আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে ব্যঙ্গ নয়

  • আপডেট সময় সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২
  • 337 পাঠক

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

———————
আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য -সুরা : রুম, আয়াত : ২২।
ভাষা মহান আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত। এর মাধ্যমে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে। আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি ও শুকরিয়া জ্ঞাপনেও ভাষা অবিচ্ছেদ্য অংশ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর এই মহামূল্যবান নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন।

ইরশাদ হয়েছে, ‘পরম করুণাময়, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে শিখিয়েছেন ভাষা। ’ (সুরা : আর-রহমান, আয়াত : ১-৪)
পৃথিবীতে প্রায় সাত হাজারের বেশি ভাষা প্রচলিত আছে। শুধু এশিয়াতেই আছে ২০০ ভাষা। বিশ্বে ভাষাভাষীর সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলার স্থান পাঁচ নম্বরে। আর বাংলাদেশে বাংলা ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিভিন্ন জেলায় আঞ্চলিক ভাষার প্রচলন।

বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় সম্পদ এর আঞ্চলিক ভাষার সৌন্দর্য। যেগুলোর প্রত্যেকটির রয়েছে নিজস্ব শব্দকোষ ও রীতি। অসাধারণ সব শব্দের বিন্যাস নিয়ে বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষাগুলো আমাদের ভাষার সমৃদ্ধি ঘটিয়েছে। একই শব্দ কত রকমভাবে ব্যবহৃত হয় এবং তা কতটা মধুর শোনায়, তা শুধু প্রতিটি অঞ্চলে গেলেই দেখা ও শোনা যায়। তাই ভাষা বিচারে সেগুলোও একেকটি স্বতন্ত্র ভাষা বলতে চান বিশেষজ্ঞরা।

ভাষার এই বৈচিত্র্যকে মহান আল্লাহ তাঁর কুদরতের নিদর্শনাবলি বলে আখ্যা দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। ’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২২)

মাতৃভাষার প্রতি মানুষের টান স্বভাবগত। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা করার জন্য মানুষ জীবন পর্যন্ত দিতে পারে। প্রতিটি জেলার আঞ্চলিক ভাষাগুলোও এক দিক থেকে নিজ নিজ অঞ্চলের স্বতন্ত্র মাতৃভাষা। কোনো ভাষা নিয়ে ব্যঙ্গ করা সে অঞ্চলের মানুষকে ব্যঙ্গ করার শামিল। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এ ধরনের কাজ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, কোনো সম্প্রদায় যেন অন্য কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম। ’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১১)

মহানবী (সা.) উম্মতকে এ ধরনের কাজের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, ব্যঙ্গ করা মন্দ লোকের স্বভাব। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তির মন্দ প্রমাণিত হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে সে তার অপর মুসলমান ভাইকে তুচ্ছজ্ঞান করে। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২১৩)

কাউকে নিয়ে ব্যঙ্গ করাকে মহানবী (সা.) কতটা অপছন্দ করতেন, তা নিচের হাদিস থেকে আরো স্পষ্ট হয়ে যায়।

আয়েশা (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.)-কে বললাম, সাফিয়্যাহ (রা.)-এর ব্যাপারে আপনার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে এরূপ অর্থাৎ তিনি খাটো। তিনি বলেন, তুমি এমন একটি কথা বলেছ, যা সমুদ্রে মিশিয়ে দিলে তাতে সমুদ্রের রং পাল্টে যাবে। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নকল করলাম। তিনি বলেন, আমাকে এত এত সম্পদ দেওয়া হলেও আমি কারো অনুকরণ পছন্দ করব না। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৫)

কারো সঙ্গে এমন আচরণ করা, যাতে সে কষ্ট পাবে, তা মুসলমানের জন্য হারাম। এগুলো জাহিলি যুগের বর্বর মানুষদের স্বভাব ছিল। যা মানুষকে ধ্বংস করে। আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যারা অপরাধ করেছে তারা মুমিনদের উপহাস করত, আর যখন তারা মুমিনদের কাছ দিয়ে যেত তখন তারা চোখ টিপে বিদ্রুপ করত। ’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ২৯-৩০)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!