বাড়ছে মাছের খামার, কমছে চাষের জমি

  • আপডেট সময় বুধবার, মে ২৬, ২০২১
  • 966 পাঠক

নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী : অনেক উপজেলায় মৎস্য খামারের পুকুরে কোন মাছই নেই। কিন্তু মাছ চারে নামে সরকারের হাজার হাজার ভ‚মি দখলে রয়েছে কথিত খামার মালিকদের দৌরাত্ম্যে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা এলাকায় ফসলি জমির চারপাশে বাঁধ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার লাগিয়ে ইচ্ছেমতো খনন করা হচ্ছে পুকুর ও কৃত্রিম জলাশয়। অধিক লাভের আশায় সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে তিন ফসলি কৃষিজমি খনন করে অনেকে মাছের খামার তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এতে ক্রমেই কমছে চাষের জমি এবং জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে বাড়ছে জলাশয়।

গত সাত-আট বছর ধরে ফসলের জমি বিলীন করে পুকুর খননের এই প্রবণতা বেড়েছে। তবে পুকুর খনন ও কৃত্রিম জলাশয় যেভাবে বাড়ছে, তা প্রতিরোধ করা না গেলে ক্রমে ফসলের জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাবে এবং পরিবেশের ক্ষতি হবে।

জেলার সুবর্ণচর, সদর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাউমুড়ি, চাটখিলসহ সব উপজেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলায় মোট কৃষিজমির পরিমাণ লক্ষাধিক একর। শ্রেণিভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছরই কোনো না কোনো ফসলের আবাদ হয়। কিন্তু এসব উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দিনদিন তিন ফসলি উর্বর জমির পরিমাণ কমছে, আর বাড়ছে মাছের খামারের সংখ্যা।

খামারের পুকুরে তারা নিজেরা মাছ চাষ করছেন, আবার কেউবা অর্থের বিনিময়ে মাছ চাষিদের কাছে লিজ দিচ্ছেন। ফসল উৎপাদন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ঝামেলাহীনভাবে অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে জলাশয় দখল ও ভরাট।

ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে মাটি বহনের কারণে ধুলার আস্তরণে বেহাল হচ্ছে গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কগুলো।

জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক এলাকার আকবর হোসেন, ওহিদুর রহমান, জানে আলম মিয়াসহ বেশ কয়েক জন কৃষক জানান, এ উপজেলার অনেক এলাকায় কৃষিজমির মাটি কেটে চারপাশে পাড় তৈরির পর ড্রেজার লাগিয়ে জমি খনন করে কৃত্রিম জলাশয়ে তৈরি করা হচ্ছে মাছের খামার। একের পর এক খনন করা পুকুর ও মাছের খামার গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি।

চরওয়াপদা এলাকার কৃষক জহির মিয়া জানান, তার জমিতে ধান ভালো হয় না। ফসল উৎপাদনে যথেষ্ট শ্রম ও অর্থ ব্যয় করেও কাঙ্খিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই অধিক লাভের আশায় জমি খনন করে কৃত্রিম জলাশয়ে মাছের খামার করে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করছেন।

এদিকে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানান অনেকে।

কবিরহাট উপজেলার মাছচাষি সাহেদ উদ্দিন জানান, এই শুকনো মৌসুমে পুকুর তৈরি করা অনেকটা সহজ। আগে পুকুর খনন করতে অনেক সময় লাগত। কিন্তু এখন জমির মাটি কেটে চারদিকে বাঁধ নির্মাণ করে প্রযুক্তির ব্যবহারে ভেকু দিয়ে দ্রæত একটি পুকুর খনন করা যায়। তাই তিনি এখন জমি কেটে পুকুর তৈরি করছেন মাছ চাষের জন্য।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক বলেন, প্রতি বছরই বাড়ছে পুকুরের পরিধি, কমে যাচ্ছে উর্বর আবাদি জমি। একই সঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ও ভরাট করায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খাঁন বলেন, ফসলের জমি কেটে নির্বিচারে পুকুর খনন কিংবা কৃত্রিম জলাশয় সৃষ্টি করা হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। শুধু আইন দিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন। মানুষকে সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে শিগিগরই পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!