দিশারী ডেস্ক।। ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।।
করোনার ধাক্কায় দেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। এক বছরের ব্যবধানে প্রায় চার হাজার বিদ্যালয় বেড়েছে, যদিও সব ক’টিই বেসরকারি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটিও বাড়েনি। এই সময়ে শিক্ষার্থীও বেড়েছে প্রায় দুই লাখ। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, ঝরে পড়ার হারে অবনতি ঘটেছে। এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়েছে ৩ শতাংশ।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি (এপিএসসি) থেকে এসব তথ্য জানা যায়। গত মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ওঠানামাসহ প্রাথমিক শিক্ষার নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
২০২০ সালে দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি। ওই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। করোনা শুরু হওয়ার পর পরের দুই বছর বিদ্যালয় কমে যায়।
২০২১ সালে সংখ্যাটি নেমে আসে ১ লাখ ১৮ হাজারের কাছাকাছি আর ২০২২ সালে আরও কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৪ হাজারের মতো। তবে ২০২৩ সালে সামান্য (৯৫টি) বাড়ে। আর গত বছর একলাফে প্রায় চার হাজার বেড়ে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাঁড়ায় ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি।
শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও একই রকমভাবে সংখ্যা ওঠানামা দেখা গেছে। ২০২০ সালে দেশে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ছিল ২ কোটি ১৫ লাখের বেশি। ২০২১ সালে তা হঠাৎই সাড়ে ১৪ লাখ কমে যায়। ২০২৩ সালে আরও কমে তা নেমে আসে ২ কোটির নিচে। তবে ২০২৪ সালে আবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ৮৩ হাজারে।
—————————————————————————————————————–
ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগে ঝরে পড়ার হার তুলনামূলক বেশি। ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাতেই ঝরে পড়ার হার ৩০ শতাংশের বেশি।
—————————————————————————————————————-
২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা কমেছে ৮৮৯। এর প্রভাব পড়ে ক্লাসের পড়াশোনায় সার্বিকভাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ : ২৮ হলেও বিদ্যালয়ভেদে শিক্ষকের সংকট আছে। তবু চলছে পড়াশোনা বিভাগভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগে ঝরে পড়ার হার তুলনামূলক বেশি
২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা কমেছে ৮৮৯। এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৪। অথচ সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংকট দিন দিন বাড়ছে। অনুমোদিত ৬৫ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদের মধ্যে ৩৪ হাজারের বেশি এখনো শূন্য ; অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। পাশাপাশি সাড়ে ২৪ হাজারের মতো সহকারী শিক্ষকের পদও খালি।
যদিও সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৫৭ হাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত লাখের বেশি।
সার্বিকভাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ : ২৮ হলেও বিদ্যালয়ভেদে শিক্ষকের সংকট আছে। যেমন হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় অবস্থিত নীরদাময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে এখন মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৯৯। বিপরীতে শিক্ষক আছেন ৫ জন ; অর্থাৎ প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক আছেন।
২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঝরে পড়ার হার কমেছিল। ২০২০ সালে যেখানে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭ শতাংশের বেশি, তা ২০২৩ সালে নেমে আসে ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশে। কিন্তু নতুন শুমারি বলছে, ২০২৪ সালে তা আবার বেড়ে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ছেলেদের ঝরে পড়ার হার বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে ছেলেদের হার ছিল ১৪ শতাংশের বেশি, এখন তা প্রায় ১৯ শতাংশে পৌঁছেছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হার ১ শতাংশের মতো বেড়েছে।
বিভাগভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগে ঝরে পড়ার হার তুলনামূলক বেশি। ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাতেই ঝরে পড়ার হার ৩০ শতাংশের বেশি। জেলাগুলোর মধ্যে নেত্রকোনায় ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি (৪৪ শতাংশ)। এসব অঞ্চলে দারিদ্র্য ও দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থার কারণে ঝরে পড়া বেশি হচ্ছে বলে গবেষকেরা মনে করছেন।
শুমারির সার্বিক তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব মোর্শেদ বলেন, বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী বৃদ্ধির বিষয়টি ইতিবাচক। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও শিক্ষার্থী বেড়েছে। তবে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি উদ্বেগজনক।
বিশেষ করে ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগে ঝরে পড়া বেশি। এতে বোঝা যাচ্ছে, দারিদ্র্য ও দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থার সঙ্গে এর যোগ আছে। পাশাপাশি সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট আরও বেড়েছে। এক বছরে অবসরে যাওয়া শিক্ষকের তুলনায় নতুন নিয়োগ হয়নি। এতে গ্রাম ও দুর্গম অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারকে দ্রুত এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
Leave a Reply