমেছে।

জেলা সদরের চরমটুয়ার ইউনিয়নের কিছু পরিবার এখনো এই বাঁশশিল্পের কাজ করছেন। তারা জানান, আগে আরও বেশ কয়েকটি পরিবার এই কাজ করলেও এখন তারা পেশা ছেড়ে ঢাকায় গার্মেন্টে কাজসহ বিভিন্ন শ্রমনির্ভর পেশায় চলে গেছেন।

গ্রামের বাঁশশিল্পের কারিগর সুবলা দাশ বলেন, একসময় বাঁশের জিনিসের কদর ছিল। প্লাস্টিকের জিনিস পাওয়া যেত না। এখন প্লাস্টিকের নানা রকম বিকল্প জিনিস সহজেই পাওয়া যায় বলে মানুষ বাঁশের তৈরি জিনিস কিনতে চান না। তবুও এখন বাঁশের কুলা, চালুন, ডালি, চাটাই, ফুলের সাজি, মাছধরা ও রাখার পলো ও খলুই, হাঁস-মুরগির খাঁচা তৈরি করা হয়।

কিন্তু বাঁশের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় এখন এগুলোর খরচ বেড়ে গেছে। বেশি দাম দিয়ে এগুলো কিনতে মানুষ আগ্রহী হচ্ছেন না। এখানে আমরা আটটি পরিবার আছি। অন্যের দুই শতাংশ জায়গায় ঘর তুলে আছি আমরা। ঘরগুলোর সব জীর্ণ দশা। বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিটি পরিবারে ছয়-সাতজন করে সদস্য। পরিবারগুলো তিন বেলা খেতেও পারে না। অন্য কাজ না জানায় এখনো এই পেশা ধরে আছেন তারা। কোনো প্রশিক্ষণ বা ঋণ সহায়তা তারা আজও পাননি।

কারিগর মালতি দাস বলেন, পরিবারের পুরুষ সদস্যের সঙ্গে বাড়ির বউ-মেয়েরা সংসারের কাজ করার পাশাপাশি বাঁশের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন। কিন্তু এগুলো বিক্রি করে সংসার চলে না। গ্রামে ঘুরে ঘুরে ফেরি করা এবং হাটবাজারে বসে এসব বিক্রি করা অনেক কষ্টের কাজ। পরিশ্রম করেও টাকা না পাওয়ায় ছেলেমেয়েরা আর কেউ এই কাজ করতে চায় না।

গ্রামের স্কুলশিক্ষক শাহ জামাল বলেন, এই গ্রামে অনেক পরিবার আগে চাটাই তৈরির কাজ করত। একসময় ঘর নির্মাণ, সিলিং তৈরিসহ নানা কাজে চাটাই ব্যবহার করা হতো। এখন প্লাস্টিক ও লোহার শিট দিয়ে সেসব তৈরি হয় বলে বাজারে চাটাইয়ের চাহিদা নেই। যে কারণে এই পেশা বিলুপ্তির পথে।

নোয়াখালী বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক বলেন, শিল্পীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলেও তারা আগ্রহী হলে ঋণের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!