খাদ্যনালীর ক্যান্সার : কারণ ও করণীয়

  • আপডেট সময় সোমবার, জুন ৬, ২০২২
  • 272 পাঠক
অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল আলম

——————————

খাদ্যনালীর ক্যান্সার হলো এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার যা অন্ননালীর যে  কোনো অংশে অথবা পরিপাকতন্ত্রে হয়ে থাকে এবং চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করলে পরবর্তী পর্যায়ে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। জরিপে প্রকাশ সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৩ কোটি মানুষ এই ক্যান্সারে মারা যান। পুরুষ এবং মহিলা ভেদে মৃত্যুর হার ১:১  থেকে ১৭:১।

সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত ৩৫ বছর বয়সের পর এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে তবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বয়স হলো ৬০-৬৯। তাই শুরুতে লক্ষণ  দেখা মাত্রই চিকিৎসা শুরু জরুরি। বিভিন্ন কারণে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে, যেমন- শারীরিক অবস্থা, খাদ্যাভ্যাস, বংশগত কারণ ইত্যাদি। মূলত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন পদ্ধতি এর জন্য দায়ী।

লক্ষণ সমূহ 
১. খেতে গেলে আনেক সময় বুকে জ্বালাপোড়া বা সূঁচের মতো কোনো কিছু অনুভূত হওয়া।
৩. খাবার খেতে অসুবিধা এবং সঙ্গে বমি হওয়া, পেটে ব্যথা করা।
৪. ওজন অতিমাত্রায় হ্রাস পাওয়া।
৫. খাবার খাওয়ার সমস্যার কারণে পুষ্টিহীনতা দেখা যায় এবং শরীর শুকিয়ে গিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে।
তবে যে উপরের লক্ষণগুলো শুধু খাদ্যনালীর ক্যান্সারকেই নির্দেশ করে না, অন্য রোগও নির্দেশ করতে পারে। তাই এ রকমটি হলে বা এই লক্ষণগুলো দেখা মাত্রই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

খাদ্যনালীর ক্যান্সার কিনা তা নির্ণয়ে পরীক্ষা সমূহ 

১. ইবারেন্ডস্কপি: হজম তন্ত্রের রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
২. ডাইজেসটিভ ট্র্যাক্ট এন্ডসকোপিক আলট্রাসনোগ্রাফি: খাদ্যনালীর প্রাচীরে কোনো ক্ষত থাকলে তা শনাক্ত করা যায়। এছাড়া লসিকাগ্রন্থি অস্বাভাবিক ভাবে  বেড়ে গেলে তাও শনাক্ত করা যায় এবং খাদ্যনালীর প্রাচীরে ঠিক কোনো স্থানে ক্ষত আছে তাও জানা যায়।
৩. এক্স-রে ব্যারিয়াম মিল: ক্ষত স্থানের আকৃতি ও অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় এবং কোনো ক্যান্সার সেল আছে কিনা তাও জানা যায়।
৪. সিটি স্ক্যান: এটি ক্যান্সার নির্ণয় করতে না পারলেও খাদ্যনালী এবং এর সংলগ্ন  মেডিয়েসটিনাম এর সম্পর্ক নির্ণয়ে সাহায্য করে।
৫. এসোফ্যারিঙ্গিয়াল এক্সফ্লয়টেটিভ সাইটোলজি এক্সামিনেশন: সহজ সুবিধাজনক এবং স্বল্পব্যথা বিশিষ্ট এই থেরাপি খাদ্যনালীর ক্যান্সার দ্রুত নির্ণয়ের জন্য একটি পরীক্ষা।

ক্যান্সারের বিভিন্ন পর্যায় 

স্টেজ-০ বা শুরু
এই পর্যায়ে ক্যান্সার কোষ অন্যান্য কোষের সঙ্গে স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো ধরনের ম্যালিগন্যান্ট ছাড়াই খাদ্যনালীর বহিঃত্বকে অবস্থান করে ।
স্টেজ ১:
এই পর্যায়ে ম্যালিগন্যান্ট  কোষ বা ক্যান্সার কোষ বহিঃত্বক ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করে এবং শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর নিম্ন স্তরে পৌঁছায় কিন্তু পেশীর স্তর তখনও  ভেদ করে না।

এই পর্যায়ে ক্যান্সার কোষ লসিকাগ্রন্থি বা অন্য কোনো প্রত্যঙ্গে ছড়ায় না।

স্টেজ ২:
এই পর্যায়ে ক্যান্সার লসিকাগ্রন্থিতে প্রবেশ করে কিন্তু অন্যকোনো প্রত্যঙ্গে ছড়ায় না।
স্টেজ ৩:
এই পর্যায়ে ক্যান্সার খাদ্যনালী সংলগ্ন শ্বাসনালীতে আক্রমণ করে কিন্তু এর সংলগ্ন লসিকাগ্রন্থি সুরক্ষিত থাকে এবং আশেপাশে তখনও ক্যান্সার ছড়ায় না।
স্টেজ ৪:
এই পর্যায়ে ক্যান্সার রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে হাড়, লিভার এমনকি মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়ে।

চিকিৎসা- 
ক্যান্সার আসলে কোন পর্যায়ে আছে তার উপর এর চিকিৎসা ব্যবস্থা নির্ভর করে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করে  রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব।
১. সার্জারি: সার্জারির মাধ্যমে টিউমার এবং এর সংলগ্ন লসিকাগ্রন্থি অপসারণ করা হয়। ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকতে সার্জারির মাধ্যমে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। সঠিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতির মাধ্যমে ক্যান্সার কোন পর্যায়ে আছে তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা  গেলে কার্যকর চিকিৎসা  দেওয়া সম্ভব হয়।
২. রেডিওথেরাপি: এটি সার্জারির পূর্বে টিউমারের সাইজ কমিয়ে আনার জন্য এবং সার্জারির পর অবশিষ্ট ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করার জন্য দেওয়া হয়। এটি রোগীর যদি সার্জারি করার মতো অবস্থায় না থাকে  সেক্ষেত্রে সার্জারির বিকল্প হিসেবেও রেডিওথেরাপি  দেওয়া হয়।
৩. কেমোথেরাপি: ক্যান্সার  কোষ ধ্বংস করার জন্য অনেক সময় রেডিও থেরাপি এবং কেমোথেরাপি একসঙ্গে  দেওয়া হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্যান্সারকে নির্মূল করতে পারলেও অতিরিক্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে শরীরে বিরূপ প্রভাব দেখা যায়।
ইন্টারভেনশনাল  কেমোথেরাপি: এই  কেমোথেরাপি যা প্রচলিত  কেমোথেরাপি পদ্ধতি থেকে ভিন্ন এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক কম।
৪. ফটোডায়নামিক ট্রিটমেন্ট : এই থেরাপি প্রথম সারির  থেরাপিগুলোর পর এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
৫. টিসিএম থেরাপি: ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ  মেডিসিন মানুষের শরীরকে আরও বলবৎ করে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।লেখক- (অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল আলম) বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ, রক্ত ও খাদ্যনালী বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (সাবেক) জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল মহাখালী-ঢাকা। ও কনসালটেন্ট- ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান-ঢাকা।

চেম্বার- ফরাজী হাসপাতাল, বনশ্রী রামপুরা, ঢাকা।
সেল-০১৭১৩-০০৭৩১৮

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!