দিশারী ডেস্ক।। ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।।
নোয়াখালী ক্ষুদ্র হকার্স সমবায় সমিতিতে সংঘটিত দুর্নীতি, অনিয়ম ও অসাংগঠনিক কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। সমিতির অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের সংঘটিত দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিচার চেয়ে জেলার সমবায় কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সমিতির সাধারণ সদস্য জাফর আহমেদ ভূইয়া।
সংঘটিত সব ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্যে সমিতির সভাপতি ইকরাম উল্যাহ ডিপটিকে দায়ী করেছেন তিনি।
লিখিত অভিযোগে তিনি দাবি করছেন, নোয়াখালী ক্ষুদ্র হকার্স সমবায় সমিতির বর্তমান অনির্বাচিত সভাপতি সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালা, সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর প্রতি সম্পূর্ণরুপে অবহেলা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সমবায় আইনের পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত রয়েছেন।
এতে সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির নামে একতরফা ও অগণতান্ত্রিকভাবে সমবায় আইন ও বিধিমালার মৌলিক নীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের মনগড়া ও স্বীয় স্বার্থ সুবিধায় জড়িয়ে সমিতির সার্বিক শৃঙ্খলা, স্বার্থ, সদস্যদের পারষ্পরিক ঐক্য, সোহার্দ্য, সম্প্রীতি বিনষ্ট করে চলছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এতে বলা হয়েছে, বার্ষিক সাধারণ সভার নামে মনগড়া কার্যকলাপকে সাধারণ সভা বলে গ্রন্থস্থ করা হচ্ছে। যাতে সাধারণ সদস্যদের মতের সম্মিলন নেই। এছাড়া সাধারণ সভার প্রকৃত সদস্যদের থেকে স্বাক্ষর না নিয়ে সদস্যদের প্রতিনিধি হিসেবে আগত ব্যক্তিবর্গ থেকে স্বাক্ষর গ্রহণ কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। বরং এটি স্পষ্টত সমবায় বিধিমালার ব্যত্যয়।
——————————————————————————————————————
অভিযোগ রয়েছে, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে বিশেষ সাধারণ সভার নামে কোন সদস্যকে চিঠি না দিয়ে আলিফ রেঁস্তোরা নামীয় একটি দোকানে চা-চক্রের দাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠিত কথিত সভাকে সাধারণ সভা হিসেবে গণ্য করা অসমীচীন। যাতে বার্ষিক সাধারণ সভা বা বিশেষ সাধারণ সভা নামেও আইনত ও ন্যায়ত শুদ্ধচারিতা নেই।
——————————————————————————————————————
বলা রয়েছে, কোন সদস্যকে ব্যক্তিগত কোন বিষয়ে নোটিশ প্রদান না করে কিংবা কোন ধরনের আলোচনার সুযোগ প্রদান না করে, সদস্যের ব্যক্তিগত নাম শিরোনাম করে কোন সাধারণ সভায় কথিত এজেন্ডা হিসেবে অর্ন্তভুক্তিকরণ সমবায় আইনের পরিপন্থি ও দৃশ্যত একটি প্রতিহিংসাপরায়ণ ঘটনা।
তিনি সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের ব্যর্থতার দায়ে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি ও দায়িত্বশীল লোকজনের বিরুদ্ধে সমবায় আইনের ১৭ নম্বর ধারার ৬ নম্বর উপধারার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে দাবি করে বিহিত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, বিগত সাধারণ সভায় উপ-কমিটি গঠন করার পরেও বর্তমান কমিটি কোন কার্যকরি কমিটির মাসিক সভায় উপ-কমিটির সাথে কোন ধরনের আলোচনা না করাটাও সমবায় আইনের পরিপন্থি। যা সমবায় বিধিমালায় কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এতে সাধারণ সদস্যদের গুরুত্ব তথা সম্মানহানি হয়।
সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমান কমিটির অসাধুপরায়ন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রকৃত তদন্ত কমিটির সদস্যবর্গের নাম উপেক্ষা করে নিজেদের পছন্দমতো ব্যক্তিবর্গ দিয়ে কমিটি গঠন করা মূলত, একটি স্বেচ্ছাচারি কর্মকান্ড বলে প্রতিয়মান হয়। যা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অসাধু কর্মকান্ড সংঘটনের একটি স্বৈরাচারী কায়দা বলে দাবি করেন তিনি।
জাফর আহমেদ ভুূইয়া বলেন, কার্যকরি কমিটির মাসিক সভার অনুমোদন ব্যতিত অডিট রিপোর্টে উত্থাপিত খরচ প্রদর্শন একটি প্রকাশ্য দুর্নীতি ও অন্যায়। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধও।
তিনি দাবি করেন, সমিতির ভিটি বিক্রয়ের টাকা সমিতির আয়ের হিসেবে কিংবা স্থাবর সম্পদের হিসেবে কোনরুপ উত্থাপন করা হয়নি। যা দুর্নীতি, অন্যায় এবং পরিকল্পিত অনিয়ম।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, সমিতির তহবিল হতে ৩৫,৫০,০০০ টাকা খরচের বিল ভাউছার মাসিক সভায় উত্থাপন না করে অডিট নোটে শামিল করাটা একটি অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতি।
এছাড়াও তিনি অভিযোগ করেন, সমিতির ব্যাংক হিসেবে জমা থাকা ১৫, ৫০, ০০০ টাকা আমানত ছিল। কিন্তু বর্তমান কমিটি সাধারণ সভার অনুমোদন ছাড়া আমানত ভেঙ্গে খরচ প্রদর্শন করাটাও সমবায় আইনের পরিপন্থি ও দুর্নীতি।
——————————————————————————————————————
তিনি বলেন, সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ব্যতিত মার্কেট ভাঙ্গা, ভবন নির্মাণ কিংবা স্থানান্তর সমবায় আইনের লঙ্গন। এতে আরো বলা হয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১০ সালে নোয়াখালী পৌরসভা কর্তৃক ৮ তলা ভবনের অনুমোদিত নকশা দীর্ঘ ১৪ বছর পরে কোন ধরনের নবায়ন না করে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করাটা সম্পূর্ণ নিমার্ণ প্রকৌশল বিধি তথা নীতিমালা বিরোধী কর্ম হয়।
এছাড়া ১০ তলা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বর্ণিত এইস কে রিয়েল এস্টেট কোম্পানী ১০ তলা ভবনের নকশা অনুমোদনের কথা থাকলেও, চুক্তিপত্র লঙ্গন করে এবং সম্পূর্ণ পুরোনো নকশা তথা ৮ তলার নকশা দিয়ে ১০ তলা ভবনের উদ্যোগ গ্রহণ করাও একটি অন্যায় এবং জনজীবনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এবং প্রতারণাপূর্ণ কাজ বলে তিনি মনে করছেন।
অপরদিকে, ইমারত বিধি অনুযায়ী যে কোন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন নকশার কার্যকারিতা ৩ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকে। বর্তমানে নোয়াখালী পৌরসভাও ১০ তলা ভবনের নকশার অনুমোদন প্রদান করার আইনগত শুদ্ধতা নেই। যা উর্ধ্বতন দপ্তর হতে অনুমোদন নিতে হয়। এছাড়া, বর্তমান ১০ তলা ভবনের কথিত নকশাও সমিতির সাধারণ সভার কোন ধরনের অনুমোদন নেই।
——————————————————————————————————————
জাফর আহমেদ ভুূইয়া বলেন , সমিতির সাধারণ সভার অনুমোদন ছাড়া কোন দোকান বিক্রয় করতে পারেনা। কিন্তু সমিতির দায়িত্বশীল লোকজন ব্যক্তিগত লাভ, লালসার বশবর্তী হয়ে শতাধিক কক্ষ বিক্রয় করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে, ডেভোলপারের সাথে সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বাসীন থাকাকালে চুক্তিনামায় যেসব শর্ত সংযোজিত হয়েছে, তা গোপণ করে এবং একটা পর্যায়ে সভাপতি ও ডেভোলপার যোগাযোগিভবে একতরফা স্বার্থান্বেষী হয়ে সংশ্লিষ্ট চুক্তিনামার কিয়দাংশ শর্ত বাদ ও রহিত করেন। তদস্থলে মনগড়া শর্তনামা সংযোজন করেছেন। তা জাল ও তঞ্চকতাময় এবং প্রতারণাপূর্ণ ঘটনা হয়। যা সমিতির সাধারণ সদস্যদের অধিকাররহিত করার নামান্তরও বলেও দাবি করছেন তিনি।
তিনি নোয়াখালী ক্ষুদ্র হকার্স সমবায় সমিতির বর্তমান কমিটির সংঘটিত অসাংগঠনিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছেন।
———————————————————————————————————
এসব বিষয়ে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইকরাম উল্যাহ ডিপটিকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন, আমি একটু পরে আপনাকে ফোন দিচ্ছি। এরপর সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোন প্রত্যুত্তর না দেয়ায় তাঁর বক্তব্য দেয়া যায়নি।
Leave a Reply