শব্দদূষণ নীরবে সহ্য করেন নোয়াখালীবাসী

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
  • 204 পাঠক

—————————————————————

আইন কঠোর, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দুর্বল

—————————————————————

দিশারী ডেস্ক। ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

শব্দদূষণ রোধে কঠোর বিধিমালা থাকলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার দুর্বলতার কারণে ভুগছে সাধারণ মানুষ। খোদ জেলা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকার আশপাশে বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র চললেও নীরবে সহ্য করে নেন নগরবাসী।

এছাড়া জেলার সর্বত্রই, গ্রামের আনাছে কানাছেও বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী বিক্রয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চ শব্দের মাইকিং। সেসব শব্দে বাসা, বাড়িতে টিকে থাকাটাও প্রায় দায় হয়ে পড়ছে বলে জানান অনেকে।

ভুক্তভোগীরা এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন। পাশাপাশি আইন-বিধিমালা সম্পর্কেও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পূর্ণ ধারণা নেই বলেও তারা মনে করেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, অতিরিক্ত শব্দদূষণ শিশুসহ সব বয়সের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয়, কর্মক্ষমতা কমে যায়, মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায় এবং বিশ্লেষণক্ষমতা কমে যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব নয়েজ কন্ট্রোলের তথ্য অনুযায়ী, স্নায়ুর সমস্যা, আলসার, মাথাব্যথা, উচ্চরক্তচাপ, আত্মহত্যার প্রবণতা, হৃদরাগের মতো জটিল রোগের কারণ হতে পারে উচ্চমাত্রার শব্দ। এমনকি মাতৃগর্ভে থাকা শিশুরও জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকার দিনের বেলার শব্দের সহনীয় মান ৫৫ ডেসিবল। আর রাতের বেলা ৪৫। অথচ এর চেয়ে কয়েক গুণ উচ্চমাত্রার শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে নগরবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ইট ভাঙার মেশিনের শব্দ সহনীয় মাত্রার চেয়ে কমপক্ষে ১০ গুণ, অর্থাৎ ৪৫০ ডেসিবল। অথচ এই শব্দ সঙ্গে নিয়ে থাকতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

শহরের একটি আবাসিক এলাকার ভেতরে টানা দুই দিন ধরে একটি বাড়ির সামনে এই উচ্চমাত্রার ইট ভাঙার মেশিন চলে। এতে আশপাশ এলাকার মানুষ অস্থির হয়ে যায়। শিশুরা দুই কান চেপে ধরে সময় কাটায়। রাস্তা দিয়ে হাটাচলার সময় মানুষ উচ্চশব্দে ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে থাকে। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফোনে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

এভাবে অভিযোগের প্রতিকার পাওয়া যায় না বলেই সাধারণ মানুষ অভিযোগ দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন আকবর হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী। নাছির উদ্দিন নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর শব্দদূষণে ব্যবস্থা নেয়, এটা সাধারণ মানুষ জানেও না।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় কী আছে :

নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বিধিমালায় বলা আছে, আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে উক্ত এলাকায় নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। সন্ধ্যে ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মিকচার মেশিনসহ নির্মাণকাজে ব্যবহৃত অন্যান্য যন্ত্র বা যন্ত্রপাতি চালানো যাবে না। ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন ও মিকচার মেশিন ছাড়া নির্মাণকাজে ব্যবহূত যন্ত্র বা যন্ত্রপাতি উক্ত এলাকার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সম্মতি নিয়ে সময় নির্ধারণপূর্বক নীরব এলাকায় নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা বা চালানো যাবে। সে হিসেবে আবাসিক এলাকায় কোনোভাবেই ইট ভাঙার মেশিন চালানোর সুযোগ নেই।

বিধিমালায় বলা আছে, বিধি লঙ্ঘনকারীকে উক্ত লঙ্ঘন বন্ধ করার জন্য তাত্ক্ষণিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা, আইন এবং এই বিধিমালার বিধানাবলি সাপেক্ষে মৌখিক বা লিখিতভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারবেন এবং উক্তরূপ নির্দেশ পালনে যন্ত্রপাতি ব্যবহারকারী বা বিধান লঙ্ঘনকারী বাধ্য থাকিবেন।

আইনে শাস্তির বিষয়ে যা বলা আছে :

২০০৬-এর বিধিমালার ধারা ১৭ অনুযায়ী, শব্দের মাত্রা অতিক্রম করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যেকোনো সময়ে যেকোনো ভবন বা স্থানে প্রবেশ করে অপরাধ সংঘটনে ব্যবহূত যন্ত্রপাতি আটক করতে পারবেন এবং দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে প্রথম অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবেন এবং পুনরায় একই অপরাধ করলে অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরে পরিচালক (আইন) খোন্দকার মো. ফজলুল হক বলেন, আইন অমান্যকারীকে ১৫ লাখ টাকার, ১৫ বছর পর্যন্ত জেল-জরিমানর বিধান রয়েছে।

নোয়াখালীর উপ-পরিচালক বলেন, কোথাও অভিযোগ পেলে জানাবেন। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!