নীল নদের কাছে যে চিঠি লিখেছিলেন খলিফা উমর (রাঃ)

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১ পাঠক

মুফতি সাইফুল ইসলাম।। ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।।

ইতিহাসের পাতায় মাঝে মাঝে এমন অলৌকিক ঘটনার বর্ণনা আছে, যা শুধুই বীরত্ব বা যুদ্ধের কাহিনী নয়; বরং তা বিশ্বাস, দ্বিধা, মানবিক চিন্তা এবং ঈমানের শক্তি প্রদর্শন করে।

২০ হিজরী সনে, দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর শাসনামলে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল যা আজও মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে মানবিক ও শিক্ষণীয় কাহিনীর মধ্যে ধরা হয়।

সেনাপতি আমর ইবনুল আছ (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম সেনারা মিসরের মাটিতে প্রবেশ করল। তখন মিসরে প্রবল খরা।

নীলনদের পানি লয়হীন শূন্যে সমান, আর স্থানীয় অধিবাসীরা হতাশায় আত্মহারা। তারা প্রচলিত জাহেলী রীতির দিকে চোখ তুলে বলল, হে আমীর ! নীলনদ আমাদের নির্দেশিত নিয়ম অনুযায়ী প্রবাহিত হয়। এই মাসের ১৮ দিন অতিবাহিত হলে আমরা এক যুবতীকে নির্বাচন করি ; তার পিতা-মাতার সম্মতি নিয়ে, তাকে অলংকারে সাজিয়ে, নীলনদে নিক্ষেপ করি। তবেই নদী আবার পানি বহাবে।

আমর ইবনুল আছ (রা.) হৃদয়ে ক্ষোভ ও দুঃখের সংমিশ্রণ অনুভব করে বললেন, এটা ইসলাম নয়। এ প্রাচীন জাহেলী কুসংস্কারের ইসলামে কোনো অনুমোদন নেই। তিন মাস ধরে নদীর বেহাল অবস্থা দেখে মানুষরা দেশত্যাগের কথা ভাবতে লাগল।

সেনাপতি আমর তখন পরিস্থির ভয়াবহতা অনুভব করতে পেরে খলিফা উমর (রা.)-এর নিকট বিস্তারিত বিবরণ পেশ করে পত্র প্রেরণ করলেন।

উত্তরে খলিফা লিখলেন, হে আমর ! তুমি যা করেছ ঠিকই করেছ। আমি একটি পৃষ্ঠা প্রেরণ করছি, যা তুমি নীলনদে নিক্ষেপ করবে।

অতপর সেনাপিতি আমর যখন পত্রটি খুললেন। তখন দেখতে পেলেন তাতে লেখা ছিল

من عمر أَمِير الْمُؤمنِينَ إِلَى نيل مصر أما بعد فَإِن كنت تجرى من قبلك فَلاَ تجر وَإِن كَانَ الله الْوَاحِد القهار هُوَ الَّذِي يُجْرِيكَ فَنَسْأَلُ اللَّهَ تَعَالَى أَنْ يُجْرِيَكَ

আল্লাহর বান্দা, আমীরুল মুমিনীন উমর-এর পক্ষ থেকে নীলনদের উদ্দেশ্যে। যদি তুমি নিজে প্রবাহিত হও, তবে এখন প্রবাহিত হইও না। আর যদি একক সত্তা, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তোমাকে প্রবাহিত করান, তবে আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি তোমাকে প্রবাহিত করেন।

পরদিন, শনিবার সকালে, নীলনদ এক মুহূর্তের মধ্যে ১৬ গজ উচ্চতায় প্রবাহিত হতে শুরু করল। সেই দিন থেকে আজও নীলনদ কখনো শুকায়নি। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে শুধু নদীই নয়, মানুষের মনে ঈমান ও আল্লাহর অনন্ত ক্ষমতার দৃঢ় পরিচয় ফুটে ওঠল।

(তথ্যসূত্র: আল-বিদায়াহ ৭/১০০; তারীখু দিমাশক ৪৪/৩৩৭; তাবাকাতুশ শাফিয়া আল-কুবরা ২/৩২৬)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!