আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার উপায়

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, জুন ২৯, ২০২১
  • 729 পাঠক

মহান আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষের জন্য অফুরন্ত নিয়ামতের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিনিয়ত আমরা তার নিয়ামত দ্বারা উপকৃত হই। এই নিয়ামতের সুবিধা ভোগের বিপরীতে বান্দার কর্তব্য হলো আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। মানুষ নিজেই এই কৃতজ্ঞতা আদায়ের সুফল পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

তবে আল্লাহর এই কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হয় প্রসন্ন হৃদয়ে, বিনয়-নম্রতার সঙ্গে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পন্থা অনুসরণ করে। যারা এভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারে তারাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। তাদের জীবন হয় সুখময়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘…শিগগিরই আল্লাহ শোকর আদায়কারীদের প্রতিদান দেবেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৪)

রাসুল (সা.)-এর জীবনে কৃতজ্ঞতা : প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা তাকে নিষ্পাপ করে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে ইহকাল ও পরকালে নিজের রহমতে আবদ্ধ করে রেখেছেন। তিনিও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে দেরি করেননি। আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর নবী (সা.) রাতে এত বেশি সালাত আদায় করতেন যে তার পদযুগল ফেটে যেত। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের ক্রটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবু আপনি কেন এত ইবাদত করছেন? তিনি বলেন, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮৩৭)

আল্লাহর জিকির ও অন্য ইবাদতের মতো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) একবার মুআজ (রা.)-কে বলেছেন, হে মুআজ, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে ভালোবাসি। অতঃপর হে মুআজ, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে তুমি প্রত্যেক সালাতের শেষে এই দোয়া পাঠ করবে—‘আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনে ইবাদাতিকা।’ অর্থ : হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তোমার জিকির, শুকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) এবং ইবাদত করতে সাহায্য করো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২৪)

অকৃতজ্ঞ হওয়া শয়তানের কাজ : কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা কঠিন কোনো বিষয় নয়; বরং এটি উদ্দেশ্য ও দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে জড়িত। মনের আবেগ ও উপলব্ধি দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আরো বেশি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। পবিত্র কোরআনে ৬০ আয়াতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথা বর্ণিত হয়েছে। শয়তান মানুষের চরম শত্রু। শয়তানের শত চেষ্টা থাকে মানুষকে অকৃতজ্ঞ বানাতে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘(শয়তান বলল) আমি মানুষের কাছে আসব ওদের সামনে থেকে, ওদের পেছন থেকে, ওদের ডান দিক থেকে এবং ওদের বাম দিক থেকে। আপনি দেখবেন ওদের বেশির ভাগ কৃতজ্ঞ নয়।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৭)

আগের নবীদের জীবনে কৃতজ্ঞতা : কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা পূর্ববর্তী সব নবী-রাসুলের চরিত্রের ভূষণ ছিল। আল্লাহ তাআলা দাউদ (আ.)-কে বলেছিল, ‘হে দাউদ-পরিবার, কৃতজ্ঞতাসহকারে কাজ করে যাও। (যদিও) আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ১৩)

দাউদ (আ.) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি আপনার শুকরিয়া কিভাবে আদায় করব? আমার ভাষাগত ও কর্মগত শুকরিয়া তো আপনারই দান। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে দাউদ, এখন তুমি আমার শুকরিয়া আদায় করেছ। কেননা আমার যথাযথ শুকরিয়া আদায়ের ক্ষেত্রে তোমার অক্ষমতাকে উপলব্ধি করতে পেরেছ এবং মুখে তা স্বীকার করেছ। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

নুহ (আ.) সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের সন্তান, যাদের আমি নুহের সঙ্গে নৌকার উঠিয়েছিলাম এবং নুহ একজন কৃতজ্ঞ বান্দা ছিলেন।’ (সুরা ইসরা, আয়াত : ৩)

ইবরাহিম (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই ইবরাহিম ছিলেন এক সম্প্রদায়ের প্রতীক, সব কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহরই অনুগত এবং তিনি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। তিনি ছিলেন আল্লাহর নিয়ামতের শোকরকারী। আল্লাহ তাকে মানোনীত করেছিলেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১২০-১২১)

কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপায় : আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বিভিন্ন উপায় আছে। যেমন—

১.   কলব বা অন্তরের মাধ্যমে অর্থাৎ নিয়ামতদাতার নিয়ামত পেয়ে অন্তরে শুকরিয়া আদায় করা। এর পদ্ধতি হলো, আল্লাহকে ভয় করা, তাঁর অবাধ্যতার মানসিকতা না থাকা এবং তাকওয়া অবলম্বন করা।

২.   ভাষার মাধ্যমে। অর্থাৎ মুখে নিয়ামতের শোকরিয়া প্রকাশ করা, গণনা করা ইত্যাদি। বুজুর্গ ব্যক্তিরা নিজের জবান দিয়ে রাতের পর রাত আল্লাহর প্রশংসা করেছেন। ফুজাইল ইবনে আয়াজ (রহ.) ও ইবনে উয়াইনা (রহ.) একবার রাতে আল্লাহর প্রশংসা করার জন্য বসেছিলেন। তাঁরা আল্লাহর প্রশংসা করতে করতে সকাল করে ফেলেন।

৩.   অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে শুকরিয়া হলো সালাত আদায় করা ও বেশি বেশি নেক আমল করা।

মানব জীবনের বিভিন্ন স্তরে কৃতজ্ঞতার বিধান : রাসুল (সা.) জীবনের প্রতিটি মূহূর্তে কার্যকারণ পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন নতুন পরিস্থিতিতে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। যেমন—তিনি ঘুম থেকে উঠে বলতেন, সব প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি আমাদের মৃত্যু দেওয়ার পর আবার জীবন দান করেছেন। আর তাঁর কাছেই তো আমাদের একত্র করা হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১১২)

অনুরূপভাবে খাবার গ্রহণ করার পর, নতুন জামা পরিধানের পর, সফর থেকে ফিরে এসে এ রকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন তিনি। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ওই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে বান্দা কিছু খেলে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং কিছু পান করলেও আল্লাহর প্রশংসা করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৩৪)

লেখক : সহকারী শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা), চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!