শিশুশ্রম বাড়ার নেপথ্য কারণ কি ?

  • আপডেট সময় বুধবার, জুন ১২, ২০২৪
  • 78 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ১২ জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

সরকারি ও বেসরকারি নানা পদক্ষেপের পরও দেশে শিশুশ্রম সংখ্যা কমছে না। সরকারি হিসেবেই গত ১০ বছরে অনন্ত এক লাখ শিশু শ্রমিক বেড়েছে। ২০১৩ সালে যেখানে দেশে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ জন শিশু শ্রমিক ছিল, সেখানে ২০২৩ সালে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জনে। আইন ও নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে এমনটি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মনে করছেন।

১২ জুন, বুধবার পালিত হচ্ছে ‘ বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস ’। ২০০২ সালে সর্বপ্রথম দিবসটি পালন করা শুরু করে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও)। আইএলও মনে করে, শিশু শ্রমের শিকার শিশুদের দুর্দশার কথা তুলে ধরার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। এ বছর দিবসটির বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য ‘শিশুশ্রম বন্ধ করি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি’।

সূত্রমতে, সরকার শিশুশ্রম-নিরসনের লক্ষ্যে ‘ জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০’ প্রণয়ন করেছে। এ ছাড়া শিশুদের উন্নয়ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘ জাতীয় শিশু নীতি-২০১১ ’, ‘ শিশু আইন-২০১৩ ’, ‌’ বাল্যবিয়ে বিরোধ আইন-২০১৭’ এবং গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষায় ‘ গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ ’ প্রণয়ন করা হয়েছে। তারপরও শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। ১০ বছরে প্রায় এক লাখ শিশুশ্রমিক বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২ এর ফলাফল অনুযায়ী, দেশে শিশুর সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এর মধ্যে ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশু শ্রমিক।
২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। কৃষি, শিল্প ও সেবা, এই তিন খাতেই শিশুশ্রম আছে। এর মধ্যে কৃষিতে এক লাখ ৭০ হাজার, শিল্পে ১১ লাখ ৯০ হাজার এবং সেবায় ১২ লাখ ৭০ হাজার। সরকার ৪৩টি খাতকে শিশুশ্রমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নের অভাব, শিশুশ্রম নিরসনের প্রধান বাধা বলে মনে করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক দুরবস্থাও শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ। গ্রামে কাজের অপ্রতুল সুযোগ, সামাজিক অনিশ্চয়তা, মৌলিক চাহিদা পূরণের অভাব ইত্যাদি কারণে গ্রাম থেকে মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। নদীভাঙন, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। এ জাতীয় প্রতিটি ঘটনা-দুর্ঘটনাই শিশুদের কায়িক শ্রমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাবা-মায়ের স্বল্প শিক্ষা, দারিদ্র্য এবং অসচেতনতার কারণে তারা শিক্ষাকে একটি অলাভজনক কর্মকাণ্ড মনে করে। এ ছাড়া শিশুশ্রমের কুফল সম্পর্কে অভিভাবকদের অসচেতনতা বা উদাসীনতায় দেশে শিশুশ্রম বাড়ছে।

দীর্ঘ ১০ বছর শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করছে উন্নয়ন সংস্থা ‘অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি)’। তাদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শ্রমসহ সকল ধরনের শ্রম থেকে শিশুদের প্রত্যাহার করতে হবে। এ জন্য শিশুশ্রম নিরসনে আইন সংস্কার ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কোনো শিশুকে ১৪ বছর বয়সের আগে কোনো ধরনের শ্রমে নিয়োজিত করা যাবে না। এখনো ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় ১৮ লক্ষ শিশু শ্রমে নিয়োজিত। ওই সব শিশুদের শ্রম থেকে প্রত্যাহারের লক্ষ্যে তাদের পিতামাতার জন্য আয়বৃদ্ধিমূলক কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা, কাজের তালিকা, মজুরি নির্ধারিত থাকতে হবে।

এ বিষয়ে শিশু অধিকার নিয়ে কর্মরত স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক (স্ক্যান) বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল। তিনি বলেন, শিশু শ্রমিকদের আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনে বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হলেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার শিশুশ্রম বন্ধে গত ১২ বছরে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয় করলেও শিশুশ্রম বন্ধ কমেনি, বরং বেড়েছে। এক দশকে দেশে প্রায় এক লাখ শিশুশ্রমিক বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, দরিদ্রতা, অশিক্ষা, অসচেতনতা, আইন প্রয়োগের দুর্বলতা শিশুদের শ্রমের ঠেলে দিচ্ছে। আবার শিশুদের সস্তা শ্রমের জন্য কতিপয় অসাধু ব্যক্তি নানা রকম প্রলোভনে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে টেনে আনে। আইন ও নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নে এটা বন্ধ করা সম্ভব।

শিশুশ্রম বন্ধে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকারি সংস্থাগুলো সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য লায়লা পারভীন সেজুতি। তিনি বলেন, সরকার শিশুশ্রম বন্ধে ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ চলছে। শিশুশ্রম নিরুৎসাহিত করতে সরকার স্কুলগামী শিশুদের নগদ অর্থ, খাবারসহ নানা ধরনের সুবিধা দিচ্ছে। সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এর সুফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!