মিথ্যা তথ্য প্রচারের ভয়াবহতা

  • আপডেট সময় রবিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২
  • 334 পাঠক

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা   

—————-

প্রযুক্তি এখন সহজলভ্য। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সৎ-অসৎ, ছোট-বড় সবার হাতেই প্রযুক্তি পৌঁছে গেছে। যে কেউ প্রযুক্তির সহায়তায় যেকোনো কিছু ছড়িয়ে দিতে পারে খুব সহজেই। যেহেতু বেশির ভাগ মানুষ অনলাইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই যেকোনো তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়।

এর যেমন ভালো দিক ও উপকারিতা আছে, তেমনি মন্দ ও অপকারিতাও আছে। এর মাধ্যমে যেমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাদের সতর্ক করা যায়, প্রয়োজনীয় বিষয়ে মানুষকে অবহিত করা যায়, তেমনি তথ্য প্রচারকারী মিথ্যবাদী কিংবা ষড়যন্ত্র হলে এর দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকম অস্থিরতা, কখনো কখনো দাঙ্গারও সৃষ্টি হতে পারে। আবার ধর্মীয় বিষয়ে কোনো অজ্ঞ, মূর্খ, ষড়যন্ত্রকারী তথ্য প্রচার করলে মানুষের ঈমানও হুমকির মুখে পড়তে পারে।

kalerkantho

এ কারণে তথ্য প্রচার ও বিশ্বাসে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যেকোনো তথ্য পেলেই তা ভালোভাবে যাচাই না করে বিশ্বাস করা উচিত নয়। শেয়ার করা তো অনেক পরের বিষয়।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! কোনো ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বসো। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়। ’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৬)

এখানে ফাসেকের খবর ভালোভাবে যাচাই করতে বলা হয়েছে। কারণ সে অসত্য খবরও দিতে পারে। তা যাচাই না করা হলে মিথ্যা খবরের ফাঁদে পড়ে কারো ক্ষতি করা হয়ে যেতে পারে। কেউ কেউ ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারে, যা ফিতনার অন্তর্ভুক্ত। সুরা বাকারার ১৯১ নম্বর আয়াতে ফিতনাকে হত্যার চেয়ে গুরুতর পাপ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

অনলাইনে যারা বিভিন্ন খবর প্রচার করে, তাদের বেশির ভাগ মানুষকেই আমরা চিনি না, তাদের মতাদর্শ সম্পর্কেও আমরা জানি না। ফলে তাদের খবরের ব্যাপারে তো আরো বেশি সতর্ক থাকা উচিত। ভালোভাবে যাচাই না করে কোনো তথ্য প্রচারের কারণে কখনো সমাজে মিথ্যা ছড়ানোয় লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। ফলে প্রচারকারীর নামও মিথ্যাবাদীর তালিকায় যোগ হয়ে যেতে পারে।

হাদিস শরিফে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে কোনো কথা শোনামাত্রই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯২)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা মিথ্যাচার বর্জন করো। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে ধাবিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। কোনো ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যাচারকে স্বভাবে পরিণত করলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তার নাম মিথ্যুক হিসেবেই লেখা হয়।

আর তোমরা অবশ্যই সততা অবলম্বন করবে। কেননা সততা নেক কাজের দিকে পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর কোনো ব্যক্তি সর্বদা সততা বজায় রাখলে এবং সততাকে নিজের স্বভাবে পরিণত করলে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তার নাম পরম সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৮৯)

তা ছাড়া কোনো তথ্য যাচাই না করে প্রচার করার কারণে অনেক বড় ধরনের ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ রয়েছে, যার জ্বলন্ত নজির নবীজির যুগে রয়েছে।

সহিহ বুখারির দুই হাজার ৪৬৮ নম্বর হাদিসের বর্ণনা মতে নবীজি (সা.) কোনো এক কারণে এক মাস স্ত্রীদের কাছে না যাওয়ার শপথ করেছিলেন এবং সে সময় তাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তাই তিনি একটি কোঠায় অবস্থান করছিলেন। একেই কেউ কেউ তালাক মনে করে প্রচার করেছে। উমর (রা.) এই খবরে উদ্বিগ্ন হলেও প্রচার করেননি। অথচ খবরদাতা ছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গী এবং মিম্বারের কাছে গিয়ে তিনি কতক সাহাবিকে কাঁদতেও দেখেছেন। উপরন্তু স্বয়ং নবীজিকেও উদ্বিগ্ন দেখা গেছে।

তার পরও তিনি নবীজিকে সরাসরি জিজ্ঞেস না করে তথ্যটির প্রচারে নামেননি। যদি তিনি সেদিন নবীজির কাছে বিষয়টি স্পষ্ট না হয়ে শুধু পরিস্থিতির ওপর অনুমান করে খবরটি প্রচার করতেন বা বিশ্বাস করতেন, তাহলে তিনি অবশ্যই ভুলের সাগরে ডুব দিতেন। মহান আল্লাহ সবাইকে আরো সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!