বীমাশিল্প : বেকার সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য অবদান

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৫, ২০২১
  • 751 পাঠক

আবদুল গফুর রাজু
————-

সমৃদ্ধির অব্যাহত অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় বীমাশিল্প আজ দেশের উন্নয়নে এক সম্ভবনাময় শিল্প হিসেবে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যা এই মুহুর্তে দেশটির একটি সম্মানজনক অর্জন।

বাংলাদেশে বীমা শিল্প একটি অমিত সম্ভাবনাময় খাত হলেও এর বিকাশ ও উন্নয়নে জীবন, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে বীমার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সেবাগ্রহীতা ও সেবা প্রদানকারীর জ্ঞানের অভাবের পাশাপাশি ইতোপূর্বে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিলো সচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে ২০১০ সনের আগ পর্যন্ত এই সম্ভাবনায়ময় বীমা শিল্প ১৯৩৮ সালের বীমা আইনের আওতায় স্বাধীন বাংলাদেশের এক অবহেলিত শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে পথ চলতে থাকে।

সে সময়ে তৎকালীন রাষ্ট্রীয় প্রত্যক্ষ পৃষ্টপোষকতা তথা নজরদারি না থাকার কারণে অর্থাৎ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যুগপোযোগী আইন প্রণয়ন না করার কারণে, যেখানে এই সেক্টরটি হতে পারতো যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি স্বাধীন দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি সেখানে এই সেক্টরটি দেশের অর্থনীতিতে কোন অবদানই রাখতে পারেনি।

বরং এই সেক্টর দিনদিন অসাধু ও স্বার্থন্মেষী ব্যক্তিদের অভায়রণ্যে পরিণত হতে থাকে। এতে করে সর্বমহলে এর গ্রহণযোগ্যতা বিনষ্ট হয়। উন্নত বিশ্বের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, জিডিপিতে এই শিল্পের অবদান উল্লেখযোগ্য হলেও দু:খজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে জিডিপিতে এই শিল্পের অবদান এক শতাংশেরও কম।

২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের সমস্ত অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাসহ বিভিন্ন অরাজক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দেশাত্মবোধ, যুগ ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একদৃঢ় মনোবলের কারণে অন্যান্য শিল্পের উন্নয়ন সাধনের পাশাপাশি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বীমা শিল্পের উন্নয়ন সাধনে অবশেষে ইন্স্যুরেন্স আইন ১৯৩৮ রহিত করে বীমা আইন ২০১০ এবং বীমা ব্যবসায় তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ প্রবর্তন করেন।

বাংলাদেশ বীমা (জাতীয়করণ) আদেশ ১৯৭২, বাংলাদেশ বীমা কর্পোরেশন (বিলোপ) আদেশ ১৯৭২, বাংলাদেশ বীমা (জরুরি বিধান) আদেশ ১৯৭২, ব্যাংক আমানত বীমা আইন ২০০০ এর বলে অনেক কার্যক্রমও গ্রহণ করে।

বীমা আইন ২০১০ এর আলোকে ইতোপূর্বে ৩টি বিধি ও ৮টি প্রবিধানমালা প্রণীত হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে দেশের আপমর জনসাধাণ ধাপে ধাপে বীমার আওতায় এসে জীবন ,স্বাস্থ্য ও সম্পদের বিভিন্ন অর্থনেতিক ঝুকিঁ মোকাবেলার মাধ্যমে অন্যতম মানবাধিকার হিসেবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের সুযোগ পচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় অনতিবিলম্বে দেশের সম্পদ ও জীবনের ঝুকিঁ শতভাগ বীমার আওতায় চলে আসবে।

বীমা শিল্পের আধুনিকায়ন করে সর্বমহলে এই শিল্পের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অবশেষে জাতীয় বীমা নীতিমালা ২০১৪ প্রবর্তন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই নীতিমালা বাস্তাবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

যার অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে ঢাকায়, ২০১৭ সালে সিলেটে, ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে বিভাগীয় শহর খুলনায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বীমা মেলার সফল আয়োজন করে।

—————————-

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দেশাত্মবোধ,
যুগ ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশকে
এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একদৃঢ় মনোবলের
কারণে অন্যান্য শিল্পের উন্নয়ন সাধনের
পাশাপাশি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বীমা শিল্পের উন্নয়ন সাধনে অবশেষে
ইন্স্যুরেন্স আইন ১৯৩৮ রহিত করে
বীমা আইন ২০১০ এবং বীমা ব্যবসায়
তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ
আইন ২০১০ প্রবর্তন করেন। ”

—————————-

শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৮ জানুয়ারী ২০২০ তারিখে নিজ কার্যালয়ে মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রতি বছর পহেলা মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। যা নি:সন্দেহে জাতীয় কল্যাণে সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।

দেশের সম্ভাবনাময় এই বৃহৎ শিল্প খাতটি বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বীমা শাখা কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে। সরকারী হিসাব মতো দেশে মোট ৩৩টি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান ও ৪৬ টি সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

৩৩টি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে ২ টি বিদেশী বাকী ৩১টি মধ্যে একটি রাষ্ট্রীয় এবং ৩০টি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত দেশীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। আর ৪৬ টি সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে ১টি রাষ্ট্রীয় এবং বাকী ৪৫ টি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত দেশীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এই শিল্পে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় সমস্যা হচ্ছে বেকার সমস্যা। সরকারী হিসাব মতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে মোট বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকায় এই সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অথচ, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত দেশে সর্বমোট ৭৮টি বীমা প্রতিষ্ঠানের সর্ববৃহৎ এই সেক্টরকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে অর্থাৎ আলাদা বীমা মন্ত্রনালয় গঠন করে দেশের শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান ব্যবস্থার করে সুদক্ষ প্রশিক্ষণ ও কর্মের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে, একদিকে যেমন জিডিপিতে এই শিল্পের অবদান আশানুরূপহারে বৃদ্ধি পেতো ; অন্যদিকে বেকার সমস্যার উল্লেখযোগ্য সমাধান হতেও পারতো।

লেখক : রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর ও ইনচার্জ, নোয়াখালী সদর সার্ভিসিং সেল, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ||

Attachments area

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!