পায়ুপথে নানাভাবে রক্তপাত হতে পারে। মলত্যাগের আগে বা পরে তাজা বা টকটকে লাল রক্তপাত হতে পারে। কখনও মলমিশ্রিত রক্ত যেতে পারে, আবার কখনও মলের সঙ্গে সরু লাল দাগ দেখা যেতে পারে। কখনও এই রক্তপাতের পরিমাণ হয় এত সামান্য যে খালি চোখে দেখা যায় না।
সাধারণত ওপর দিকে, মানে খাদ্যনালি, পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরিভাগ থেকে রক্তপাত হলে তা আলকাতরার মতো কালচে, দুর্গন্ধযুক্ত, আঠাল বা পিচ্ছিল দেখায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম ‘মেলেনা’। আর পায়ুপথের কাছাকাছি মানে নিচের দিক থেকে রক্তপাত হলে তা তাজা রক্তের মতোই দেখা যেতে পারে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়া অকাল্ট বা গোপন রক্তপাতের একটি লক্ষণ।
কারণ কী : খাদ্যনালি থেকে পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র হয়ে পায়ুপথ অবধি যেকোনো স্থানে সমস্যার জন্য রক্ত যেতে পারে। পায়ুপথে রক্তপাতের পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে পাইলস ও অ্যানাল ফিসারের মতো সুপরিচিত সমস্যা থেকে পাকস্থলী বা অন্ত্রের ক্যানসার-জাতীয় গুরুতর রোগ। যেকোনো বয়সেই ঘটতে পারে এমন ঘটনা। বয়সভেদে কারণের তারতম্য আছে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে পাইলস ও অ্যানাল ফিসার। মলাশয় ও পায়ুপথের রক্তনালি স্ফীত হওয়াকে বলে পাইলস। আর পায়ুপথের ভাল্ভ ফেটে যাওয়ার সমস্যার নাম ফিসার। অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ বা প্রদাহ থেকেও পায়ুপথে রক্তপাত হতে পারে। সাধারণ বাংলায় একে বলে রক্ত আমাশয়।
অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে বৃহদন্ত্রের পলিপ, ক্ষুদ্রান্ত্র বা বৃহদন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ আইবিডি (ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ), অন্ত্রের যক্ষ্মা বা টিবি, অন্ত্রে লিমফোমা ও বৃহদন্ত্রের ক্যানসার। এ ছাড়া বৃহদন্ত্রে পকেট বা ডাইভারটিকুলা, বৃহদন্ত্রের কোনো কারণে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া, কোলাইটিস, রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে সৃষ্ট কোলাইটিসও হতে পারে রক্তপাতের কারণ। পাকস্থলীর আলসার বা ক্ষত, প্রদাহ, টিউমারজনিত কারণে এবং লিভার সিরোসিসের রোগীর পায়ুপথে রক্তপাত ঘটা অস্বাভাবিক নয়। (বাকি অংশ আগামীকাল)
অধ্যাপক চঞ্চল কুমার ঘোষ
আইবিডি ক্লিনিক কো-অর্ডিনেটর, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply