———————–
মক্কার কুরাইশরা ইসলামের গতিরোধ করার জন্য বিভিন্নভাবে ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি-ধমকি দিয়ে ব্যর্থ হয়। তারা সমস্যা থেকে উত্তরণে নতুন কৌশল অবলম্বনের চিন্তাভাবনা করে।
তাদের মনে এ ধারণা ছিল না যে মুহাম্মদ (সা.) সত্য নবী নয়। বরং তাদের অবস্থান সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তারা বিভ্রান্তিকর সন্দেহে নিপতিত।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ১৪ )
কাজেই তারা দ্বিনের বিষয়ে মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে কিছু সমতা আনয়ন এবং মধ্যপন্থা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিল। তারা রাসুল (সা.)-কে কিছু বিষয় পরিত্যাগ করতে বলার চিন্তা-ভাবনা করল। এতে তারা ধারণা করল যে তারা এবার একটা প্রকৃত সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে।
ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) কাবাগৃহ তাওয়াফ করছিলেন, এমতাবস্থায় আসওয়াদ বিন মুত্তালিব, ওয়ালিদ বিন মুগিরা, উমাইয়া বিন খালাফ ও আস বিন ওয়াইল তাঁর সামনে উপস্থিত হলো।
তারা সবাই ছিল নিজ নিজ গোত্রের প্রধান। তারা বলল, ‘হে মুহাম্মদ (সা.) এসো। তুমি যে মাবুদের উপাসনা করো, আমরাও ওই মাবুদের উপাসনা করি এবং আমরা যে মাবুদের উপাসনা করি তোমরাও সেই মাবুদের উপাসনা করো।
এরপর দেখা যাবে, যদি তোমাদের মাবুদ কোনো অংশে আমাদের মাবুদের চেয়ে উন্নত হন, তাহলে আমরা সেই অংশ গ্রহণ করব, আর যদি আমাদের মাবুদ কোনো অংশে তোমার মাবুদের চেয়ে উন্নত হন, তাহলে তোমরা সেই অংশ গ্রহণ করবে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ সুরা কাফিরুন অবতীর্ণ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, ‘হে কাফিররা! তোমরা যার ইবাদত করো, আমি তার ইবাদত করি না।’ (সুরা কাফিরুন, আয়াত : ১-২)
আবদ বিন হুমায়েদ থেকে একটি বর্ণনা এভাবে এসেছে, মুশরিকরা প্রস্তাব করল যে যদি আপনি আমাদের মাবুদকে গ্রহণ করেন তাহলে আমরাও আপনার আল্লাহর ইবাদত করব। (ফাতহুল কাদির, ইমাম শাওকানি, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৫০৮)
ইবনে জারির (রহ.) তাবারানির এক বর্ণনায় লিখেছেন, মুশরিকরা রাসুল (সা.)-এর কাছে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল, যদি তিনি এক বছর তাদের মাবুদের পূজা করেন তাহলে তারা রাসুল (সা.)-এর রব আল্লাহর ইবাদত (উপাসনা) করবে। এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, ওহে অজ্ঞরা! তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করার আদেশ করছ?’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৬৪)
মহান আল্লাহ তাদের এহেন হাস্যকর কথার এমন স্পষ্ট ও দৃঢ় জবাব দেওয়ার পরও মুশরিকরা বিরত হয়নি। তারা আরো ব্যাপকভাবে প্রচেষ্টা করতে থাকে। এমনকি তারা এ দাবি করল যে মুহাম্মদ যা নিয়ে এসেছেন তার কিছু অংশ যেন পরিবর্তন করেন। তারা বলল, ‘এটা বাদে অন্য আরেকটা কোরআন আনো কিংবা ওটাকে বদলাও।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ১৫)
মহান আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করে তাদের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, আমার নিজের ইচ্ছামতো ওটা বদলানো আমার কাজ নয়, আমার কাছে যা ওহি নাজিল করা হয়, আমি শুধু সেটার অনুসরণ করে থাকি। আমি আমার রবের অবাধ্যতা করলে এক অতি বড় বিভীষিকার দিনে আমি শাস্তির ভয় করি।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ১৫)
আর এ রকম কাজের মহাদুর্ভোগ সম্পর্কে সতর্ক করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমার প্রতি যে ওহি নাজিল করেছি তা থেকে তোমাকে পদস্থলিত করার জন্য তারা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেনি, যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে তার (অর্থাৎ নাজিলকৃত ওহি) বিপরীতে মিথ্যা রচনা করো, তাহলে তারা তোমাকে অবশ্যই বন্ধু বানিয়ে নিত।
আমি তোমাকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত না রাখলে তুমি তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকেই পড়তে। তুমি তা করলে আমি তোমাকে এই দুনিয়ায় দ্বিগুণ আর পরকালেও দ্বিগুণ আজাবের স্বাদ আস্বাদন করাতাম। সে অবস্থায় তুমি তোমার জন্য আমার বিরুদ্ধে কোনো সাহায্যকারী পেতে না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৩-৭৪)
Leave a Reply