৫ আগস্টের পর লাপাত্তা যেসব তারকা

  • আপডেট সময় সোমবার, জানুয়ারি ২০, ২০২৫
  • 41 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২০, ২০২৫

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তারপর থেকেই আত্মগোপনে যেতে শুরু করেন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী, নেতাকর্মী, সমর্থকসহ অনেকেই। সেই তালিকায় রয়েছেন অনেক শোবিজ তারকাও।

শোবিজের একটি বড় অংশের বিরুদ্ধে গত সরকারের আমলে সুবিধা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। এরমধ্যে অনেকেই ৫ই আগস্টের পর লাপাত্তা হয়ে গেছেন। তালিকায় প্রথমেই যার নাম চলে আসে তিনি হলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।

গত বছরের শুরুতে শেখ হাসিনা সরকারের একতরফা নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনের আগে ও পরে নানা বক্তব্যের মধ্যদিয়ে আলোচিত হন ফেরদৌস। মাত্র ৭ মাস সংসদ সদস্য থাকতে পেরেছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে হদিস নেই ফেরদৌসের।

শুরুতে বলা হচ্ছিলো, ফেরদৌস ভারতে চলে গেছেন। তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও অভিনেত্রী ঋতুপর্ণার কলকাতার বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। তবে সে গুঞ্জন উড়িয়ে দেন ঋতুপর্ণা। জানান, এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তার বাড়িতে গত এক বছরেও যাননি ফেরদৌস। যদিও তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জনতার চোখকে জানায়, এখনো ভারতেই অবস্থান করছেন ফেরদৌস।

এদিকে সংসদ সদস্য না হলেও চিত্রনায়ক রিয়াজ সব থেকে বেশি অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচারণায়। গত কয়েক বছর ধরেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রচারণায় দেখা মিলেছে তার। সবশেষ বন্ধু ফেরদৌসের জন্য সামনে থেকে প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। তার প্রতিও নানা কারণে অনেকে ক্ষুব্ধ। সে কারণে রিয়াজও লাপাত্তা রয়েছেন ৫ আগস্টের পর থেকে।

গত ৫ মাসেও আড়াল ভাঙেননি এক সময়ের জনপ্রিয় এই চলচ্চিত্র তারকা। রিয়াজের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, ৫ আগস্টের কথা আঁচ করতে পেরে তার আগেই দেশ ছেড়েছেন এ নায়ক। তবে তিনি কোন দেশে গিয়েছেন সেটা পাকাপাকিভাবে বলতে পারেননি কেউ।

এদিকে আওয়ামী লীগ আমলে সর্বোচ্চ প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারের বিরুদ্ধে। এফডিসি, শিল্পী সমিতিসহ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে মুঠোয়বন্দি করতে চেয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ সেলিমের ছত্রছায়ায় নিপুণ নায়িকা থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন। এমনকি গণমাধ্যমকেও তাচ্ছিল্য করতে দেখা গেছে তাকে বিভিন্ন সময়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গায়েব ছিলেন নিপুণও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তার দেখা কম মিলছে। কেউ বলছিলেন নিপুণ ৫ আগস্টের পরই চলে গেছেন লন্ডন।

আবার কেউ বলছিলেন তিনি দেশেই রয়েছেন, আত্মগোপনে। তবে প্রায় পাঁচ মাস পর দেশ ছাড়তে গিয়ে ধরা পড়েন এ অভিনেত্রী। সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে পালাতে গিয়ে ১০ জানুয়ারি সকালে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে ধরা পড়তে হয় অভিনেত্রী নিপুণকে।

বাস্তব জীবনে অভিনয় শিল্পী হলেও বিমানবন্দরে তার নানা কৌশল ও অভিনয় সহজেই নজর কাড়ে গোয়েন্দাদের। পরিচয় গোপন করলেও ধরা পড়ে যান ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই। সেখানেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর লন্ডন যাত্রা বাতিল করে ঢাকায় পাঠানো হয়। যদিও বিয়ষটি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে, বিভ্রান্তিমূলক কথা বলেছেন তিনি। ৫ আগস্টের কয়েকদিন বাদে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘ আলো আসবেই ’-এর একটি স্ক্রিনশট ফাঁস হয়। সেখানে দেখা যায়, আওয়ামী লীগসমর্থিত শিল্পী-সাংবাদিকদের একটি অংশ ছাত্রদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

সেখানে অভিনেত্রী ও নির্মাতা অরুণা বিশ্বাসকে বলতে দেখা যায়, ছাত্রদের ওপর গরম পানি ঢেলে দিতে। বিষয়টি অন্তর্জালে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে তোপের মুখে পড়েন অরুণা বিশ্বাস। তড়িঘড়ি করে দেশ ছেড়ে তিনি কানাডা চলে যান। সেখানেই এখন অবস্থান করছেন। একই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছিলেন আরেক অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি।

আওয়ামী সরকারের পতনের মাসখানেক পর এ অভিনেত্রীকে শিল্পকলা একাডেমির পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তারও আগে সহকর্মীদের তোপের মুখে তিনি বাধ্য হন শিল্পকলা ছাড়তে। সেই ভিডিও ছড়িয়ে যায় নেটমাধ্যমে। পরবর্তীতে নিজের বাসা ছাড়তেও বাধ্য হয়েছেন বলে সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন তিনি। তবে এখন জ্যোতি কোন জায়গায় থাকছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। রয়েছেন আড়ালে।

আরেক আলোচিত নায়ক ও সাবেক চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ৫ আগস্টের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন শো’র উদ্দেশ্যে। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনিও তোপের মুখে পড়েন। বিশেষ করে গত সরকারের আমলে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এমনকি ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাও হয়েছে ! যদিও জায়েদ খান সুদূর আমেরিকা থেকে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এখন অবধি দেশে ফেরার ব্যাপারে কোনো কিছু জানাননি এ নায়ক। অনেক আগেই তার দেশে ফেরার কথা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রেই এখন পর্যন্ত অবস্থান করছেন।

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নিজ জেলায় নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের মনোনয়ন সে সময় পাননি। বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরের প্রশংসা করে পোস্টও দিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে। ৫ আগস্টের পর জনসম্মুখে মাহি খুব কমই আসছেন। তাছাড়া নতুন কোনো সিনেমায়ও তাকে নিয়ে কাজ করছেন না প্রযোজক-পরিচালকরা। সব মিলিয়ে অনেকটা বেকার সময় পার করছেন এ নায়িকা।

তবে ঠিক ঢাকা নাকি গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন মাহি, তার সঠিক তথ্য মেলেনি। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থন ও দলটির মনোনয়ন চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোপের মুখে রয়েছেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, সোহানা সাবা, অপু বিশ্বাস, সুইটি, তারিন, ভাবনাসহ একাধিক অভিনেত্রীও।

সূত্র : অন্য দৈনিক।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!