নোয়াখালীতে রেললাইনের ধারে মাদকের বড় হাট

  • আপডেট সময় বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৫ পাঠক

দিশারী ডেস্ক।। ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।।

হাত বাড়ালেই মিলছে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল। মাদকের ব্যাপক বিস্তারের ফলে এসব এলাকায় বেড়ে গেছে চুরি-ছিনতাই। প্রতিনিয়ত চুরি-ছিনতাইয়ের কারণে এলাকাবাসী ও পথচারীরা ভুগছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি, চৌমুহনী ও সোনাপুর রেললাইনঘেঁষা এলাকাগুলোতে মাদকের রাজত্ব চলছে অনেকটা প্রকাশ্যে। বিশেষ করে এসব রেললাইনের দুই পাশে মাদক কারবার বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। রাতে বা দিনে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়ছেন মাদকে। যেখানে-সেখানে চলছে কেনাবেচা ও সেবন। এ যেন মাদকের হাটবাজার।

—————————————————————————————————————-

♦ দিনদুপুরে সেবন ও কেনাবেচা ♦ নেই প্রশাসনের নজরদারি ♦ ট্রেনে এসে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে ♦ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও জড়াচ্ছে

————————————————————————————————————–

চৌমুহনী রেললাইনঘেঁষা বাড়ির মালিক আবদুল আলী বলেন, রেললাইনের পাশে থাকি বলে ভয় আর দুশ্চিন্তা আমাদের নিত্যসঙ্গী। সকাল-সন্ধ্যা সব সময় প্রকাশ্যে বিক্রি হয় মাদক। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। পুলিশের তেমন তৎপরতা চোখে পড়ে না।

সূত্রমতে, রেললাইনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে জনবসতি বেশি, আবার নিরাপত্তাব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল। এ কারণে মাদক কারবারিরা এসব এলাকা নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে। কারণ রেলপথ ব্যবহার করেই এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মাদক পরিবহন ও সরবরাহ সহজ। ফলে রেলপথের দুই পাশে গড়ে ওঠেছে মাদকের নিরাপদ আস্তানা। প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারির অভাবে বাড়ছে মাদকসেবীদের দাপট।

চৌমুহনী রেলওয়ের দায়িত্বশীল এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেলওয়ের পুরো এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জনবল যেমন কম, তারপরও অধিকাংশ বিক্রেতাই বাইরের লোক। তারা হঠাৎ রেললাইন এলাকায় এসে মাদক বিক্রি করে আবার চলে যায়। ফলে অভিযান চালালেও প্রকৃত অপরাধীকে ধরা যায় না। তারপরও আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। তবে রেলপথ ও এর আশপাশে নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

—————————————————————————————————————

জানা গেছে, সোনাপুর রেললাইনসংলগ্ন এসব স্পটে সরবরাহকৃত বেশির ভাগ মাদকই আসে ট্রেনের মাধ্যমে। ট্রেনে মাদক আনা-নেয়া অনেকটাই নিরাপদ বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। অভিযানে সামান্য সংখ্যক বিক্রেতা গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে ফের একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। আবার অনেক সময় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে মোটর সাইকেলের বাহনে এনেও পৌঁছে দেয় পাইকারী কারবারীরা।

—————————————————————————————————————

সোনাপুর রেললাইন-ঘেঁষা এসব এলাকার মাদক বিক্রেতারা নিম্ন শ্রেণির হলেও তাদের আশ্রয়দাতার তালিকায় রয়েছেন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা, বড় ব্যবসায়ী ও গডফাদার। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে খুচরা মাদক বিক্রেতারা গ্রেপ্তার হলেও অন্তরালে থাকা গডফাদাররাই তাদের জামিনের ব্যবস্থা করে। আগে যারা এসব এলাকায় মাদকের কারবার করতেন এখনো কমবেশি তারাই করছেন। শুধু হাতবদল হয়েছে নিয়ন্ত্রণ। আগে যারা নিয়ন্ত্রণ করতেন এখন ভিন্ন গ্রুপ তা করছে।

সরেজমিনে সোনাপুর রেলওয়ে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাদক বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন মাদক কারবারিরা। ক্রেতারাও প্রকাশ্যেই কিনছেন ও সেবন করছেন। এখানে পুলিশ, র্যাব কোন কিছুতেই ভয় করে না তারা।

জানা যায়, পুলিশও ততটা সক্রিয় নয়। পুলিশও মাসে মাসে নাকি টাকা নেয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন নিয়মিত অভিযান চালায় না। এসবের শেল্টার স্থানীয় কতেক রাজনৈতিক খেমোখা নেতা। এসব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়িও নাকি করা যায়না। এসব জানালেন একজন দোকানীসহ ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নোয়াখালীর সবচেয়ে বড় মাদক স্পট চৌমুহনী। এখানে বস্তিগুলোর অধিকাংশ ঘরে ও পান-সিগারেটের দোকানে প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি হচ্ছে। গাঁজার গন্ধে এলাকা গুমোট হয়ে আছে। তার মধ্য দিয়ে চলছেন পথচারীরা। তারা অসহায়। এরপরই সোনাপুর ষ্টেশন।

—————————————————————————————————————–

অভিযোগ রয়েছে, অসাধু পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত মাসোহারা নেন এখান থেকেও। রেলওয়ে পুলিশের এক সদস্য বলেন, রেললাইনকেন্দ্রিক মাদকের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে নজরদারি রাখা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের প্ল্যাটফর্ম তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।এ ছাড়া নোয়াখালীতে প্রবেশ ও বাহিরের সময় প্রতিটি ট্রেনে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মাদকের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি।

—————————————————————————————————————–

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নোয়াখালীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। এতে মাদক বিক্রেতারা গ্রেপ্তারও হয়। কিন্তু প্রভাবশালীদের তদবিরে তারা ছাড়া পেয়ে আবার পুনরায় মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাদক নির্মূল করা যাবে-সবার সচেতনতা প্রয়োজন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!