নারী নির্যাতন বাড়ার পেছনে পরকীয়া ও যৌতুক

  • আপডেট সময় বুধবার, জুলাই ৫, ২০২৩
  • 236 পাঠক

দিশারী ডেস্ক । বুধবার, ০৫ জুলাই ২০২৩

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৮৯ জন নারীকে তাদের স্বামী হত্যা করেছে। এ সময় স্বামীর পরিবার দ্বারা আরো ২৩ জন নারী হত্যার শিকার হন। আর পারিবারিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ৫৫ জন নারী আত্মহত্যা করেন। এই তথ্য আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) কাছ থেকে পাওয়া গেছে।

আসক কর্তৃপক্ষ বলছে, যৌতুক, পরকীয়া, মতের অমিল, ব্যক্তিত্বে সংঘাত—এমন নানা করণে দিনদিন বাড়ছে পারিবারিক নির্যাতন ও নারী হত্যার ঘটনা। তবে এই তথ্যের চেয়ে প্রকৃত ঘটনা অনেক বেশি বলে তারা মনে করেন।

এদিকে, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ১৮ জন নারীকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়। এ সময় যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হন ৩৫ জন নারী। নারীর পারিবারিক নির্যাতন রোধে পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক আন্দোলন জোরদারকরণ ও সরকারের আইনি কাঠামোর কঠিন বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা।

কিছু পরিসংখ্যান :

আসক আরো জানায়, গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৭৫ জন নারীকে তাদের স্বামী হত্যা করে। অর্থাত্ এক বছরে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা বেড়েছে ১৯ শতাংশ। ঐ সময় শুধু যৌতুকের কারণে ২৮ জন নারীকে হত্যা করা হয়। একই সময় যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হন ২৭ জন নারী। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, উক্ত সময় ৩০ জন নারী কেবল যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়। এসময় ১৮ জন নারীকে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়।

যে করণে বাড়ছে নারী হত্যার ঘটনা :আসকের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, বাস্তবে নারীহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা এর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, আমরা জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং আমাদের কিছু সোর্সের মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহ করি। অনেক ঘটনাই পত্রিকায় আসে না। এখন যৌতুকের সঙ্গে পরকীয়ার কারণে নারীহত্যা ও নির্যাতন, আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে। তাছাড়াও মতের অমিল, ব্যক্তিত্বের সংঘাত—পারিবারিক রেষারেষির কারণে বাড়ছে নারীর মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা।

পারিবারিক নির্যাতন দমন আইনের ব্যবহার নেই

আসকের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর নীনা গোস্বামী বলেন, আমরা আইনি কাঠামোর কঠিন বাস্তবায়ন পাই না। শাররিক, মানসিক, আর্থিক, যৌন এই চার রকমের পারিবারিক নির্যাতন ঘটে। নারী আত্মহত্যা করতে যেমন বাধ্য হয়, তেমন তাকে প্ররোচিতও করা হয়। আবার হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চলে। এসব পারিবারিক নির্যাতনের মামলা পরিবারিক নির্যাতন দমন আইনে করা হয় না। এই আইনের কাঠামো মজবুত নয়, আইন সম্পর্কে মানুষের ধারণা নেই।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু বলেন, নারীর মানবাধিকারকে আজও হেলাফেলার চোখে দেখা হয়। ভাবাই হয়, নারীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করা যাবে। যৌতুকশিক্ষা, সামাজিক অবস্থান সবকিছু ছাপিয়ে দাপটের সঙ্গে চলছে। এটি বন্ধে রাষ্ট্রের যেমন কঠিনভাবে আইনপ্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে, তেমন সচেতনতা বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে অনেক গবেষণা করা হয়ে থাকলেও নারীর মানবাধিকার রক্ষা করা যাচ্ছে না, তা দুঃখজনক—বলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামলউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আইনের শাস্তির পাশাপাশি নারী নির্যাতনকারীকে ঘৃণা করার মতো সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!