১. আল্লাহ যে বান্দাকে সম্পদ ও জ্ঞান দান করেছেন। অতঃপর সে তাতে (সম্পদ আয় ও ব্যয় করার ক্ষেত্রে) প্রতিপালককে ভয় করে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে, সে তাতে আল্লাহর অধিকার স্বীকার করে। এটাই সর্বোত্তম স্তর।
২. যে বান্দাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন, কিন্তু সম্পদ দান করেননি। তবে তার নিয়ত পরিশুদ্ধ। ফলে সে বলে, যদি আমার সম্পদ থাকত, তবে আমি অমুক কাজ করতাম। তাকে তার নিয়ত অনুসারে সওয়াব দেয়া হবে। প্রতিদান লাভে দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির মতো। অর্থাৎ দান-সদকা ও আর্থিক ইবাদত করতে না পারলেও আল্লাহ তাকে সওয়াব দিয়ে দেবেন।
৩. যে ব্যক্তিকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু জ্ঞান দান করেননি। ফলে সে জ্ঞানহীন অবস্থায় সম্পদ ব্যয় করে। সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে না এবং তাতে আল্লাহর অধিকার আছে, তা-ও সে জানে না। এই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট।
৪. যে ব্যক্তিকে আল্লাহ জ্ঞানও দেননি এবং সম্পদও দেননি। সে বলে, আমার সম্পদ থাকলে আমি অমুক ব্যক্তির তথা তৃতীয় জনের মতো (পাপ কাজ) করতাম। সে তার নিয়ত অনুসারে প্রতিদান পাবে এবং তাদের উভয়ের পরিণতি একই রকম হবে। অর্থাৎ মন্দ কাজ না করেও সে পাপের ভাগীদার হবে।
উল্লিখিত হাদিসে মানুষ ও পৃথিবীতে তাদের প্রাপ্তিকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণি হলো যাদের জ্ঞান ও সম্পদ উভয়টি দেওয়া হয়েছে। এখানে জ্ঞান দ্বারা দূরদৃষ্টি, বিবেক-বুদ্ধি ও গভীর বোধ-উদ্দেশ্য, যা মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে, তাকে পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করে। তার জ্ঞান তাকে বোঝায় সম্পদ মাধ্যম, গন্তব্য নয়। সে সম্পদের ক্ষেত্রে প্রতিনিধি মাত্র। নিশ্চয়ই সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ।
সুতরাং তার সম্পদে আল্লাহর সুদৃঢ় অধিকার আছে। ফলে সে সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে, সে নিজের প্রতি সুবিচার করে এবং জ্ঞান ও সম্পদ দ্বারা মানুষের প্রতি সুবিচার করে। এটাকেই হাদিসে সর্বোত্তম স্তর বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ মর্যাদায় প্রথম শ্রেণির মতো। তারা হলো যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তবে সম্পদ দেওয়া হয়নি। ফলে তারা অর্থ ব্যয় করতে পারে না, দান করতে পারে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে পারে না। তবে তাদের এসব কাজ করার নিয়ত থাকে। কেননা জ্ঞান থাকায় তারা জানে আল্লাহ এসব কাজে সন্তুষ্ট হন।
নিয়তের বিনিময়ে আল্লাহ তাদের উপযুক্ত প্রতিদান দেন। তবে নিয়ত মনের ভেতর উঁকি দেওয়া বা ভাসমান কোনো বিষয় নয়। বরং নিয়ত হলো সুদৃঢ় ইচ্ছা। মনের গভীরে যা স্থান করে নেয়। জ্ঞানী ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনা ও আগ্রহ-উদ্দীপনায় নেক কাজের ইচ্ছা প্রবল থাকে। এ জন্য আল্লাহ তাকে প্রথম জনের মতো উত্তম প্রতিদান দেবেন।
তৃতীয় শ্রেণি, যাদের সম্পদ দেওয়া হয়েছে তবে জ্ঞান দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ সে এমন উপকারী জ্ঞান থেকে বঞ্চিত ছিল, যা তাকে আল্লাহভীতি শেখাবে, তার দৃষ্টির জ্যোতি হবে, ভালো কাজের আগ্রহ তৈরি করবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। হাদিসের ভাষায় এটাই নিকৃষ্টতম স্থান। তার এই অধঃপতনের কারণ হলো অজ্ঞতার মধ্যে ডুবে থাকা এবং জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া।
জ্ঞান না থাকায় সে জানে না তার সম্পদে আল্লাহর অধিকার আছে, সে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে না, সম্পদ দ্বারা অন্যের প্রতি সুবিচার করে না এবং সম্পদ অর্জন ও ব্যয়ে তার প্রতিপালক মহান আল্লাহকে ভয় করে না। ফলে তার সম্পদ ও প্রাচুর্য তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এমন সম্পদ তার না থাকাই তার জন্য কল্যাণকর ছিল। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাকে যে সম্পদ দান করেছিলেন, তা দ্বারা সে জান্নাতের পাথেয় অর্জন করতে পারত। কিন্তু তা না করে সে জাহান্নামের পথ প্রশস্ত করেছে।
চতুর্থ শ্রেণির মানুষকে জ্ঞান ও সম্পদ কোনোটাই দান করা হয়নি। কিন্তু তার অজ্ঞতা ও অন্ধত্বের কারণে তার প্রত্যাশা ছিল যদি সে সম্পদ লাভ করে, তবে তা অবশ্যই প্রবৃত্তিপূজা ও পাপ কাজে ব্যয় করবে। ঠিক যেমনটি করে তৃতীয় শ্রেণির মূর্খ ধনী। ফলে সে তাদেরই দলভুক্ত হয়ে যায়। মন্দ নিয়তের কারণে সে তাদের উভয়ের পাপের ভাগ সমান হয়ে যায়। এই ব্যক্তি সবচেয়ে নির্বোধ ও বোকা। সে তার পরকালকে নষ্ট করেছে অথচ পার্থিব জীবনেও তার কোনো অর্জন নেই। তার মন্দ পরিণতির জন্য তার মন্দ নিয়ত ও খারাপ ইচ্ছাই শুধু দায়ী। নিঃসন্দেহে সে-ই সবচেয়ে হতভাগ্য, যে পৃথিবীতে দরিদ্রের জীবন যাপন করে এবং পরকালেও তার জন্য প্রস্তুত থাকে জাহান্নামের শাস্তি।
হাদিসের ব্যাখ্যা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, প্রথম দুই শ্রেণি সৌভাগ্যবান। তাদের জ্ঞান ও জ্ঞানানুযায়ী তাদের আমল তাদের সৌভাগ্যের কারণ হয়েছে। দ্বিতীয় দুই শ্রেণি হতভাগ্য। অজ্ঞতা ও অজ্ঞতার পরিণতি তাদের দুর্ভাগ্যের কারণ হয়েছে।
লেখকের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে
আতাউর রহমান খসরুর ভাষান্তর
Leave a Reply