রেলের বেদখল ৪ হাজার একর জমি

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩
  • 186 পাঠক

বিনা দরপত্রে বরাদ্দের উদ্যোগ
ফের সংশোধন হচ্ছে ‘ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’

অনলাইন ডেস্ক

—————
বেদখল হওয়া প্রায় চার হাজার একর জমি এবার বিনা দরপত্রে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ‘ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ সংশোধন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি খসড়াও তৈরি করা হয়েছে।

সেখানে ব্যক্তি পর্যায়, শিল্প-কারখানা, অ্যাপার্টমেন্ট-শপিংমল ও বহুতল বাণিজিক ভবন নির্মাণ ও জমি দখলকারীদের বিনা দরপত্রে রেলের জমি বরাদ্দ দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ২০২০ সালে প্রণীত নীতিমালায় ভূমি মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করার বিধান ছিল। কিন্তু বর্তমান খসড়ায় রহস্যজনক কারণে সেটি বাদ দেয়া হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকলে সহজেই বরাদ্দ দেয়া যায় না-এমন আশঙ্কা থেকেই বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে রেলে ৬১ হাজার ৮৬০ একর জমি রয়েছে। রেল ব্যবহার করছে ৩১ হাজার ৫৬৯ একর। আর ১২ হাজার একর জমি ইতোমধ্যেই চূড়ান্তভাবে হাতছাড়া হয়েছে। এসব জমি উদ্ধারে অতীতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও কোনো কার্যকর ফল আসেনি। এখন সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১২ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সংশোধিত নীতিমালার খসড়া নিয়ে তিন ঘণ্টা বিশেষ বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন। উপস্থিত ছিলেন রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, মহাপরিচালক কামরুল আহসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৈঠকে খসড়ার ওপর বিস্তারিত আলোচনা হয়। খসড়ায় বলা হয়, অবৈধভাবে যেসব ভূমিদস্যু রেলের জমি দখল করে বহুতল স্থাপনা নির্মাণ করেছে-এরাই রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও নির্ধারিত ফি প্রদান করে জমির বৈধতা পাবে। অর্থাৎ অবৈধ দখলদারদের না সরিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে উলটো জমি বরাদ্দ দেয়া হবে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন খসড়া নীতিমালার অনেক অংশে একমত হননি। খসড়া প্রস্তুতকারী এবং উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, রেলের হাজার হাজার একর জমি চূড়ান্তভাবে বেদখলে চলে গেছে। এখনো হাজার হাজার একর জমি বেদখলে রয়েছে। এমন অবস্থায় রেলের মূল্যবান জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প-কারখানার নামে বিনা দরপত্রে জমি প্রদান সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, যে জমি রয়েছে তা সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করতে হবে। নজর দিতে হবে উদ্ধারকাজে।

এ প্রসঙ্গে রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘স্যারের (রেলপথমন্ত্রী) সভাপতিত্বে ১২ জানুয়ারি এ বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে খসড়া নীতিমালার পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্যার (রেলপথমন্ত্রী) বিষয়গুলোর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নিয়ে আলোচনা করেছেন। বেশ কয়েকটি পয়েন্টের পক্ষে ছিলেন না তিনি।

এক পর্যায়ে তিনি বৈঠক সংক্ষিপ্ত করে ওইদিনের মতো সভাটি সমাপ্ত করেন। আমরা এ খসড়াকে চূড়ান্ত মনে করছি না। হয়তো আরও বহুবার সভা হবে। আমাদের সাফ কথা, রেল ও সরকারের লাভ হবে না এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না।’

ড. হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেও রেলের জমি রক্ষা করতে পারছি না। ইতোপূর্বে প্রায় ১২ হাজার একর রেলের জমি চূড়ান্তভাবে হাতছাড়া হয়েছে। এখনো প্রায় ৪ হাজার একর জমি বেদখলে রয়েছে। দখলকারীরা বহু স্থানে বহুতল ভবন পর্যন্ত নির্মাণ করে ফেলেছে। অবৈধভাবে রেলের জমিতে কী করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়-এমন প্রশ্ন নিশ্চয় আসবে। তবে অবৈধ এসব স্থাপনা যথাযথ উচ্ছেদও করা যাচ্ছে না। ফলে আমরা মনে করছি অবৈধভাবে দখলকৃত জমি উদ্ধারের পাশাপাশি দখলকারীদের মধ্যে নির্ধারিত মূল্যে বরাদ্দ দেয়ার। এতে রেলের আয় হবে, দখলকারীদের সঙ্গে রেল বৈধভাবে চুক্তিতে যেতে পারবে।

তাছাড়া বহুতল শপিংমল, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ খসড়ায় রয়েছে, চূড়ান্ত হবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।’ খসড়ায় বিনা টেন্ডারে দীর্ঘমেয়াদে ৫০ বছরের জন্য জমি ইজারা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যারা অবৈধভাবে জমি দখল করে আছেন তাদের লাইসেন্স দিয়ে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

নীতিমালার ২৪ ধারা সংশোধন করে অবৈধ দখলদারকে বৈধ হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে খসড়ায়। রেলের জমিতে যারা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে রেখেছেন, তারা ২০ গুণ বেশি ফি দিয়ে সেসব স্থাপনার বাণিজ্যিক লাইসেন্স নিতে পারবেন। নির্ধারিত বার্ষিক ফি দিয়ে জমি ব্যবহারও করতে পারবেন।

৩০ ধারার সংশোধনীতে প্রস্তাব করা হয়েছে, অবৈধভাবে দখল করা কৃষিজমি তিনগুণ ফি দিয়ে ইজারা নিয়ে বৈধ করা যাবে। খসড়া নীতিমালার ৫২ ধারা অনুযায়ী খোলা জমির বার্ষিক বাণিজ্যিক ফি এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ১৫ থেকে ১০০ টাকা; আচ্ছাদিত জমি প্রতিবর্গ ফুটে ১৮ থেকে ১৫০ টাকা।

জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইন ও ভূমি) মো. লুৎফর রহমান বলেন, খসড়ায় যা রয়েছে তা চূড়ান্তভাবে নীতিতে পরিণত হবে, বিষয়টা এমন নয়। খসড়া নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা বৈঠক করছি। রেলপথমন্ত্রী রয়েছে, যা কল্যাণকর তা করা হবে। রেলের যে জমি অব্যবহৃত রয়েছে, তা যে কোনো সময় কাজেও লাগতে পারে। আমরা উদ্ধারেও জোর দিচ্ছি। রেলের জমি রক্ষা করতে হবে, বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে জমির ওপর। নতুবা দিনের পর দিন জমি বেদখলে যাবে, যা উদ্ধারে অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!