মুমিনের জন্য অল্প আহার যথেষ্ট

  • আপডেট সময় সোমবার, নভেম্বর ১৫, ২০২১
  • 407 পাঠক

মাইমুনা আক্তার 

—————– 

ইসলামে সুস্থ-সবল শরীরে আল্লাহর ইবাদত করার উদ্দেশ্যে সাধ্যমতো উত্তম ও সুস্বাদু খাবার গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের বেশি খাওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। কেননা প্রয়োজনের অধিক খাওয়া দাওয়া স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। লোভ-লালসা বৃদ্ধি করে। অপচয় ও অপব্যয়ে উদ্বুদ্ধ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পানাহার করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মিকদাম ইবন মাদিকারাব (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, পেটের চেয়ে মন্দ কোনো পাত্র মানুষ ভরাট করে না। পিঠের দাঁড়া সোজা রাখার মতো কয়েক লোকমা খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। আর বেশি খাবার ছাড়া যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮৩)

কারণ অপরিমিত খাবার মানুষকে দুর্বল করে তোলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের ৮০ শতাংশ রোগব্যাধি খাবারের কারণেই হয়ে থাকে। অপরিমিত খাবারই মানুষকে দিন দিন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ল্যানসেটে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, দৈনন্দিন যে খাদ্যতালিকা, সেটিই ধূমপানের চেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটায় এবং বিশ্বব্যাপী প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর মধ্যে একটির জন্য এই ডায়েট বা খাবারই দায়ী। (বিবিসি)

সাহাবায়ে কিরাম অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ পছন্দ করতেন না। আতিয়্যাহ বিন আমির আল-জুহানি (মাকবুল) থেকে বর্ণিত, আমি সালমান (রা.)-এর কাছে শুনেছি, তাঁকে আহার করতে পীড়াপীড়ি করা হলে তিনি বলতেন, আমার জন্য যথেষ্ট যে আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, দুনিয়ায় যেসব লোক ভূরিভোজ করে, তারাই হবে কিয়ামতের দিন বেশি ক্ষুধার্ত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৫১)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘কাফির সাত আঁতে আহার করে অর্থাৎ বেশি পরিমাণ খায় আর মুমিন এক আঁতে আহার করে অর্থাৎ কম খায়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৯৩)

বেশি খেলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দুর্বল বা শক্তিহীন হয়ে যায় এবং তাকে অতি অল্প বয়সেই বৃদ্ধ বলে মনে হয়। এ ছাড়া শরীরে হরেক রকম রোগব্যাধি বাসা বাঁধে। শরীর মোটা বা স্থূল হয়ে যায়।

স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের মতে, মানুষের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েক লোকমা খাদ্যই যথেষ্ট। আর একান্তই যদি বেশি খাওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে, তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য, এক-তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা পূর্ণ করে বাকি এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখতে হবে, যা একমাত্র রাসুল (সা.)-এরই নির্দেশ ছিল।

অধ্যাপক রিচার্ড বার্ড গবেষণার পর প্রকাশ করেছেন যে বেশি খাদ্য খেলে নিম্নলিখিত রোগব্যাধির সৃষ্টি হয়—১. মস্তিষ্কের ব্যাধি; ২. চক্ষুরোগ; ৩. জিহ্বা ও গলার ব্যাধি; ৪. বক্ষ ও ফুসফুসের ব্যাধি; ৫. হৃদেরাগ; ৬. যকৃৎ ও পিত্তের রোগ; ৭. ডায়াবেটিস; ৮. উচ্চ রক্তচাপ; ৯. মস্তিষ্কের শিরা ফেটে যাওয়া; ১০. দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা; ১১. অর্ধাঙ্গ রোগ; ১২. মনস্তাত্ত্বিক রোগ; ১৩. দেহের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যাওয়া। (সূত্র : সুন্নাতে রাসুল ও আধুনিক বিজ্ঞান)

আমাদের উচিত, খাবারসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (সা.)-এর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!