মহানবী (সা.) কাকে সমাজের নিকৃষ্ট মানুষ বলেছেন ?

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৫ পাঠক

মুফতি সাইফুল ইসলাম।। ২৪ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।। 

যে ব্যক্তি তার আচরণের কারণে সমাজে ভীতি ও ঘৃণার প্রতীক হয়ে ওঠে। ইসলাম এমন মানুষকে সমাজের জন্য অভিশাপ বলে অভিহিত করেছে-

عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَجُلاً، اسْتَأْذَنَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا رَآهُ قَالَ ‏”‏ بِئْسَ أَخُو الْعَشِيرَةِ، وَبِئْسَ ابْنُ الْعَشِيرَةِ ‏”‏‏.‏ فَلَمَّا جَلَسَ تَطَلَّقَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطَ إِلَيْهِ، فَلَمَّا انْطَلَقَ الرَّجُلُ قَالَتْ لَهُ عَائِشَةُ يَا رَسُولَ اللَّهِ حِينَ رَأَيْتَ الرَّجُلَ قُلْتَ لَهُ كَذَا وَكَذَا، ثُمَّ تَطَلَّقْتَ فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطْتَ إِلَيْهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ يَا عَائِشَةُ مَتَى عَهِدْتِنِي فَحَّاشًا، إِنَّ شَرَّ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ شَرِّهِ ‏”‏‏.‏

অনুবাদ : আয়িশাহ (রা.) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি লোকটিকে দেখে বললেন : সে সমাজের নিকৃষ্ট লোক এবং সমাজের দুষ্ট সন্তান। এরপর সে যখন এসে বসল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসিমুখে তার সাথে মেলামেশা করলেন।
লোকটি চলে গেলে ’ আয়িশাহ (রা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন ` হে আল্লাহর রাসুল ! যখন আপনি লোকটিকে দেখলেন তখন তার ব্যাপারে এমন বললেন, পরে তার সাথে আপনি আনন্দচিত্তে সাক্ষাৎ করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ` হে ’ আয়িশাহ ! তুমি কখন আমাকে অশালীন (আচরণ করতে) দেখেছ ? কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার দুষ্টামির কারণে মানুষ তাকে ত্যাগ করে।

হাদিসের মর্মার্থ ও ব্যাখ্যা

১. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা ও আচরণে বৈপরীত্য ছিল না। যদিও আয়িশাহ (রা.) আশ্চর্য হয়েছিলেন এ জন্য যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে ওই ব্যক্তিকে দেখে বললেন, “ সে সমাজের নিকৃষ্ট লোক ” কিন্তু পরে তার সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করলেন।

এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আচরণটি ছিল তার স্বভাবজাত ভদ্রতা ও কপটতামুক্ত স্বভাবের আর ইসলামী শিষ্টাচারের কারণে। কেননা ইসলামে অশোভন, রূঢ় বা কটু ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তাই শত্রু বা খারাপ চরিত্রের মানুষের সাথেও মৌখিক শিষ্টাচার রক্ষা করা যায়, এ শিক্ষাই এখানে তিনি দিয়েছেন। সেই সাথে ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি প্রয়োজনে প্রকাশ করা যায় এটাও শিক্ষা দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন : وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا

“ তোমরা মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো। ” (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত :৮৩)

২. কেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিকৃষ্ট বললেন ?

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী ছিল তথ্যভিত্তিক বাস্তব মূল্যায়ন। ওই ব্যক্তি ছিল সমাজে ফেতনা-সৃষ্টিকারী, দুষ্ট স্বভাবের, যার খারাপ কর্ম সমাজে পরিচিত ছিল। ইমাম নববী (রহ.) ব্যাখ্যা করেছেন: “ কোনো ব্যক্তির সম্পর্কে তার দোষ প্রকাশ করা গীবত নয়, যদি তা মানুষকে তার ক্ষতি থেকে সতর্ক করার জন্য হয়। ” (শারহু মুসলিম, ১৬/১৪৫) অর্থাৎ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বভাবের দুষ্ট দিকটি আয়িশাহ (রা.)-কে জানিয়ে দিলেন সতর্কতার জন্য।

৩. হাসিমুখে ব্যবহার কেন ?

মানুষের সাথে মেলামেশার ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো রূঢ় হননি। এমনকি কোরআনের নির্দেশনাও এমন : فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ

“ এটা আল্লাহর রহমত যে তুমি তাদের প্রতি কোমল। তুমি যদি রূঢ় ও কঠিন হৃদয়ের হতে, তবে তারা তোমার চারপাশ থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যেত। ” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯) এ থেকে বোঝা যায়— ইসলামে খারাপ মানুষের সাথেও মৌখিক নম্রতা বজায় রাখা যায়, তবে ভেতরে সতর্ক থাকা জরুরি।

৪. সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি কারা ?

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হবে সেই ব্যক্তি, যার দুষ্টামির কারণে মানুষ তাকে পরিত্যাগ করে। ” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০৫৪/ ৬০৩২) অর্থাৎ এমন লোক, যার জুলুম, কটুভাষা, গালাগালি, অশান্তি-সৃষ্টির কারণে মানুষ তার থেকে দূরে থাকে। সে সমাজে ভীতি ও ঘৃণার প্রতীক হয়ে ওঠে। ইসলাম এমন মানুষকে সমাজের জন্য অভিশাপ বলে অভিহিত করেছে।

৫. শিক্ষণীয় বিষয়

* মানুষের সাথে ব্যবহার সবসময় নরম ও শালীন হওয়া উচিত, যদিও সে খারাপ স্বভাবের লোক হয়। * খারাপ মানুষের দোষ প্রকাশ করা বৈধ, যদি তা সতর্ক করার উদ্দেশ্যে হয়। * সমাজে যারা অন্যদের ক্ষতি করে, তাদেরকে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট গণ্য করা হবে। * ইসলামের দাওয়াহের স্বার্থে কখনো কখনো খারাপ মানুষের সাথেও ভদ্র ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু মনে মনে ও বাস্তবে তাদের থেকে সাবধান থাকা জরুরি।

এ আলোচনা শেষে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে দ্বিমুখী আচরণ করেননি ; বরং সমাজে খারাপ মানুষের অবস্থান স্পষ্ট করলেন এবং একইসাথে শিষ্টাচারের মানদণ্ডও দেখালেন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!