চলচ্চিত্র : কেউ প্রেম আর কেউ নেতৃত্বে ব্যস্ত

  • আপডেট সময় শনিবার, জুলাই ২৪, ২০২১
  • 800 পাঠক
———–

দেশের চলচ্চিত্র দুনিয়ায় কাজের পরিমাণ কমলেও সমিতি নিয়ে ব্যস্ততা আর প্রেমের পরিমাণ বেড়েছে। কাজ কমেছে বলে অনেকে পড়েছেন বিপাকে।

কিছু নায়িকা কাজের অভাবে অর্থ সংকট উত্তরণের জন্য শুধু চলচ্চিত্রের মানুষের সঙ্গে প্রেমের গন্ডি সীমাবদ্ধ রাখছেন না। শিল্পপতি-কোটিপতির দুয়ারে প্রেমের বারতা নিয়ে হাজির হন। বর্তমানে চিত্রনায়িকা পপির নতুন প্রেম-বিয়ের খবর অস্থির করে তুলেছে চিত্রজগৎকে।

এক বছর আগে নাকি ষাটোর্ধ্ব একাধিকবার বিবাহিত তিন সন্তানের জনক এক প্রকৌশলী শিল্পপতিকে গোপনে বিয়ে করেছেন পপি। বারিধারায় প্রকৌশলীর দেওয়া আলিশান ফ্ল্যাট আর ধনসম্পদের সাগরে ভাসছেন এখন এই নায়িকা। তাঁর প্রেমের খবর কানে কানে পৌঁছে গেলে তিনি নিজেকে আড়াল করে ফেলেন।

২০১৯ সালের দিকে তিনি ইস্কাটনের বাসা ছেড়ে বারিধারা ডিওএসএইচের ফ্ল্যাটে ওঠেন। গুঞ্জন ওই প্রকৌশলীই পপিকে উপহার হিসেবে ফ্ল্যাটটি দিয়েছেন। পপির মোবাইল ও ফেসবুক অ্যাকাউন্টও বন্ধ। এবার শোনা যাচ্ছে পপি মা হতে চলেছেন। পপি অবশ্য ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই প্রেমের মধ্যেই আছেন।

নব্বইয়ের দশকে নায়ক শাকিল খান থেকে শুরু করে ২০১৫ সালে নায়ক জায়েদ খান পর্যন্ত তাঁর প্রেমের গল্প গড়িয়েছে। পপির সঙ্গে প্রেমের ভাটা পড়লে জায়েদ চুটিয়ে প্রেম করেন মাহীর সঙ্গে এমন গুঞ্জনও রয়েছে। তখন এ নায়িকার সঙ্গে জায়েদ খানের কিছু ছবিও এসেছে মিডিয়ায়। বেশির ভাগ ছবিই রয়েছে কোনো না কোনো অনুষ্ঠানের। এদিকে জায়েদের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন শেষ হওয়ার পরই মাহীর সংসার ভাঙে।

আবার স্বামী মাহমুদ পারভেজ অপুর সঙ্গে বিচ্ছেদের রেশ কাটতে না কাটতেই মাহীর দ্বিতীয় বিয়ের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। গাজীপুর চৌরাস্তা অঞ্চলের প্রভাবশালী এক পরিবারের সদস্য তরুণ রাজনীতিক-ব্যবসায়ীকে নাকি বিয়ে করেছেন এই অভিনেত্রী।

তবে বিষয়টি মাহী অস্বীকার করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘না। বিয়ে হয়নি। আমরা অনেক ভালো বন্ধু।’ রাকিব সরকার ও মাহিয়া মাহী বন্ধু বটে, তবে অপুর সঙ্গে বিচ্ছেদের আগে বা পরে বন্ধুত্ব গড়িয়েছে প্রণয়ে।

বেশ কিছুদিন ধরে শাবনূরের ফেসবুকে এই অভিনেত্রী একটি ছেলের ছবি নিয়মিত পোস্ট করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে এখন গুঞ্জন চরমে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকা শাবনূর মুঠোফোনে জানালেন তরুণটির নাম সিয়াম। ফেসবুকেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তাঁর ইচ্ছা চলচ্চিত্রে কাজ করবে। তাই তাঁকে চলচ্চিত্রে নায়ক করে নিয়ে আসাই তাঁর ইচ্ছা। অন্যকিছু ভাবার মতো কিছুই হয়নি।
শাবনূর আক্ষেপ করে বলেন, ‘যাঁরাই এই তরুণকে নিয়ে নানা কিছু ভাবছেন, তাঁদের এত সন্দেহ করার মতো কিছু নেই। আমার মাধ্যমে কেউ যদি নায়ক হওয়ার সুযোগ পায়, তাহলে কেন করব না।’

এদিকে ২০১৭ সাল থেকেই শাকিব-বুবলীর প্রেমকাহিনি চাউর আছে। বুবলী আড়ালে চলে যাওয়ার পর শাকিবের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্কের গোড়ায় ঘি ঢেলে আগুনকে উসকে দেয় দুষ্ট লোকেরা।

বুবলী মিডিয়া কাছে এ বিষয়টিকে কল্পকাহিনি বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘অপেক্ষা করুন, সময় হলেই রহস্যের জট খুলবে। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা না-ই বলি। সময়ের সঙ্গে সবকিছুই পরিষ্কার হবে।’

এদিকে নায়িকা হিসেবে দীঘির চিত্রজগতে অভিষেক ঘটতেই তাঁকে নিয়ে শুরু হয় প্রেমের গল্প। গত বছর শান্ত খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ নামের এক ছবিতে নায়িকা হিসেবে নাম লেখান দীঘি। তখনই এই নায়কের সঙ্গে তাঁর প্রেমের গুঞ্জন চাউর হয়।

এ বিষয়ে দীঘির উত্তর ছিল এমন, ‘এসব গুজবে আমি কান দিই না। যখন প্রেম হবে তখন এমনি সবাই জানবে।’ তবে চলচ্চিত্র জগৎ এখন যেদিকেই যাক, এখানে কাজ না থাকলেও প্রেম কিন্তু থেমে নেই। এমন কটাক্ষ রসিকজনের।রয়েছে নায়িকা পরীমনির মধ্যরাতের মদপানসহ নানা ঘটনাও। আবার নায়িকা পূর্ণিমার একাকীত্বের খবরও নানামহলে নানা খবর ছাউর করছে।রয়েছে  নায়িকা জয়ার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নাটকীয় ক্যারিয়ার রচন।

এ কারণে দু:খ করে এ জগতের এক বাসিন্দা বলেন, চলচ্চিত্র জগতে সেই নায়ক রাজ্জাক, ইলিয়াস কাঞ্চন, শাবানারা আর ফিরে আসবেননা। এখন যারা আসেন তাদের কাছে একাধিক বিয়ে কোন ব্যাপারইনা। বিয়েটা তাদের কাছে একটা খেরার পুতুল।প্রায় নায়িকাই অর্থের লোভ-লালসা আর উচ্চাকাঙ্খা চরিতার্থ করতে গিয়ে দেশের কতেক দুশ্চরিত্রবান শিল্পপতি ও ধনার্ঢ্যদের শয্যাসঙ্গী হচ্ছেন। অনেকে চুক্তিভিত্তিক স্ত্রী হয়ে দেশ বিদেশও সফর করছেন।

আবার প্রায় নায়িকাই বলে বেড়ান, ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। কেউ কিচ্ছু মনে করলেও তাতে কিচ্ছু যায় আসেনা। আসলে সমাজ সভ্যতায় নষ্টামী, ভন্ডামী আর ভাওতাবাজির ছোঁয়ায় ভরে গেছে বলেই এসব চরিত্রহীনদেরও নকল চরিত্রের অভিনীত ছবি আমাদের দেখতে হচ্ছে।

এখানে কেউ আর রাজ্জাক হতে চাইনা। কেউ চাইনা শাবানা থাকতে। সবাই ভারতীয় নায়ক নায়িকাদের নকল করতে করতে আসলত্বই হারিয়ে চলছে।

নেতৃত্ব নিয়েই ব্যস্ত তাঁরা…

করোনার কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে স্থবির হয়ে আছে চলচ্চিত্র জগৎ। ছবি নির্মাণ ও মুক্তি কমেছে এবং প্রায় সব সিনেমা হলই বন্ধ রয়েছে। তবে ছবি মুক্তি বা নির্মাণ তেমন না থাকলেও এফডিসি কিন্তু সমিতিকে ঘিরেই সরগরম থাকে সারা বছর।

এখানে রয়েছে অর্ধডজনেরও বেশি চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক সমিতি। যদিও এফডিসি কেপিআইভুক্ত এলাকা হওয়ায় এখানে সমিতি করার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরকারের জ্ঞাতসারেই চলছে সমিতির কাজকর্ম।

চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের কথায় ছবি নির্মাণ বা মুক্তি চলচ্চিত্রকারদের কাছে এখন মুখ্য বিষয় নয়, তাঁদের প্রধান চিন্তা হলো কীভাবে সমিতির নেতা হওয়া যায়, নেতৃত্বে গিয়ে কতটা ফায়দা হাসিল করা যায়। চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বলছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ আর প্রদর্শনের জন্য সমিতির প্রয়োজন কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ পৃথিবীর কোনো দেশে, এমন কি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো এত বড় একটি রাষ্ট্রেও সমিতির কোনো অস্তিত্ব নেই।

ভারতজুড়ে চলচ্চিত্রের স্বার্থরক্ষায় রয়েছে একটি মাত্র সংগঠন। যার নাম ‘ইন্ডিয়ান মোশান পিকচার অ্যাসোসিয়েশন’ (ইমপা)। আর আমাদের মতো ছোট একটি দেশে রয়েছে চলচ্চিত্রের কম করে হলেও ২০টি সমিতি।

এফডিসিতে প্রদর্শক সমিতি ছাড়া অন্যসব সমিতির অফিস রয়েছে। এগুলোর ভারে সংস্থাটি এখন জর্জরিত। সেখানে চলচ্চিত্রকাররা গালগল্প, এক সমিতি অন্য সমিতির বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি, একে অন্যকে বয়কট, পিকনিক, ইফতার পার্টিসহ নানা আয়োজনের নামে চাঁদা উত্তোলনের মতো স্বার্থ হাসিলের কাজে ব্যস্ত।

এফডিসিতে এখন কোনো চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ‘কী কাজ করছেন’ এমন প্রশ্ন করা হলে জবাব পাওয়া যায়, ‘নারে ভাই, হাতে কোনো কাজ নেই, এখানে এসেছিলাম অমুক সমিতিতে যাওয়ার জন্য, সেখানে বসে একটু গল্প করব, সময় কাটাব, এই আর কি?’ এ কারণে এফডিসিকে এখন চলচ্চিত্রপাড়ার পরিবর্তে সমিতিপাড়া নামেই আখ্যায়িত করছেন অনেকে।

সিনিয়র চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, এফডিসিতে আসলে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা, গবেষণা আর চলচ্চিত্রের আলাপ-আলোচনার জন্য ‘স্টাডি রুম’ করা যায়, সমিতি নয়। আশির দশকে স্টাডি রুম করতেই পরিচালক, শিল্পী, প্রযোজকসহ অনেককে অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে স্টাডির কোনো নাম-গন্ধ নেই। দিব্যি ‘সমিতি’ নাম ব্যবহার করে নির্বাচনসহ অন্যসব কাজ করলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তা দেখেও না দেখার ভান করে আসছে।

এফডিসিতে অফিস বানিয়ে বছরের পর বছর ঘর ভাড়াও বকেয়া রেখেছে বলে এফডিসি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ রয়েছে। সিনিয়রদের কথায় ‘শিল্পীদের প্রধান কাজ হচ্ছে সিনেমার কাজ করা।

সমিতির ব্যাপারটা সেকেন্ডারি। এখন হয়েছে উল্টো, ছবি কম সমিতি বেশি।’ চলচ্চিত্র নির্মাণ না হলেও এফডিসিতে বাড়ছে সমিতির সংখ্যা। আগে ছিল ১৮টি সংগঠন এবং তার নাম ছিল ‘চলচ্চিত্র পরিবার’। তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০টিতে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!