শিশুখাদ্যের আকাশছোঁয়া দাম

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১২ পাঠক

দিশারী ডেস্ক।। ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।।

লাগামহীনভাবে বেড়েছে শিশুখাদ্যের দাম। ছয় মাসের ব্যবধানে গুঁড়ো দুধ ‘ কাউ অ্যান্ড গেট ’ ও হরলিক্সের কৌটাপ্রতি ১৪০ থেকে ৮০০ টাকা বেড়েছে। এতে অভিভাবকদের ভোগান্তির পাশাপশি শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে এবারই প্রথম নয়, প্রতি বছর শিশুখাদ্যের দাম বাড়ছে। বাজারে তদারকি ব্যবস্থাও তেমন একটা চোখে পড়ে না। ফলে এসব খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।

——————————————————————-

ছয় মাসে কৌটাপ্রতি ১৪০ থেকে ৮০০ টাকা বেড়েছে

——————————————————————-

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার সদিচ্ছা আছে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন থেকে যায়। আগে কিছু কিছু অভিযান হলেও আইন অনুযায়ী অপরাধী শাস্তির আওতায় আসেনি। উল্টো অপরাধে জড়িত ব্যবসায়ীদের রাষ্ট্রীয় প্রধানের সঙ্গে সফরসঙ্গী করে পুরস্কৃত করা হতো। সম্প্রতি অভিযানের সংখ্যা কমেছে। আবার যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তাদের ফলোআপ করা হয় না।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব থেকে কম দাম হরলিক্সের। ছয় বছরের ব্যবধানে হরলিক্স, আপটামিল, নিডো, সেরিলাক ফ্রুটস অ্যান্ড হানি, নিডো, লেকটোজেনসহ অন্তত ৮-৯ আইটেম শিশুখাদ্যের দাম বেড়েছে। ৫০০ গ্রাম হরলিক্সের ১৪০ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪০ টাকা। যা গত নভেম্বরেও বিক্রি হয়েছিল ৫০০ টাকায়। হরলিক্সের মতো ৭০০ টাকা বেড়ে কৌটাপ্রতি লেকটোজেন বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা, ৪ হাজার ৬০০ টাকার নিডো থ্রি প্লাস বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৩০০ টাকা, ১ হাজার ৯৫০ টাকার সেরিলাক ফ্রুটস অ্যান্ড হানি ২ হাজার ১০০ টাকা, নিডো ওয়ান প্লাস ৫ হাজার ১০০ ও প্রতি কৌটা আপটামিল ওয়ান বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়। আগে থেকে চড়া দামে বিক্রি হওয়া ডানো, মার্কস কোম্পানির গুঁড়া দুধ না বাড়লেও কাউ অ্যান্ড গেটে সব থেকে বেশি ৮০০ টাকা দাম বেড়েছে।

একজন পাইকারী দোকানদার জানান, দেশের শিশুখাদ্যের বাজার বহুজাতিক কোম্পানির দখলে। ইউএসএ, ইরান, স্পেন ও ভারতের পণ্যগুলোই মূলত বাজার দখল করে রেখেছে। আমদানিকারকরা খাদ্য আমদানি করে পণ্যের দাম নির্ধারণের ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়ে। যা গেল ছয় মাস থেকেই হয়ে আসছে।

আরেকজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, স্বল্প আয়ে সংসার চালানো যায় না। মাসের শেষের দিকে ঋণ করা এখন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বাসায় তিন বছরের বাচ্চা রয়েছে। পারিবারিক খাবার পছন্দ না করায় পুষ্টিবিদের পরামর্শে বাজারের কৌটাজাত খাবার দিতে হয়। গত এক বছর এসব খাবারের দাম বৃদ্ধি যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আবু তোরাব মো. আবদুর রহিম বলেন, আমদানিকৃত শিশুখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যদিও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে। যেটি সরকারের ব্যর্থতা। তবে নিম্নবিত্তদের ভোগ করার ক্ষমতা নিম্নস্তরে নেমেছে।

এতে কেবল শিশু না, পরিবারের প্রত্যেক সদস্য পুষ্টিহীনতার ভুক্তভোগী। সমাজে অভুক্ততা যত বাড়ছে সামাজিক কলহ তত বেশি বাড়ছে। শিশুরা পুষ্টিহীনভাবে বেড়ে ওঠে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সম্মখীন হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) আবদুল জলিল বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমরা নিয়মিত অভিযান করে থাকি। এতে সরকার নির্ধারণ করা মূল্য অতিক্রম করলে ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনি। কিন্তু ভোক্তা আইনে আমদানিকৃত পণ্যে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করলে আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে আমদানিকৃত পণ্যে এনবিআর মূল্য নির্ধারণ করলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের আপত্তি থাকে না।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!