বাংলাদেশসহ ২৯ দেশে কলেরার উচ্চ ঝুঁকি

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
  • 77 পাঠক

————————————————————–

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য

—————————————————————

দিশারী ডেস্ক। ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

বাংলাদেশসহ ২৯টি দেশে কলেরার প্রাদুর্ভাব চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই পরিস্থিতিকে অতি উচ্চপর্যায়ের ঝুঁকি বলে বর্ণনা করেছে। দেশে চলতি বছর কলেরায় মৃত্যু না হলেও আক্রান্ত হয়েছেন ১৪১ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত ‘বহু দেশে কলেরার প্রাদুর্ভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। ৭ ডিসেম্বর সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুটি দেশে কলেরায় আক্রান্তের পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। একটি বাংলাদেশ, অন্যটি ভারত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় ১৪১ জন কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২২ জুন থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৯৬১ জন কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ভারতে কলেরায় দুজন মারা গেছেন।

————————————————————————————————————

বাংলাদেশ কলেরাসহ অন্যান্য ডায়রিয়াজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় অনেক উন্নতি করেছে। তাই এখন মৃত্যু নেই বললেই চলে। অনিন্দ্য রহমান, কর্মসূচি উপব্যবস্থাপক, রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

————————————————————————————————————

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বে এ বছর কলেরা বেশি দেখা দিয়েছে আফগানিস্তানে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩ হাজার ৯১১ জন, মারা গেছেন ৯৩ জন। সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন আফ্রিকার দেশ মালাবিতে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৮৮ জন এবং মারা গেছেন ১ হাজার ৭৬৯ জন।

কলেরা মূলত ডায়রিয়াজনিত একটি রোগ। একে ‘তীব্র ডায়ারিয়া’ও বলা হয়। ‘ভিবরিও কলেরি’ নামের ব্যাকটেরিয়া কলেরার জীবাণু। কলেরা পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। কলেরায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে অতি দ্রুত পানি বের হয়ে যায়। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে কলেরা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এ বছর বৈশ্বিকভাবে কলেরায় মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ ২০০ জন আক্রান্তের মধ্যে একজন মারা যাচ্ছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে বিশ্বে বেশি মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন। আবার ২০২২ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে বেশি। এ বছর ২৯টি দেশে ৬ লাখ ১০ হাজারের বেশি কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি। এসব দেশে অতিবৃষ্টি, বন্যা বা ভূমিকম্প দেখা গেছে।

একদিকে কলেরা বেশি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে ; অন্যদিকে কলেরার টিকা ও অন্যান্য সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কলেরার ঝুঁকিকে অতি উচ্চপর্যায়ের বলে বর্ণনা করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কলেরায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। বাংলাদেশ কলেরা মোকাবিলায় উন্নতি করেছে।

কোথায় কলেরা ছড়িয়েছে :
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফ্রিকার দেশগুলোতে কলেরা বেশি ছড়িয়েছে। এই তালিকায় আছে ১৬টি দেশ—বুরুন্ডি, ক্যামেরুন, কঙ্গো, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইসওয়াতিনি, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, মালাবি, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা, তানজানিয়া, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।

এর মধ্যে কোনো কোনো দেশে মৃত্যুহার বেশি। যেমন কঙ্গোয় কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন, তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন। মৃত্যুহার প্রায় ২৪ শতাংশ।

এরপর কলেরা বেশি ছড়িয়েছে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। এই অঞ্চলের আটটি দেশের তালিকা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর মধ্যে আছে আফগানিস্তান, ইরান, লেবানন, পাকিস্তান, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন। এই অঞ্চলে পাকিস্তান ছাড়া প্রতিটি দেশে আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের বেশি।

আমেরিকা অঞ্চলে দুটি দেশে কলেরার প্রাদুর্ভাবের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ডমিনিকা প্রজাতন্ত্র ও হাইতি। হাইতিতে এ বছর ৭১ হাজার বেশি মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৯২২ জন। অন্যদিকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ ফিলিপাইনে তিন হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১৭ জন।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি :

বাংলাদেশে এক দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মিত কলেরার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এ বছরও হাসপাতালে কলেরার রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে কক্সবাজারে কলেরা রোগী শনাক্তের কথা বলেছে।

তবে কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন বিপাশ খীসা প্রথম আলোকে বলেন, কলেরা রোগী শনাক্ত হয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে।

এদিকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মহাখালী হাসপাতালে এই ডিসেম্বরেও দু-একজন করে কলেরা রোগী ভর্তি হচ্ছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সোমবার হাসপাতালের প্রধান বাহারুল আলম বলেন, জুন মাসে হাসপাতালে দৈনিক গড়ে এক হাজার ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ ছিলেন কলেরায় আক্রান্ত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কলেরার ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃতি ও প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছু সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ সামনে চলে এসেছে। বলা হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কলেরা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে—এমন ঝুঁকি আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মসূচি উপব্যবস্থাপক অনিন্দ্য রহমান বলেন, কলেরা বাংলাদেশে আছে। তবে কলেরাসহ অন্যান্য ডায়রিয়াজনিত রোগনিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় অনেক উন্নতি করেছে। মানুষের মধ্যেও সচেতনতা আছে। তাই এখন মৃত্যু নেই বললেই চলে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!